দেশে কেউ ‘ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জিংয়ের’ শিকার হননি। অর্থাৎ মেথরের কাজে করতে গিয়ে কোনও শ্রমিকের মৃত্যু হয়নি। কিন্তু গত তিন দশকে নর্দমা পরিষ্কার করতে গিয়ে ৯৪১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার সংসদে এমনটাই দাবি করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। এর পরিপ্রেক্ষিতে সমাজসেবী ও বিশেষজ্ঞরা কেন্দ্রের এই প্রতিক্রিয়ার নিন্দায় সরব হয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, সরকারের মেথরের কাজ ও নর্দমায় মারা যাওয়া মানুষের মধ্যে পার্থক্য করা উচিত নয়।
শ্রমিকদের অভিযোগ যে, গোপনে জাতিভিত্তিক মোড়কে এখনও এই কাজ করানো হয়। তাঁদের আরও অভিযোগ, সরকার মেথরের কাজ ও নর্দমা পরিষ্কারের মধ্যে পার্থক্য তৈরি করে মানুষের হাতে মলমূত্র পরিষ্কার করার একটি জাতিভিত্তিক প্রথা বজায় রেখেছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন যে, এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ অনুশীলন। কারণ, এই কাজ শুধু অমানবিকই নয়, ভারতের সংবিধানের ২১ নম্বর ধারায় একজন নাগরিকের সম্মানের সঙ্গে জীবনধারণের যে অধিকার, তাও খর্ব করে।
এদিন রাজ্যসভায় বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে কেন্দ্রীয় সমাজকল্যাণ মন্ত্রী বীরেন্দ্র কুমার বলেন, ‘ মেথরের কাজের কারণে মৃত্যুর কোনও খবর নেই। তবে আমাদের কাছে নর্দমা পরিষ্কার করার সময় শ্রমিকদের মৃত্যুর রিপোর্ট আছে। তামিলনাড়ুতে এই ধরনের মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি ২১৩ জন, পরে গুজরাটে ১৫৩, উত্তর প্রদেশে ১০৪, দিল্লিতে ৯৮, কর্ণাটক ৮৪ ও হরিয়ানায় ৭৩ জন শ্রমিক নর্দমা পরিষ্কার করতে গিয়ে মারা গিয়েছেন।’ তিনি বলেন, ‘১৯৯৩ সাল থেকে মোট ৯৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে, যখন মেথরের কাজে প্রথম নিষিদ্ধ ছিল।’
মন্ত্রী বলেন, ‘ ২০১৩ ও ২০১৮ সালে দু’টি পৃথক সমীক্ষায় দেশে ৫৮,০৯৮ জন মেথরদের চিহ্নিত করা হয়েছিল। চিহ্নিত হওয়া সেই মেথরদের সাহায্য করার জন্য তাঁদর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জার্সের পুনর্বাসনের প্রকল্পের অধীনে এককালীন নগদ ৪০ হাজার টাকা সরাসরি জমা করা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি মেথরদের পাওয়া গিয়েছে।’
এদিন আরেকটি প্রশ্নের জবাবে, সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন প্রতিমন্ত্রী রামদাস আটাওয়ালে বলেন, ‘১৯৯৩ সাল থেকে ৯৪১ জনের মৃত্যুর নথিভুক্ত করা হয়েছে। গত সপ্তাহে, আটাওয়ালে উচ্চকক্ষকে বলেছিলেন যে, গত ৫ বছরে সারা দেশে মেথরদের কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, ‘প্রহিবিশন অফ এমপ্লয়মেন্ট অ্যাজ ম্যানুয়াল স্ক্যাভেঞ্জার্স অ্যান্ড দেয়ার রিহ্যাবিলিটেশন আইন ২০১৩’-এর রুল ৩-এর অধীনে মেথরদের কাজ নিষিদ্ধ করা হয়। এই আইনে স্পষ্ট উল্লেখ রয়েছে, চারটি ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি ছাড়া কোনও ব্যক্তি হাতে করে বা প্রতিরোধক পোশাক ও সুরক্ষামূলক যন্ত্রপাতি-সহও নিকাশি ব্যবস্থা পরিষ্কার করবেন না। যে চারটি ব্যতিক্রমী পরিস্থতির কথা বলা হয়েছে, সেগুলির ক্ষেত্রেও স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসারের লিখিত অনুমতি থাকতে হবে, যেখানে তিনি এই কাজের উপযুক্ত কারণ দর্শাবেন।