যোধপুরের কাছে কাপর্দা গ্রামে গত তিন দিনে ৭০ টিরও বেশি ডেমোসেল ক্রেনের মৃত্যু হয়েছে। সম্ভবত নিউক্যাসেল নামক একটি ভাইরাসের কারণে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। কীটনাশক দেওয়া ফসলও হতে পারে মৃত্যুর কারণ। সোমবার এমনটাই জানিয়েছে বন দফতর। নিউক্যাসেল ভাইরাস পাখিদের শ্বাসযন্ত্রের ট্র্যাক প্রভাবিত করে।
বন দফতরের কর্মীরা জানান, রোগে আক্রান্ত আরও ১৫০টিরও বেশি পাথি। অসুস্থতার কারণে উড়তে পারছে না পাখিগুলি। জলাশয় ও তার আশেপাশে দেখা যাচ্ছে অসুস্থ পাখিগুলিকে। বন দফতরের কর্মীরা অসুস্থ পাখিগুলি উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
নিউক্যাসল রোগ সংক্রমণ 'রানীক্ষেত' নামেও পরিচিত। এটি এক ধরণের প্যারামাইক্সোভাইরাস ভাইরাস। বন দফতর পাখিদের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠিয়েছে। আইভিআরআই ভোপালেও নমুনা পাঠানো হয়েছে।
প্রতি বছর অক্টোবরে মঙ্গোলিয়া এবং ককেশাস অঞ্চলের জলাভূমি থেকে রওনা দেয় ডেমোসেল ক্রেন। পাড়ি দেয় প্রায় ৫ হাজার কিলোমিটার। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিম রাজস্থানের বিভিন্ন জলাশয়, বড় গাছে আশ্রয় নেয় হাজার হাজার ডেমোসেল ক্রেন। এখানে পরবর্তী প্রায় ৫ মাস শীত কাটায় পাখিগুলি। এরপর আবার ফিরে যায় তাদের আসল বাড়িতে।
নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পশ্চিম রাজস্থানের বিভিন্ন জলাশয়, বড় গাছে আশ্রয় নেয় ডেমোসেল ক্রেন। এখানে পরবর্তী প্রায় ৫ মাস কাটায় পাখিগুলি। এরপর আবার ফিরে যায় তাদের আসল বাড়িতে।
যোধপুরে পাখিদের চিকিৎসা করছেন ডাঃ শ্রাবণ সিং রাঠোর। তিনি বলেন, '৭০টিরও বেশি সারস মারা গিয়েছে। প্রায় ১৫০টি অসুস্থ। অসুস্থ ও পক্ষাঘাতগ্রস্ত হওয়ায় জল থেকেও উঠতে পারছে না তারা।'
'প্রাথমিকভাবে এটি রানীক্ষেত ওরফে নিউক্যাসল রোগ বলেই মনে হচ্ছে। তবে ভিসেরার ল্যাব রিপোর্ট পাওয়ার পরেই সঠিক কারণ জানা যাবে,' বলেন তিনি।
মৃত পাখিদের পরীক্ষা করে দেখা গিয়েছে যে ফুসফুস এবং অন্ত্র সংক্রামিত হয়েছিল। শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ হ্রাস পেয়েছিল। ফলে নিউক্যাসল রোগ বলেই মনে করা হচ্ছে।
তবে এই প্রথম নয়। ২০১৬ সালে, এই একই রোগের কারণে ৩৫টি পাখির মৃত্যু হয়েছিল।সংক্রমিত পাখির বিষ্ঠা ও ক্ষরণে এ রোগ ছড়ায়,' জানালেন ডাঃ শ্রাবণ সিং রাঠোর।
তবে তিনি সম্ভর হ্রদের মতো পরিস্থিতির সম্ভাবনাকে নাকচ করে দিয়েছেন। ২০১৯ সালের নভেম্বরে সেখানে পাখিদের একটি স্নায়বিক রোগ, 'এভিয়ান বোটুলিজমেরট কারণে প্রায় ১৮,০০০ পরিযায়ী পাখির মৃত্যু হয়েছিল। 'সম্ভরেরটি ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ ছিল। এটি একটি ভাইরাস,' তিনি বলেন।
ডাঃ শ্রাবণ সিং রাঠোর অবশ্য কীটনাশক থেকে মৃত্যুর সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি। তিনি জানাচ্ছেন, নিউক্যাসেল রোগের থেকে মৃত্যু বলে মনে করা হচ্ছে বটে। তবে অসুস্থ পাখিদের মধ্যে সেই রোগের লক্ষণ সঠিকভাবে দেখা যাচ্ছে না।
একই কথা বলছেন মাইক্রোবায়োলজিস্ট ডাঃ এ কে কাতারিয়া। তাঁর দাবি, অর্গানোফসফরাস বিষাক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে পাখিগুলির। তিনি জানান, প্রতি বছরই এভাবে বহু পরিযায়ী পাখির মৃত্যু হয়।
'অর্গানোফসফরাস বিষক্রিয়ায় সারসের মৃত্যু হচ্ছে। কৃষকরা ফসলে কীটনাশক স্প্রে করেন। পাখিরা সেটা খেলে মৃত্যু হয়,' তিনি বলেন। তিনি আরও বলেন, 'এর আগেও এই ধরনের ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছিল। ভোপালের ল্যাব এটি অর্গানোফসফরাস বিষক্রিয়া হিসাবে চিহ্নিত করেছিল।'
ডাঃ কাতারিয়া বলেন, 'নিউক্যাসল রোগ সম্ভব নয়। এর কারণ হল, কৃষকরা যেখানে যেখানে বিষাক্ত স্প্রে করেছিলেন, ঠিক সেখানেই এক এক বার একটা গ্রুপ করে পাখির মৃত্যু হচ্ছে। নিউক্যাসল রোগের ক্ষেত্রে, অল্প সময়ের মধ্যেই সব পাখি একের পর এক মারা যায়। এভাবে ব্যাচে ব্যাচে মৃত্যু হয় না।'
রাজস্থান সরকারের বন বিভাগের প্রধান ডিএন পান্ডে এ বিষয়ে বলেন, 'ভিসেরার নমুনা ভারতীয় ভেটেরিনারি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (IVRI), ভোপালে পাঠানো হয়েছে। সেই রিপোর্ট পেলেই স্পষ্ট বোঝা যাবে।'