সাফাই দিয়েও মিলল না রেহাই। ট্রাক চালকের উদ্দেশ্যে ‘কেয়া অওকত হ্যা তুমারি' মন্তব্যের জেরে শাস্তির মুখে পড়লেন মধ্যপ্রদেশের শাজাপুরের জেলাশাসক তথা আইএএস অফিসার কিশোর কন্যাল। সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর সেই মন্তব্যের ভিডিয়ো ভাইরাল হওয়ার পরে রাজ্য সরকারের তরফে কঠোর পদক্ষেপ করা হয়েছে। 'হিন্দুস্তান টাইমস' গ্রুপের 'লাইভ হিন্দুস্তান'-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, কিশোরকে শাজাপুরের জেলাশাসক পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশের নয়া মুখ্যমন্ত্রী মোহন যাদব। কড়া ভাষায় তিনি বলেছেন, ‘আমি নিজে একজন শ্রমিক পরিবারের সন্তান। এরকম ভাষা প্রয়োগ করা একেবারেই কাম্য নয়।’
ঠিক কী বলেছিলেন কিশোর?
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার 'হিট অ্যান্ড রান' সংক্রান্ত যে নয়া আইন এনেছে, তা নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ধর্মঘটের ডাক দেয় ট্রাক চালকদের সংগঠন। মধ্যপ্রদেশেও সেই ধর্মঘটের ব্যাপক প্রভাব পড়ে। সেই জট কাটাতে মঙ্গলবার ট্রাক চালকদের সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শাজাপুরের জেলাশাসক কিশোর এবং জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা। 'লাইভ হিন্দুস্তান'-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, ধর্মঘটের সময় যাতে ট্রাক চালকরা নিজেদের হাতে আইন তুলে না নেন, সেই আর্জি জানান তাঁরা।
কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই উত্তাপ ছড়ায় সেই বৈঠকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল ভিডিয়োয় শাজাপুরের জেলাশাসক কিশোরকে মেজাজ হারিয়ে ফেলতে দেখা গিয়েছে। একাধিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এক ট্রাক চালক (তাঁকে ভিডিয়োয় দেখা যায়নি) বলছেন যে ‘ভালোভাবে বলুন। আর আঙুল তুলে আইএএস অফিসার বলতে থাকেন, 'কী বলছ, সেটা মাথায় রাখ। কেয়া করোগে তুম? কেয়া অওকাত হ্যা তুমারি (তুমি কী করবে? তোমার কী যোগ্যতা আছে?)?’
সেই মন্তব্যের পালটা দেন ওই চালক (যে ব্যক্তিকে ভাইরাল ভিডিয়োয় দেখা যায়নি)। তিনি বলেন, ‘এটাই তো আমাদের লড়াই - আমাদের কোনও যোগ্যতা নেই।’ 'লাইভ হিন্দুস্তান'-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, তাঁর সেই মন্তব্যের পরে বৈঠকে একেবারে নিস্তব্ধতা তৈরি হয়। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেই ভিডিয়ো নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয়। আক্রমণ শানান কংগ্রেস সাংসদ তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুর। ওই ভিডিয়ো শেয়ার করে তিনি বলেন, 'প্রতিটি কথায় আপনি বলেন যে তুই কে? কিন্তু এবার আপনি বলুন যে এটা কী ধরনের কথাবার্তা?'
বিতর্কের মধ্যেই নিজের মন্তব্যের সাফাই দেন আইএএস অফিসার। তাঁর দফতরের তরফে বলা হয় যে 'চালক ও চালকদের সংগঠনের সঙ্গে বৈঠকে এক ব্যক্তি বারবার বলতে থাকেন যে ৩ জানুয়ারির পরে যে কোনও স্তরে যাওয়া হবে। তাঁকে শান্ত করার জন্য রূঢ়ভাবে কোনও মন্তব্য করেন। কিন্তু কারও ভাবাবেগে আঘাত করার জন্য সেই মন্তব্য করেননি তিনি।'
সেই সাফাই-বার্তায় অবশ্য কোনও কাজ হয়নি। শাজাপুরের জেলাশাসকের পদ থেকে ওই আইএএস অফিসারকে সরিয়ে দিয়েছে রাজ্য সরকার। 'লাইভ হিন্দুস্তান'-র প্রতিবেদন অনুযায়ী, মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে ''মানবিকতার খাতিরে আমাদের সরকার এরকম মন্তব্য বরদাস্ত করে না। আমি নিজেও শ্রমিক পরিবারের এক সন্তান। এরকম ভাষা ব্যবহার করা একেবারেই উচিত নয়। শব্দ প্রয়োগের ক্ষেত্রে আধিকারিকদের সতর্ক থাকতে হবে।'
আরও পড়ুন: IAS Officer: প্রশাসনিক ব্যস্ততার ফাঁকেই বিষ্ণপুর মেলায় গান গেয়ে মুগ্ধ করলেন মহকুমা শাসক নেহা