গত ১৩ ডিসেম্বর সংসদ ভবনের অধিবেশন কক্ষে অনুপ্রবেশকারীদের ঝাঁপ দেওয়া কাণ্ডে জানা গেল নয়া তথ্য। ললিত ঝাঁ, সাগর শর্মা, মনোরঞ্জন, নীলম আজাদ, অমল শিণ্ডেরা আদতে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। এমনই দাবি তদন্তকারীদের। জেরার মুখে নাকি ললিত তাঁর আসল পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গেই শিক্ষকতা করা ললিত নাকি দিল্লি পুলিশকে জানিয়েছে, বেশ কয়েক মাস ধরে এই সংসদ হানার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল। ঘটনায় ধৃতরা নাকি অনেকবারই একে অপরের সঙ্গে দেখাও করেছিল এর আগে। তাদের পরিকল্পনা নাকি ছিল, দেশ জুড়ে অরাজকতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টি করা। এদিকে সাগর, মনোরঞ্জন, নীলম এবং অমলকে ইতিমধ্যেই ইউএপিএ-র ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে। অপরদিকে ললিত ঝাঁকে জেরার জন্য ৭ দিনের হেফাজতে পেয়েছে দিল্লি পুলিশ।
তদন্তকারীরা জানিয়েছে, লোকসভায় হলুদ রঙের ধোঁয়া ছড়িয়ে আদতে সংবাদমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছিল ললিত, সাগররা। এরপরে গিয়ে একটি রাজনৈতিক দল খোলার পরিকল্পনা ছিল তাদের। নিজেদের মতামত ব্যক্ত করার এটাই একমাত্র উপায় হিসেবে মনে করেছিল তারা। এদিকে সাগর নাকি জেরার মুখে পুলিশকে জানিয়েছে, প্রাথমিক পরিকল্পনা ছিল, সংসদের বাইরে তারা নিজের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেবে। পরে অবশ্য সেই পরিকল্পনা থেকে তারা সরে আসে। সাগর শর্মা নাকি পুলিশকে বলে, 'আমাদের রাজনৈতিক মতামত বর্তমানের কোনও দলের সঙ্গেই মেলে না। এই কারণেই আলাদা রাজনৈতিক দল চালুর পরিকল্পনা করেছিলাম আমরা। তাই আলাদা রাজনৈতিক দলের জন্য মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ জরুরি ছিল।'
এদিকে তদন্তকারীরা দাবি করেছে, এই গোটা ঘটনার নেপথ্যে মাস্টারমাইন্ড হল ললিত ঝাঁ। এই আবহে ললিতের সঙ্গে বিদেশি কোনও সংসগঠন বা সরকারের যোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে তাকে দেরা করা হবে। এমনকী বাকি ধৃতদের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়েও ললিতকে জেরা করার পরিকল্পনা রয়েছে পুলিশের। এছাড়া দিল্লিতে ৪-৫ দিন তারা যে হোটেলে ছিল, সেখানে ললিতকে নিয়ে যাওয়া হবে। এছাড়া ধৃতদের ফোনের হদিস পেতেও ললিতকে জিজ্ঞাসাবাদ চালানো হবে। যদিও ললিত জানিয়েছে, ধৃতদের সবারই ফোন সে নষ্ট করে দিয়েছে। এদিকে এই হামলার জন্যে তারা কোথা থেকে অর্থ পেয়েছিল, তাও জানতে চাওয়া হবে ললিতের কাছে। এছাড়া সংসদে এই 'হামলার' পুনরাবৃত্তি ঘটানোর জন্যে অনুমতি চাইবে তদন্তকারীরা।
এদিকে জুতোর মধ্যে কীভাবে সেই স্মোক ক্যানিস্টার নিয়ে সংসদে ঢুকেছিল সাগর? জানা গিয়েছে, লখনউয়ের এক মুচি জুতোর শুকতলায় আড়াই ইঞ্চি গভীর একটি গর্ত করে দিয়েছিল। এছাড়া জুতোর সোলে আলগা রবার লাগিয়ে তা আরও মোটা করা হয়েছি। সেই জুতো পরেই সাগর ঢুকেছিল সংসদ ভবনে। সেই আড়াই ইঞ্চি গর্তেই স্মোক ক্যানিস্টার নিয়ে ঢোকে সে। নিরাপত্তারক্ষীরা তা ধরতে পারেনি।