২০২৩ সালের মার্চ মাসে মণিপুর হাই কোর্টের তরফ থেকে এর রায়ে জানানো হয়েছিল, মৈইতেই জনগোষ্ঠীদেরও তফশিলি উপজাতিভুক্ত করা হবে কি না, তা খতিয়ে দেখুক রাজ্য সরকার। সেই থেকেই মণিপুরে শুরু হয়েছিল জাতিগত হিংসা। আর সেই হিংসার আগুন আজও জ্বলছে সেই রাজ্যে। ২০২৩ সালের ২৭ মার্চের সেই নির্দেশিকা থেকে মেইতেইদের অংশটি মুছে ফেলল হাই কোর্ট। অর্থাৎ, রাজ্য সরকারকে উচ্চ আদালত মেইতেইদের নিয়ে যে নির্দেশ দিয়েছিল, তা মুছে ফেলা হল আদেশনামা থেকে। মনে করা হয়, এই নির্দেশের থেকেই মণিপুরের জাতিগত হিংসার সূত্রপাত ঘটেছিল। জানা গিয়েছে, মেইতেই ট্রাইব ইউনিয়নের করার মামলার প্রেক্ষিতে রায়ের সেই অংশ মোছার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালে এই সংগঠনের করা মামলার প্রেক্ষিতেই হাই কোর্টের তরফ থেকে মেইতেইদের তফশিলি জাতিভুক্ত করার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলা হয়েছিল রাজ্য সরকারকে।
উল্লেখ্য, গত ২০২৩ সালের ৩ মে থেকে জাতিগত হিংসার সাক্ষী মণিপুর। মাঝে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত ছিল। তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি অবস্থা। এখনও পর্যন্ত কয়েক হাজার জনকে উদ্ধার করে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চূড়াচাঁদপুর, মোরে, কাকচিং এবং কাংপোকপি জেলা থেকে অধিকাংশ মানুষকে সরানো হয়েছে। এরই মধ্যে হিংসায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। অভিযোগ উঠেছে কুকি ‘জঙ্গিরা’ অটোমেটিক রাইফেল নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই আবহে কুকি জঙ্গিদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে সেই রাজ্যে।
প্রসঙ্গত, ইম্ফল উপত্যকায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হল মেইতেই জনজাতি। তবে তারা সম্প্রতি দাবি তুলেছিল যে তাদের তফসিলি উপজাতির তকমা দিতে হবে। তাদের এই দাবির বিরোধ জানিয়েছিল স্থানীয় কুকি-জো আদিবাসীরা। এদিকে হাই মণিপুর হাই কোর্টে এই নিয়ে মামলা হয়েছিল। সেই মামলায় হাই কোর্টের তরফ থেকে রায় দিয়ে জানানো হয়, মেইতেইদের নাম তফশিলি উপজাতির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব কি না, তা খতিয়ে দেখুক রাজ্য। এই নির্দেশিকার পরই জো-কুকি সম্প্রদায়ের মানুষরা প্রতিবাদে নামেন। এই আবহে গত এপ্রিলের শেষ সপ্তাহে মণিপুরের অল ট্রাইবাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন একটি মিছিলের আয়োজন করেছিল। সেই মিছিল ঘিরেই হিংসা ছড়িয়ে পড়ে চূড়াচাঁদপুর জেলায়।
এদিকে তফশিলি উপজাতির ইস্যুর পাশাপাশি সংরক্ষিত জমি এবং সার্ভে নিয়েও উত্তাপ ছড়িয়েছিল সেই রাজ্যে। এই আবহে গত ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসেই এই চূড়াচাঁদপুর জেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের সভাস্থলে আগুন লাগিয়ে দিয়েছিল ইন্ডিজেনাস ট্রাইবাল লিডারস ফোরামের সদস্যরা। এদিকে এই জেলা থেকে কুকি আদিবাসী বনাম মেইতেইদের এই সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে অন্যান্য জেলাতেও। আর এখনও পর্যন্ত সেই হিংসা প্রাণ হারিয়েছেন কয়েকশো সাধারণ মানুষ।
এরই মাঝে গত ২০২৩ সালের জুলাই মাসেই ভাইরাল হয়েছিল মণিপুর বিভীষিকার এক অকল্পনীয় ভিডিয়ো। দেখা গিয়েছিল, দুই মহিলাকে নগ্ন করিয়ে ঘোরানো হচ্ছে রাস্তায়। পরে তাঁদের মাঠে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভিযোগ, তাঁদের গণধর্ষণ করা হয়েছিল। সেই ঘটনা ঘটেছিল গত ৪ মে। ঘটনার ৭৭ দিন পর এই মামলায় প্রথম গ্রেফতারি হয়। আর সেই একই দিনে, অর্থাৎ, ৪ মে মণিপুরের রাজধানীতে দুই যুবতীকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয় বলে অভিযোগ। সেই মামলায় প্রায় ৮০ দিন পরে গিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছিল কয়েকজন অভিযুক্তকে। এছাড়াও একাধিক জাতিগত হিংসার বিভীষিকাময় ঘটনা এই গত এক বছরে সামনে এসেছে মণিপুর থেকে। আর এই সব কিছুর সূত্রপাত ঘটেছিল মেইতেইদের তফশিলি উজাতিভুক্ত করার সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার সেই নির্দেশিকা থেকে।