ভারতে সমস্ত প্রশাসনিক ক্ষেত্রেই বিহারের বাসিন্দারের উপস্থিতি দেখা যায়। পরিশ্রমের ক্ষমতার জন্য তাঁরা পরিচিত। তবে রুশ রাজনীতিতেও যে তাঁদের প্রভাব থাকবে, তা কল্পনা করা কঠিন। সেই কল্পনাতীতই সম্ভব করেছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডক্টর অভয় কুমার সিং। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের দলের আইনপ্রণেতা তিনি। আর বর্তমানে 'ইউক্রেনের আগ্রাসন'-এর বিরুদ্ধে জোরকদমে প্রচার করছেন তিনি।
ডক্টর অভয় কুমার সিং
পশ্চিম রাশিয়ার কুরস্কের বিধায়ক তিনি। অভয় কুমার সিং বিহারের পাটনার আদি বাসিন্দা। প্রায় ৩০ বছর আগে ১৯৯১ সালে তিনি মেডিসিন পড়তে রাশিয়া গিয়েছিলেন। তার আগে পাটনার লয়োলা হাই স্কুলে পড়াশোনা করেন। রাশিয়ার কুরস্ক স্টেট মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক হন।
তারপরে তিনি ডাক্তারি প্র্যাকটিস করতে পাটনায় ফিরে আসেন। কিন্তু শীঘ্রই আবার রাশিয়ায় ফেরেন। সেখানে নিজের ওষুধের ব্যবসা শুরু করেন। রাশিয়ায় তাঁর ব্যবসা চূড়ান্ত সফল হয়। পরবর্তীকালে তিনি রিয়েল এস্টেট এবং নির্মাণের ব্যবসায় প্রবেশ করেন। গত ২০১৫ সালে ভ্লাদিমির পুতিনের ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টিতে যোগ দেন। ২০১৮ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনে কুরস্ক থেকে জয়ী হন।
কী বলছেন?
পুতিনের দল এমনিতেও রাশিয়ায় ভালো ভাবমূর্তি রাখতে চাইছে। তাঁরা এর জন্য এক জাতীয়তাবাদী অ্যাজেন্ডা তুলে ধরছে। তাঁদের কথায়, সমস্ত দোষ পশ্চিমী দেশ ও ইউক্রেনেরই। সৈন্য প্রেরণে শান্তি ফেরানোর চেষ্টা বলে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে। রুশ সরকারের নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যমে চলছে জোর প্রচার।
আর সেই প্রচারেরই অংশ ডক্টর অভয় কুমার সিং। তিনি বলছেন, 'প্রতিবেশী দেশকে আলোচনার যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। সেটি ব্যর্থ হয়েছে। সেই কারণেই যুদ্ধের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে রাশিয়া।'
ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, 'চিনে এসে বাংলাদেশে তাদের সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করলে ভারত কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবে? ভারত মোটেও সেটা পছন্দ করবে না। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটো তৈরি হয়েছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পরেও ন্যাটো বিচ্ছিন্ন হয়নি। বরং ধীরে ধীরে আমাদের দিকে এগিয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, ‘ইউক্রেন ন্যাটোতে যোগ দিলে তা তাদের সেনাবাহিনীকে আমাদের দেশের কাছাকাছি নিয়ে আসবে। ইউক্রেন আমাদের প্রতিবেশী। এটি কার্যত চুক্তি লঙ্ঘন। আমাদের রাষ্ট্রপতি এবং পার্লামেন্টের তাই প্রতিক্রিয়া দেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। বাধ্য হয়েই ইউক্রেন আক্রমণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’
ভারতীয় বংশোদ্ভূত রুশ আইনপ্রণেতা ইউক্রেনে পারমাণবিক হামলার জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছেন। তবে তিনি বলেছেন, পরমাণু অস্ত্রের মহড়া চালানোর উদ্দেশ্য একটাই। অন্য কোনও দেশ রাশিয়া আক্রমণ করলে তার জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা।