ভারত-চিন সম্পর্ক ফের কেমন ভাবে জোড়া লাগতে পারে, সেই নিয়ে আটটি শর্ত বেঁধে দিয়েছেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী জয়শংকর। সেই নিয়ে এবার চিনের প্রতিক্রিয়া এল। সীমান্ত সমস্যার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে যুক্ত করা উচিত নয় বলে চিনের তরফ থেকে বলা হয়েছে।
জয়শংকর বৃহস্পতিবার বলেন যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সংবেদনশীলতা ও স্বার্থের বিষয়গুলি কোনও ভাবেই লঘু করা যায় না। চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র শাও লিজিয়ান বলেন যে চিন জয়শংকরের কথাগুলিকে গুরুত্বের সঙ্গে বিচার করছে। জয়শংকর যে ভারত-চিন সম্পর্কের গুরুত্বের কথা বলেছেন সেটা চিনও একমত বলে তিনি জানান। তবে সীমান্ত সমস্যার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয় বলে তিনি মনে করেন মুখপাত্র বলেন যে তারা আশা করেন যে ভারত ও চিন একই দিকে অগ্রসর হবে বিভেদ যা আছে সেটাকে কমানোর ক্ষেত্রে ও বেলাইন হয়ে যাওয়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে ফের নতুন করে শুরু করার ক্ষেত্রে।
গালওয়ানের ঘটনা যে দুই দেশের সম্পর্কে বড় চিড় ধরিয়েছে, সেই কথা জানিয়ে জয়শংকার বলেন যে মিউচুয়াল পারস্পরিক শ্রদ্ধা, পারস্পরিক সংবেদনশীলতার বিষয় সম্বন্ধে সম্যক ওয়াকিবহাল হওয়া ও পারস্পরিক স্বার্থ ঠিক করে দেবে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সমীকরণ। একই সঙ্গে আটটি মূল শর্তের ওপর এই সম্পর্কের ভিত দাঁড়িয়ে আছে বলে তিনি জানান। এগুলি মান্য না করলে ও সীমান্তে পরিস্থিতি না শুধরোলে যে ভারত-চিন সম্পর্ক জোড়া লাগতে পারে না, সেটা স্পষ্ট করে দেন তিনি।
জয়শংকরের বলা আটটি শর্ত হল-
১. যে যে চুক্তি আছে সবকিছু মানতে হবে।
২. বর্তমানে যে এলএসি আছে, সেটাকে সম্মান করতে হবে। কোনও ভাবেই স্ট্যাটাস কো বদলানোর চেষ্টা করা যাবে না, সেটা মানা হবে না।
৩. সীমান্তে অশান্তি হলে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে তার প্রভাব পড়বেই।
৪. বহুমেরু বিশ্বের জন্য প্রথমে বহুমেরু এশিয়া যে দরকার, সেটা বুঝতে হবে।
৫. প্রত্যেক দেশ নিজের স্বার্থ দেখতে চাইবে কিন্তু অন্য দেশের প্রতি সংবেদনশীলতা একতরফা হতে পারে না।
৬. উদীয়মান শক্তিদের নিজস্ব আকাঙ্খা থাকবে ও তারা সেই পথে এগোবেই।
৭. পথে চলতে চলতে কিছু বিভেদ আসবে কিন্তু কীভাবে সেটা সামলানো যায় সেটা দেখতে হবে।
৮. ভারত ও চিনের মতো দেশদের সবসময় একটু দূরদৃষ্টি দিয়ে পরিস্থিতি বিচার করা দরকার।
সীমান্ত সমস্যা ছাড়াও শেষ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন ইস্যুতে যে ভারত-চিনের সম্পর্কে চিড় ধরেছে, সেই কথা বলেন জয়শংকর। এর মধ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জে ভারতকে স্থায়ী সদস্য হতে না দেওয়া থেকে চিনের বাজারে ভারতের মাল না বেচতে দেওয়া, বিভিন্ন ফ্যাক্টরের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
কীভাবে ১৯৬২-র পর ধাপে ধাপে দুই দেশের সম্পর্ক মেরামত হয়েছিল সেই কথাও বলেন তিনি। ধীরে ধীরে চিন হয়ে ওঠে ভারতের অন্যতম বাণিজ্য পার্টনার। সীমান্ত সমস্যাও কিছু বোঝাপড়ার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে ছিল। কিন্তু সম্পর্ক উন্নতির পূর্বশর্ত ছিল যে প্রকৃত সীমান্ত রেখা বরাবর শান্তি বজায় থাকবে। কিন্তু তাও ধাপে ধাপে ক্রমশ চিন সীমান্তে নিজেদের পরিকাঠামো উন্নতি করেছে। ভারতও ২০১৪-র পর চেষ্টা করেছে কিন্তু বেশ কিছুটা পরিকাঠামোগত ফারাক থেকে গিয়েছে ও সেটার ফলে কি হতে পারে, গত বছর তার প্রমাণ মিলেছে বলে জানান জয়শংকর। গত দশ মাস ধরে চিন-ভারত পূর্ব লাদাখে ঘাঁটি গেড়ে আছে। এর মধ্যেই ঘটেছে গালওয়ানে সংঘর্ষ। প্রবল শীতেও দুই দেশের সম্পর্কের মধ্যে জমা বরফ গলবে, তার ইঙ্গিত মিলছে না।