গালওয়ানের সেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর অনেক দিন কেটে গিয়েছে। কিন্তু ভারত-চিন সম্পর্কের মধ্যে যে শৈত্য, তা অনেকাংশেই এখনও বহাল। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই এদিন ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বৈঠক হল দুই দেশের বিদেশমন্ত্রীদের মধ্যে। সেখানে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা বরাবর যে সমস্যা রয়েছে, সেটা দ্রুত সমাধানের জন্য ফের চিনের কাছে আবেদন করলেন ভারতীয় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর। চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা বৈঠক হয়েছে বলে জানিয়েছে বিদেশমন্ত্রক।
ইন্দোনেশিয়ার বালিতে বর্তমানে জি-২০ দেশের বিদেশমন্ত্রীদের বৈঠক হচ্ছে। সেই বৈঠকের এক ফাঁকে দুজনে কথা বলেন। জয়শংকর জানান যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা যেই বিষয়গুলি নিয়ে আছে সেটা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বিশেষত সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়ে কথা হয়েছে। এছাড়াও পড়ুয়াদের সমস্যা ও বিমান চলাচল নিয়ে কথা হয়েছে। বিশ্বের অন্যত্র যা ঘটছে এবং জি২০ আলোচনার ওপর তার কী প্রভাব, সেই নিয়েও দুই বিদেশমন্ত্রী এদিন কথা বলেন।
বিদেশমন্ত্রক বিবৃতিতে জানিয়েছে যে পূর্ব লাদাখে এলএসি বরাবর যে অবস্থা, সেটার দ্রুত সমাধানের জন্য জোর দেন তিনি। প্রসঙ্গত গালওয়ান পরবর্তী সময়, পূর্ব লাদাখের কিছু সীমান্ত থেকে সেনা সরিয়েছে দুই দেশ। কিন্তু কিছু জায়গা নিয়ে বারবার আলোচনা করেও কোনও সমাধান বেরোয়নি। সীমান্তে শান্তি রক্ষার্থে এই সমস্যার দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন বলেই ওয়াং ই-কে জানান জয়শংকর। অতীতে দুই নেতার মধ্যে বৈঠকে যে বোঝাপড়া হয়েছে ও দুই দেশের মধ্যে যে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি ও নিয়ম আছে, সেগুলি সম্পূর্ণ ভাবে মেনে চলার ওপরেও জোর দেন তিনি। কূটনৈতিক ও সামরিক স্তরে নিবিড় যোগাযোগ ও নিয়মিত বৈঠকের বিষয় একমত হন উভয়।
এর আগে ২৫ মার্চ দুজনের কথা হয়েছিল দিল্লিতে। সেখানে ভারতীয় পড়ুয়াদের চিনে ফেরা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছিল। সেই প্রক্রিয়া দ্রুত শেষ করার জন্য আর্জি জানান তিনি। দুই বছর আগের গালওয়ান সংঘর্ষের পর এই নিয়ে চতুর্থবার দুই বিদেশমন্ত্রীর মধ্যে কথা হল। বর্তমানে দুই দেশের প্রায় ৫০ হাজার সৈন্য লাদাখে উপস্থিত। ভারত বলে এসেছে যে চিন যতদিন সীমান্তে শান্তি প্রতিষ্ঠা করছে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উন্নতি হবে না। চিন যদিও এই দুটিকে আলাদা করে দেখতে চায়। প্যাংগং লেক ও গোগরায় সমস্যা কিছুটা মিটলেও ডেপসাং ও হট স্প্রিং নিয়ে একমত হয়নি দুই দেশ।
অন্যদিকে চিনের তরফ থেকে এদিন বলা হয়েছে যে সীমান্তে পরিস্থিতি সুস্থির ও দুই দেশেরই ক্ষমতা ও ইচ্ছে আছে অঞ্চলে শান্তি ও সম্প্রীতি বজায় রাখার। তবে এদিনের বৈঠক নিয়ে আলাদা করে এখনই কিছু বিবৃতি দেয়নি চিন। তারা জানিয়েছে যথাসময়ে বলা হবে যা বলার। তবে জয়শংকরের বিবৃতি যে তাঁরা খুঁটিয়ে পড়েছেন সেটা বলতে ভোলেননি বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান।