তিন বছরের ছেলে দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত।হাতে সময় খুব কম। এই রোগ সারাতে যে ওষুধ লাগবে, সেটা কেনার মতো ক্ষমতাও নেই হায়দরাবাদের দম্পতির। কিন্তু তা সত্বেও হাল ছাড়েননি। ওষুধ কেনার জন্য বন্ধু বান্ধব থেকে শুরু করে সোশ্যাল মিডিয়ায় টাকা জোগাড় করতে লাগাতার প্রচার চালিয়েছেন। তাতে সাড়াও মিলেছে। ওষুধ কেনার জন্য প্রয়োজনীয় টাকাও এখন জোগাড় হয়ে গিয়েছে। ওষুধ আনতে অর্ডারও দেওয়া হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু তাঁদের সন্তানের সেরে ওঠার অপেক্ষায় এই দম্পতি।
ছত্তিশগড়ের বাসিন্দা যোগেশ গুপ্তা ১০ বছর ধরে হায়দরাবাদের একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করেন। যোগেশ ও রুপাল গুপ্তার সন্তান আয়ানশ জন্মের সময় থেকেই দূরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়।চিকিৎসকরা জানান, তাঁদের ছেলের স্পাইনাল ম্যাসকুলার অ্যাট্রোপি হয়েছে। এই রোগ সারানোর একটিমাত্র ওষুধ আছে। সেই ওষুধের দাম ১৬ কোটি টাকা।
ওষুধটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপ থেকে আনতে হবে। চিকিৎসকের এই বক্তব্য শোনার পর কী করবেন, কীভাবে ছেলেকে বাঁচাবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না ওই দম্পতি। কিন্তু তাঁরা হাল ছাড়েননি। টাকা জোগাড়ের জন্য শুরু করলেন সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার। বিভিন্ন বন্ধু বান্ধবের সাহায্য নিলেন। তাঁদের মাধ্যমেও সোশ্যাল মিডিয়া নিরন্তর প্রচার চলতে থাকল।
দেখতে দেখতে ৬৫ হাজার জন এগিয়ে এলেন টাকা দিতে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে এই প্রচার শুরু হয়। লাগাতার প্রচার চালানোর ফলে ২৩ মে–এর মধ্যে ওষুধ কেনার সব টাকা জোগাড় হয়ে যায়। জানা গিয়েছে, এই ৬৫ হাজারের মধ্যে সেলিব্রিটি থেকে সাধারণ মানুষ সবাই রয়েছেন। সেলিব্রিটিদের মধ্যে রয়েছেন ভারতের ক্রিকেট অধিনায়ক বিরাট কোহলি, অভিনেত্রী অনুষ্কা শর্মা, ইমরান হাসমি, দিয়া মির্জা, জাভেদ জাফরি, সারা আলি খান সহ আরও অনেকে।
প্রত্যেককে ধন্যবাদ জানিয়ে আয়ানশের বাবা যোগেশ গুপ্তা জানান,‘আমি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ওষুধটি নিয়ে আসার জন্য যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ করে দিয়েছি। আশা করছি, ১০ জুনের মধ্যে ওষুধটি চলে আসবে। যারা আমাদের টাকা দিয়ে সাহায্য করেছেন, তাঁদের সকলকে কৃতজ্ঞতা জানাই। একইসঙ্গে আমার বন্ধু বান্ধবদেরও ধন্যবাদ যারা টাকা জোগাড়ের জন্য রাতদিন এক করে পরিশ্রম করেছেন।’ উল্লেখ্য, আয়ানশের বয়স যখন ৬ মাস তখন থেকেই এই দুরারোগ্য ব্যাধির উপসর্গ দেখা গিয়েছিল। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, এই রোগের জন্য নির্দিষ্ট ওষুধটি না আনলে ওই শিশুটি চার বছরের বেশি বাঁচবে না।
উল্লেখযোগ্য বিষয়, গোটা বিষয়টি প্রশাসনিক স্তরেও এখন চলে গিয়েছে। আয়ানশের বাবা মা এখন চাইছেন, যে ওষুধটি এখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসছে, তার ওপর থেকে যেন জিএসটি ও আমদানি শুল্ক মকুব করা হয়। ইতিমধ্যে বিষয়টি রাজ্যসভায় উত্থাপন করেছেন মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেস সাংসদ বিবেক কে তানখা। এই প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন জানিয়েছেন, এই সব জীবনদায়ী রোগের ওষুধের ক্ষেত্রে আমদানি শুল্ক ছাড়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ৫ শতাংশ জিএসটিও যাতে না লাগে সেই বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে।