'টাকা, ধনসম্পদের সবচেয়ে খারাপ বিষয় কী জানেন? মৃত্যুর পর তা সঙ্গে নিয়ে যাওয়া যায় না,' বলেছিলেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। আজ থেকে প্রায় ১০ বছর আগে এক অনুষ্ঠানের মঞ্চে নিজের উপলব্ধির কথা জানিয়েছিলেন দুঁদে ব্যবসায়ী। মুম্বইতে মার্কিন দূতাবাসের এক অনুষ্ঠানে মন খুলে কথা বলেছিলেন 'বিগ বুল'।
মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। আর সেই পরিস্থিতি থেকে কীভাবে এত দূর আসা? রাকেশ জানান, ছোটোবেলায় তাঁর বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ বড়লোক বাড়ির ছেলে ছিলেন। কিন্তু তাঁদের টাকার প্রতি তাঁর কোনও ঈর্ষা হত না। তিনি বলেন, আমার বাবা আমাকে শিখিয়েছিলেন, 'সবসময়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী থাকবে। কিন্তু কখনও কাউকে হিংসা করবে না।'
অল্পবয়স থেকেই আর পাঁচজনের থেকে কিছুটা আলাদা হতে চেয়েছিলেন রাকেশ। তিনি বলেছিলেন, 'আমি এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে, আইনত আমার বিশ্বের ধনীতম পর্যন্ত হওয়ার অধিকার রয়েছে। আমাকে খালি সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার করে এগিয়ে যেতে হবে।'
আর সেটাই করেছিলেন রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা। ১৯৮০-র দশকে মাত্র ৫,০০০ টাকা নিয়ে ভারতের শেয়ার বাজারে প্রথম বিনিয়োগ করেন। আর অগস্ট ২০২২-এ প্রয়াণের পর তিনি রেখে গিয়েছেন প্রায় ৪৬ হাজার কোটি টাকার মোট সম্পদ।
যাঁরা জীবনে ধনী হতে চান, তাঁদের কী বলবেন?
রাকেশ : ধনী কাউকে দেখলে কখনও ঈর্ষা করবেন না। বরং তাঁদের মতো হওয়ার চেষ্টা করবেন। ক্রমাগত সেটা করে যেতে হবে। হিংসা খুব খারাপ অভ্যাস। এর থেকে বিরক্তি ও দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়।
রাকেশ ঝুনঝুনওয়ালা জানান, শেয়ার বাজারে সাফল্যের পরেও তিনি বাবার সঙ্গে, পৈতৃক বাড়িতেই থাকতেন। মধ্যবিত্ত জীবনের মানসিকতা, মূল্যবোধ কোনওদিনই ছাড়েননি তাঁরা। আসলে, সামাজিক রীতি হল, ছেলে বাবার বাড়িতে থাকবে, বাবা ছেলের বাড়িতে নয়। সেই মতো বাবার জীবদ্দশায় তাঁর সঙ্গেই থেকেছেন বিশ্বের অন্যতম সফল বিনিয়োগকারী।
'আমার বাবার কখনও আমার কত টাকা, কত শেয়ার এসব জানতে চাননি,' বলেন রাকেশ। 'বরং, আমি কত টাকা দান করলাম, কাউকে সাহায্য করতে পারলাম কিনা, সেই নিয়েই আমাদের কথা হত,' বলেন তিনি।
রাকেশ জানান, তাঁর নাম ফোর্বসের বিলিয়নেয়ার তালিকায় আসার খবরে বাবা খুব খুশি হয়েছিলেন। একইসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, 'তোমার লজ্জা হওয়া দরকার। সামাজিক কাজে সাহায্য করার বদলে এত এত টাকা জমিয়ে রেখে দিয়েছ।'
তাঁর কাছে টাকা যে সত্যিই অতিরিক্ত, তা স্বীকার করে নেন রাকেশ। বলেন, 'লোকে যতটা ভাবে, তার থেকে আমার অনেক কম টাকা। তবে আমার যতটা প্রয়োজন, তার থেকে টাকা অনেক বেশি।'
নিজের স্বাস্থ্য নিয়েও খুব বেশি আশাবাদী ছিলেন না রাকেশ। ওই অনুষ্ঠানেই তিনি বলেন, '৫০ বছর বয়স আমার। রোজ ৬ পেগ হুইস্কি খাই। দিনে ২৫টি সিগারেট। ব্যায়াম করার বালাই নেই। সেই সঙ্গে প্রচুর খাই। ফলে আমার আয়ু সত্যি বলতে সীমিতই বলা চলে।'