তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা শরনার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে অসম। নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্য়ে এসেছিলেন তাঁদের জন্য় এই ব্যবস্থা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে ওই নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্য়ে যারা এসেছিলেন তাদের কেন নাগরিকত্ব দেওয়া হল না? প্রশ্ন তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট। বলা ভালো বাংলা ও অসমের এই বিরাট ফারাকটা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, এমন কোনও তথ্য আছে যে পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশের সংখ্য়া নগন্য বলে আমরা কেবল অসম নিয়ে মাথা ঘামাব? পশ্চিমবঙ্গ কীভাবে অবৈধ শরনার্থীদের সমস্যা সামলাচ্ছে?
কার্যত এই নাগরিকত্ব ইস্যু পশ্চিমবঙ্গ ও অসমের মধ্য়ে যে বৈষম্য রয়েছে সেদিকেই আলো ফেলেছে সুপ্রিম কোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় জানিয়েছেন, শরনার্থী সমস্যা শুধু সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সংকট নিয়ে আসে এমনটা নয়, এটা রাজ্যের সম্পদের উপরেও চাপ তৈরি করে। এখানেই সুপ্রিম কোর্টের প্রশ্ন, কোথাও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে বলে সেখানে একরকমের ব্যবস্থা আর অন্য জায়গায় সেই সুবিধা কেন দেওয়া হল না এটা মেনে নেওয়া যায় না। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সবার জন্য সমান অধিকার হওয়া উচিত।
আসলে শরনার্থীদের নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে যে সমস্যা তার সঙ্গে অসমের সমস্যার কিছুটা ফারাক রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে সবথেকে বেশি শরনার্থী এসেছেন বলে দাবি করা হয়। তবে মূলত পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে যেটা হয়েছিল, শরনার্থীরা কার্যত বাংলার জনজীবনের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন। একেবারে স্রোতের মতো শরনার্থীরা ভিটে মাটি ছেড়ে পূর্ব পাকিস্তান থেকে এদেশে এসেছিলেন। এরপর শুরু হয় কঠিন সংগ্রাম। খড়কুটো আগলে বেঁচে থাকার চেষ্টা। কিন্তু দিনের পর দিন এই লড়াই চালিয়ে তাঁদের অনেকেই নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেন। এমনকী বহু ক্ষেত্রে এই রাজ্যের যাঁরা আদি বাসিন্দা ছিলেন তাঁদেরকেও ছাপিয়ে যান তাঁরা। ঘটি বাঙাল নিয়ে আপাতভাবে দ্বন্দ্ব তৈরি হলেও তা প্রকট রূপ নেয়নি।
অন্য়দিকে অসমের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় বিষয় হল সেখানকার ভাষার সঙ্গে বাংলাদেশিদের ভাষার ফারাক রয়েছে। সেকারণে পুরোপুরি স্রোতে মিশতে পারেননি তাঁদের অনেকেই। তাছাড়া অনুপ্রবেশকারীদের দাপটে অসমিয়াদের একাংশ কোণঠাসা হতে শুরু করে। এরপরই শুরু হয় বাঙালি খেদাও কার্যত বাংলাদেশি খেদাও। কিন্তু বাংলার ক্ষেত্রে এটা হয়নি।