এর আগে মনুস্মৃতি উদ্ধৃত করে মন্তব্য করেছিলেন, 'আগে ১৭ বছরেই মেয়েরা মা হয়ে যেতেন'। আর এবার তিনি গীতা উদ্ধৃত করে বললেন, 'স্থিতপ্রজ্ঞা হওয়া উচিত'। তিনি গুজরাট হাই কোর্টের বিচারপতি সমীর দাভে। এর আগে ধর্ষিতা নাবালিকার গর্ভপাতের মামলায় বিতর্কিত মন্তব্য করে চর্চিত হয়েছিলেন বিচারপতি দাভে। নির্যাতিতার আইনজীবীকে তিনি মনুস্মৃতির পাঠ পড়িয়েছিলেন। আর এবার সেই বিচারপতির গলাতেই গীতার বাণী। বললেন, 'বিচারপতিদের স্থিতপ্রজ্ঞা হওয়া উচিত'। অর্থাৎ, প্রশংসা এবং সমালোনচা, দু'টোই অগ্রাহ্য করা উচিত বিচারপতিদের। শুধু তাই নয়। এই মামলাতে এবার 'আপসের' পরামর্শ দিলেন বিচাপরপতি দাভে।
উল্লেখ্য, সম্প্রতি এক মামলায় বিচারপতি দাভে মৌখিক পর্যবেক্ষণে বলেছিলেন, 'আগেকার দিনে মেয়েদের ১৪-১৫ বছর বয়সেই বিয়ে হয়ে যেত। এবং তারা ১৭ বছর বয়সেই সন্তান প্রসব করত।' এক নাবালিকা ধর্ষিতার বাবার করা মামলার প্রেক্ষিতে এহেন পর্যবেক্ষণ করেছিলেন বিচারপতি দাভে। এই মামলায় নির্যাতিতার বাবার আবেদন ছিল, তার সাত মাস অন্তঃসত্ত্বা মেয়েকে যেন গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়। সেই সময়ই মনুস্মৃতি উদ্ধৃত করে সেই বিচারপতি বলেছিলেন যে আগে মেয়েরা ১৭ বছর বয়সেই মা হয়ে যেত। বিচারপতির এহেন মৌখিক পর্যবেক্ষণ ঘিরে জোর বিতর্ক হয়েছিল।
গত ৭ জুন গর্ভপাত সংক্রান্ত সেই মামলার শুনানি চলাকালীন বিচারপতি বলেছিলেন, 'আমরা এক ২১ শতকে থাকি বলে... গিয়ে নিজের মা বা দিদাকে প্রশ্ন করো। তারাই তোমাকে বলে দবে যে আগে ১৪-১৫ বছর বয়সেই মেয়েদের বিয়ে হত। সেটাই স্বাভাবিক ছিল। ১৭ বছর বয়সে তারা সন্তানের মা হয়ে যেত। মেয়েরা ছেলেদের অনেক আগেই পরিপক্ক হয়ে যায়। মনুস্মৃতিতেও এর উল্লেখ রয়েছে। আমি জানি হয়ত তুমি মনুস্মৃতি পড়োনি। তবে এই ক্ষেত্রে তোমার একবার মনুস্মৃতি পড়ে দেখা উচিত।' আর এবার সেই বিচারপতি এই মামলায় 'আপসের' পরামর্শ দিলেন নির্যাতিতাকে।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার সেই মামলার শুনানি হয়। সেখানে সরকার পক্ষের আইনজীবী বিতারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, 'গত শুনানিতে আপনার করা কিছু মৌখিক পর্যবেক্ষণর ভুল ব্যাখ্যা হয়েছে।' সেই সময় বিচারপতির গলায় গীতার বাণী শোনা যায়। তিনি বলেন, 'আমি বলতে চাই যে বিচারপতিদের স্থিতপ্রজ্ঞা হওয়া উচিত। গীতার দ্বিতীয় অধ্যায়ে এর উল্লেখ রয়েছে। এর অর্থ, প্রশংসা হোক কি সমালোচনা, তা অগ্রাহ্য করা উচিত। আমার বিশ্বাস, একজন বিচারপতিরও স্থিতপ্রজ্ঞা হওয়া উচিত।'
এদিকে বিচারপতি সেই নির্যাতিতাকে 'আপস করার' পরামর্শ দিলেন। তিনি নির্যাতিতার আইনজীবীকে বলেন, 'ধর্ষিতা এবং ধর্ষণে অভিযুক্তের মধ্যে কোনও আপস করা সম্ভব কি না, তা একবার দেখুন। আমার মনে হয় এতে তিনজনের জীবন রক্ষা পাবে।' এদিকে বিচারপতিকে জানানো হয়, ধর্ষণকারী বর্তমানে জেলবন্দি আছে। এর জবাবে বিচারপতি জানান, তিনি আসামীর সঙ্গে কথা বলে আপসের বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন।