চলে গেলেন জাপানের নোবেলজয়ী পদার্থবিদ ইসামু আকাসাকি। বৃহস্পতিবার জাপানের নাগোয়ার একটি হাসপাতালে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। তিনি নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রে খবর।
নীল লাইট-এমিটিং ডায়োড (LED) আবিষ্কারের মূলে ছিল এই জাপানি বিজ্ঞানীর নাম। তাঁর এই আবিষ্কারের ফলেই পরবর্তীকালে LED আলো তৈরী করা সম্ভব হয়। আজ সবার পরিচিত, সহজলভ্য এলইডি বাল্বের পিছনে রয়েছে ইসামু আকাসাকির বছরের পর বছরের কঠোর পরিশ্রম ও গবেষণা। বিশ্বকে আরও সহজে, আরও সস্তায় আলোকিত করার পেছনে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
১৯২৯ সালে দক্ষিণ জাপানের চিরানে জন্মগ্রহণ করেন ইসামু। কায়োটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫২ সালে স্নাতক হন। এরপর প্রায় ৭ বছর একটি প্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করেন। কিন্তু বিজ্ঞান, গবেষণা ও শিক্ষকতা তাঁকে বরাবরই টানত। তাই সেই চাকরি ছেড়ে ১৯৫৯ সালে নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা শুরু করেন। সঙ্গে শুরু হয় পদার্থবিদ্যার গবেষণা। ১৯৬৪ সালে ডক্টরেট লাভ করেন।
নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর সঙ্গে গবেষণায় সহকারী হিসাবে যোগ দেন তাঁরই ছাত্র হিরোশী আমানো। ১৯৬০-এর দশকের শেষ থেকে তাঁদের গবেষণার মূল বিষয় ছিল সেমিকন্ডাকটর গ্যালিয়াম নাইট্রাইডের উচ্চমানের ক্রিস্টাল তৈরী করা।
১৯৫০ ও ১৯৬০ সালেই লাল ও সবুজ লাইট এমিটিং ডায়োড আবিষ্কৃত হয়েছিল। কিন্তু তখনও নীল লাইট এমিটিং ডায়োড তৈরী করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু লাল-সবুজ-নীলের কম্বিনেশনেই তো সাদা দিনের আলো তৈরী করা সম্ভব। এই নীল LED-র খোঁজেই তখন তাবড় বিজ্ঞানীরা।
১৯৮০-এর দশকের শেষের দিকে নীল LED তৈরীতে সক্ষম হন ইসামু, হিরোশী ও সুজি নাকামুরা। তাঁদের এই সাফল্য সাদা আলোর LED লাইট তৈরীর দরজা খুলে দেয়।
ধীরে ধীরে বিশ্বজুড়ে সহজলভ্য হয়ে যায় এলইডি আলো। ফিলামেন্টের বাল্ব বা ফ্লুরোসেন্ট আলোর থেকে অনেক কম বিদ্যুত্ খরচ হয় LED আলোয়। ফলে বেশ সাশ্রয়ী। তাছাড়া আলোর পরিমাণও অনেক বেশি। সহজে নষ্টও হয় না। অনেক বেশিদিন আয়ু।
বিশ্বের আলোকচিত্র বদলে দেওয়ার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১৪ সালে ইসামু আকাসাকি, হিরোশী আমানো ও সুজি নাকামুরা নোবেল পুরষ্কার লাভ করেন।
প্রযুক্তি সংক্রান্ত লেখক বব জনস্টোনের কথায়, 'গোটা বিশ্ব যখন নীল LED তৈরী অসম্ভব ধরেই নিয়েছে, সেই সময়েও বছরের পর বছর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন ইসামু। তাঁর হার না মানা মনোভাব আজ আরও এক আলোকিত ও সবুজ পৃথিবীর পথ দেখিয়েছে।'