বিশ্বব্যাপী Covid-19 সংক্রমণের সমস্যার পাশাপাশি ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে ঘরমুখী ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের নিয়ে গভীর সংকট দানা বেঁধেছে। তার মোকাবিলায় কেন্দ্রের পাশাপাশি গলদঘর্ম রাজ্য প্রশাসন।
করোনা সংক্রমণের জেরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী দেশজুড়ে লকডাউন ঘোষণা করার ফলে রাতারাতি কাজ হারিয়ে বে-রোজগেরে হয়ে পড়েছেন ভিনরাজ্যে কর্মরত কোটি কোটি শ্রমিক। বাধ্য হয়ে গ্রামে ফেরার চেষ্টা করলেও বাধ সাধছে পরিবহণ পরিষেবার অপ্রতুলতা। গ্রামে ফিরতে তাই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কাতারে কাতারে শ্রমিক সপরিবারে পথে নেমেছেন।
উত্তর প্রদেশ সড়ক পরিবহণ নিগমের মতো গুটিকয় রাজ্য সরকারাধীন সংস্থা নিজরাজ্যের শ্রমিকদেৎ ফেরাতে উদ্যোগী হলেও আতান্তরে পড়ছেন বেশিরভাগ ভিটেছাড়া শ্রমিক। সামাজিক দূরত্বের বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে যাঁরা বাস অথবা ট্রাকে চেপে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন, তাঁদের হাত ধরে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা আরও বেড়েছে বলে শঙ্কিত প্রশাসন।
দীর্ঘ পথ পরিক্রমারত ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে তাদের চলাচল রুখতে রাজ্য সরকারগুলির উদ্দেশে নির্দেশ জারি করেছে কেন্দ্র। কিন্তু সেই নির্দেশ পালন করতে গিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের সঙ্গে সংঘর্ষ বাধছে স্থানীয় পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীদের। রবিবার কেরালায় ১৪৪ ধারা লঙ্ঘন করার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ২০০ জন শ্রমিক। সোমবার গুজরাতের সুরাত শহরে পুলিশকে ঢিল ছোড়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন ৯৩ জন শ্রমিক।
যে সমস্ত শ্রমিক কোনও রকমে নিজের রাজ্যে ফিরছেন, তাঁদেরও বাধ্যতামূলক ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে গ্রামের বাইরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি সেই সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে কার্যকর করতে শুরু করেছে হবলে জানা গিয়েছে।
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যে পিরে আসা শ্রমিকদের সরকারি কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে রাখার বিষয়ে এবং ভিনরাজ্যের শ্রমিকদের আশ্রয় ও খাদ্যের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলাস্তরে কড়া নির্দেশ দিয়েছেন। একই ভাবে ভিনরাজ্যে কর্মরত শ্রমিকরা ফিরলে তাঁদের ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন আবশ্যিক করেছে বিহার, উত্তর প্রদেশ ও ওডিশা সরকার।
তেলেঙ্গানায় ভিনরাজ্যে থেকে ফেরা শ্রমিকদের নামপল্লির একজিবিশন মাঠে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে এবং তাঁদের স্বাস্থ্যের উপরে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। পাশের অন্ধ্র প্রদেশে বিয়েবাড়ি ও বেসরকারি হোটেল অধিগ্রহণ করে বহিরাগতদের জন্য কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্র খোলা হয়েছে। কেরালায় স্টেডিয়াম ও গেস্টহাউসগুলিকে এই কাজে লাগানো হচ্ছে। গোয়া ও মহারাষ্ট্রেও বহিরাগত শ্রমিকদের স্টেডিয়ামে কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা হয়েছে।
রাজ্য সরকারগুলির হিসেব অনুযায়ী, এই মুহূর্তে রাস্তায় চলমান এবং বিভিন্ন কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে আশ্রয় নেওয়া পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ছবিতে বহু শ্রমিককে ঘরে ফেরার জন্য অমানুষিক পরিস্থিতিতে সফর করতে দেখা গিয়েছে। সম্প্রতি শুধু বিহারের নওয়াদা জেলাতেই ২৫টি ট্রাক আটক করা হয়েছে, যাতে গাদাগাদি করে সফর করছিলেন ঘরমুখী শ্রমিকরা। আটক শ্রমিকদের পাঠানো হয়েছে সরকার পরিচালিত কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে।
ঘরমুখী শ্রমিকের ঢল থামাতে কেন্দ্রীয় নির্দেশে সব রাজ্যের সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে উত্তর প্রদেশের বরেলিতে রাজ্য সরকারের নির্দেশে ঘরে ফেরা শ্রমিকদের উপরে ক্লোরিন স্প্রে করে জীবাণুমুক্ত করার চেষ্টার জেরে প্রশাসনের সমালোচনায় উত্তাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া।
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে আবার রাজনীতিও শুরু হয়ে গিয়েছে পুরোদমে। পশ্চিমবঙ্গে সরকারি গাফিলতির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে শ্রমিকদের ত্রাণ সাহায্য করেছে বিরোধী বিজেপি। সেই অভিযোগ নস্যাৎ করে দিয়ে রাজ্য প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, ভিনরাজ্য থেকে ঘরেফেরা শ্রমিকদের সরকারি কোয়ারেন্টাইন কেন্দ্রে ১৪ দিন থাকার বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছে সরকার। তাঁদের নিয়মিত খাদ্য, পানীয় জল, শৌচাগার ও চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে বলে দাবি তৃণমূল প্রশাসনের।