'যেখান থেকে গিয়েছিলাম, সেখানে ফিরে এসেছি। আর কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।' গতকাল রেকর্ড নবম বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করে এই মন্তব্যই করেছিলেন নীতীশ কুমার। তবে ২০২১ সালে তিনি যখন বিজেপি ছেড়ে গিয়েছিলেন, তখন কেন এই পদক্ষেপ তিনি করেছিলেন? বিভিন্ন ক্ষেত্রে কানাঘুষো শোনা যায়, তৎকালীন স্পিকার বিজয় কুমার সিনহার সঙ্গে নীতীশের সম্পর্ক ভালো ছিল না। একাধিকবার বিধানসভাতেই দু'জনের বচসা হয়েছিল। এই আবহে নীতীশ মনে করেছিলেন, বিজেপির সাথে থাকলে তাঁর গতি টলমল। এই আবহে নীতীশের জোট ভাঙার অন্যতম কারণ ছিলেন এই বিজয় সিনহা। আর ২০২৪ সালে নীতীশ যখন বিজেপির কাছে ফিরল, তখন তাঁর অন্যতম ডেপুটি হলেন এই বিজয় সিনহা। (আরও পড়ুন: আজ অফিসে গিয়েই প্রতিবাদ, DA আন্দোলনকে নবান্নের দুয়ারে পৌঁছে দেওয়ার ভাবনা মঞ্চের)
আরও পড়ুন: 'রোহিঙ্গাদের মতো...', ৭ দিনে বাংলায় CAA, সুকান্তকে পাশে নিয়ে দাবি শান্তনুর
এদিকে নীতীশের অন্য ডেপুটি হয়েছেন সম্রাট চৌধুরী। এই সম্রাট বিগত দেড় বছর ধরে বিহারের বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব সামলেছেন। নীতীশকে গদিচ্যুত করার পণ নিয়ে তিনি মাথায় গেরুয়া পাগড়ি বাঁধতে শুরু করেছিলেন। এখন সেই নীতীশেরই ডেপুটি তিনি। তবে গতকাল নীতীশের ডেপুটি হয়ে শপথ নেওয়ার সময়তেও সেই গেরুয়া পাগড়ি তাঁর মাথাতে ছিলই। বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন এই সম্রাট একাধিকবার চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন নীতীশকে।
আরও পড়ুন: দুই বেঞ্চের সংঘাত, মেডিক্যালে ভরতির মামলা হাই কোর্ট থেকে সরিয়ে নিজের হাতে নিল SC
এর আগে ২০২০ সালে যখন বিজেপি তারাকিশোর প্রসাদ এবং রেণুদেবীকে ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী করেছিল, তখন নীতীশ নাকি চেয়েছিলেন, সুশীল কুমার মোদীকে। এর আগে সুশীল মোদী তিন দফায় নীতীশের ডেপুটি থেকেছিলেন। তবে নীতীশের সেই দাবি যে বিজেপি মানবে না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন শাহ-নড্ডারা। ২০২৪ সালেও নীতীশকে জোটে ফিরিয়ে 'স্বস্তি' দেওয়ার কোনও পরিকল্পনা নেই বিজেপির। আর তাই বিহারের রাজনীতিতে দুই 'নীতীশ বিরোধী' মুখকেই তাঁর ডেপুটি করল গেরুয়া শিবির।
প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৪ সালে মোদীর 'সাম্প্রদায়িক ভাবমূর্তির' দোহাই দিয়ে 'চিরশত্রু' লালুর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন নীতীশ। এরপর ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে আরজেডি ছেড়ে ফের বিজেপির হাত ধরেন নীতীশ। এরপর ২০২০ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সঙ্গে নিয়েই লড়াই করেন নীতীশ কুমার। রাজ্যে তাঁর দলের শক্তিক্ষয় হলেও নিজের গদি ঠিকই টিকিয়ে রাখেন তিনি। পরে অবশ্য ২০২১ সালে ফের একবার আরজেডির সঙ্গে জোট বাঁধেন নীতীশ। এমনকী গতবছর বিরোধীদের ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম রূপকার ছিলেন এই নীতীশ। পটনায় হয়েছিল এই বিরোধী জোটের প্রথম সভা। তখন মোদীকে চ্যালেঞ্জ করে বিরোধী মুখ হতে চেয়েছিলেন বিহারের মুখ্যমন্ত্রী। তবে সেটা হয়নি। আর এরপর থেকেই ইন্ডিয়া ব্লক এবং মহাজোটের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে মতপার্থক্য দেখা দেয় এবং তা প্রকাশ্যে চলে আসে। আরজেডির তরফ থেকে তেজস্বী যদবকে 'ভবিষ্যতের মুখ্যমন্ত্রী' হিসেবে তুলে ধরা হলে নীতীশের রক্তচাপ আরও বৃদ্ধি পায়। এই আবহে বিরোধী জোট ছেড়ে তিনি ফের একবার বিজেপি-মুখী হলেন। তবে বিজেপির সঙ্গে তাঁর এই জোট কতদিন টিকবে, তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কারণ মুখ্যমন্ত্রীর গদিতে নীতীশকে বসতে দিলেও সরকার যে বিজেপি 'চালাতে' চায়, তা এই দুই ডেপুটি বাছাই থেকেই স্পষ্ট বলে মনে করা হচ্ছে।