২০০৮ সালের মুম্বই আক্রমণের দায় হিন্দুদের ওপর চাপানোর পরিকল্পনা করেছিল লস্কর-ই-তৈবা। নিজের আত্মজীবনী 'Let Me Say It Now'-তে এই দাবি করেছেন প্রাক্তন মুম্বই কমিশনার রাকেশ মারিয়া। মারিয়ার দাবি যে লস্কর চেয়েছিল আজমল কসবের মৃত্যুর পর তাকে লোকে চিনবে বেঙ্গালুরুর সমীর চৌধুরী হিসাবে।
মারিয়া লিখেছেন যে আজমল কসবকে জেলে মারার অনেক চেষ্টা করেছিল পাকিস্তানের আইএসআই। এই জন্য দাউদ ইব্রাহিমের গ্যাংকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। মারিয়ার দাবি সন্ত্রাসবাদীরা নিজেদের প্ল্যানে সফল হলে কসব মারা গেলে সমীর চৌধুরীর নাম জানতে পারত সবাই তার নামের জায়গায়। এর ফলে এই সন্ত্রাসবাদী হানার দায় হিন্দুদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যেত। এরজন্য সন্ত্রাসবাদীদের সঙ্গে ভুয়ো ভারতীয় আইডি কার্ড দিয়ে দিয়েছিল লস্কর।
কসবের যে ছবিটা প্রকাশিত হয়েছিল, সেটা কেন্দ্রীয় এজেন্সিরা করেছিল বলে জানান মারিয়া। মুম্বই পুলিশ কসবের নিরাপত্তার কথা ভেবে কোনও তথ্য প্রকাশের পক্ষে ছিল না বলে জানান মারিয়া। একবার কসবের নাম সমীর চোধুরী হিসাবে সবাই জেনে গেলে মিডিয়া বলত যে হিন্দু সন্ত্রাসবাদীরা মুম্বই আক্রমণ করেছে, বলে মনে করেন রাকেশ মারিয়া। কিন্তু সেই পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়ায় সারা বিশ্ব জানতে পারে যে পাকিস্তানের ফরিদকোটের আজমল কসব ও তার সঙ্গীরা মুম্বইয়ে হানা দিয়েছিল। কসবকে ধরে ছিলেন যে কনস্টেবল, সেই তুকারাম ওম্বলের প্রতি নিজের শ্রদ্ধার্ঘ্য দিয়েছেন। নিজের প্রাণ দিয়ে লস্করের পরিকল্পনা ব্যর্থ করেন তুকারাম।
কসব প্রথমে চুরি-ডাকাতি করার জন্য লস্করে যোগ দিয়েছিল। কিন্তু ওখানে নানান মিখ্যা কথা বলে তাঁর মগজধোলাই করা হয়। কসবকে বলা হয় যে ভারতে মুসলমানরা নামাজ পড়তে পারে না! মুম্বইয়ে আক্রমণ করার জন্য কসবকে মোট ১.২৫ লক্ষ টাকা দিয়েছিল লস্কর, যা সে তার বোনের বিয়ের জন্য বাড়ির লোকদের দিয়ে দিয়েছিল।
২০০৮ সালের মুম্বই আক্রমণে মোট ১৬৬ জন নিরপরাধ প্রাণ হারিয়েছিলেন। সন্ত্রাসবাদীদের মধ্যে একমাত্র জীবিত ধরা পড়েছিল কসব। ২০১২ সালের ২১ নভেম্বর তার ফাঁসি হয়। কসবের হাতের লাল সুতো দেখে অনেকের মনেই সন্দেহ ছিল তাহলে কী সন্ত্রাসবাদীকে হিন্দু সাজানোর কোনও পরিকল্পনা ছিল। এবার সেই থিওরিকে সত্যি বলে জানালেন রাকেশ মারিয়া।