দীর্ঘদিন আটকে থাকার পর অবশেষে গতকাল উত্তরকাশীর টানেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন ৪১ জন শ্রমিক। ম্যারাথন উদ্ধার অভিযান শেষ হওয়ার পরই উদ্ধার হওয়া শ্রমিকদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। রিপোর্ট অনুযায়ী, ৪১ জন শ্রমিককে নিরাপদে সুড়ঙ্গ থেকে বের করে আনার পর তাঁদের শরীর স্বাস্থ্য নিয়ে জানতে ফোন করেছিলেন প্রধামন্ত্রী মোদী। পরে উদ্ধার অভিযান সফল হওয়ায় সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্ধারকারী দলের প্রশংসা করেন মোদী। প্রধানমন্ত্রীর কথায়, উদ্ধারকাজে যুক্ত সকলেই দলগত ভাবে কাজ করে মানবিকতার এক অনন্য নিদর্শন পেশ করেছেন। পোস্টে মোদী লেখেন, 'উত্তরকাশীতে আমাদের ভাইদের উদ্ধার অভিযানের সাফল্য সবাইকে আবেগাপ্লুত করেছে। সুড়ঙ্গে আটকে থাকা বন্ধুদের আমি বলতে চাই, আপনাদের সাহস ও ধৈর্য সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছে। আমি আপনাদের সকলের মঙ্গল ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি।' (আরও পড়ুন: বন্দে ভারতে আসছে আমূল পরিবর্তন, মহারাজা এক্সপ্রেসের মতো রাজকীয় সুবিধা দেবে রেল)
এদিকে শ্রমিকদের ফোনে কী বলেন প্রধনমন্ত্রী? জানা গিয়েছে, মোদী ফোনে সেই ৪১ জনকে বলেন, ‘আপনাদের উদ্ধারের পর চিকিৎসকরা আপনাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে আর আমাকে বলেন, শ্রমিকরা সবাই ভালো আছেন। তাঁরা আনন্দ করেই সুড়ঙ্গের ভিতরে দিন কাটাচ্ছিলেন। তাঁদের অনেক সাহস। মেডিক্যাল চেক-আপে কোনও সমস্যাই ধরা পড়েনি। তাই আমি আরও একদিন অপেক্ষা করতে পারলাম না। ভাবলাম, রাতেই ফোন করে কথা বলি।’
প্রসঙ্গত, গত ১৭ দিন ধরে উত্তরকাশীর টানেলে আটকে ছিলেন বাংলার ৩ সহ মোট ৪১ জন শ্রমিক। গত সপ্তাহে উদ্ধারকাজে গতি এসেছিল। তবে হিমালয়ের খামখেয়ালিপনার জেরে বারবারই থমকেছে ড্রিলিংয়ের কাজ। এর জেরে অনিশ্চয়তার মধ্যেই প্রহর গুনতে হয়েছে ৪১ জন শ্রমিককে। এর আগে গত সপ্তাহে দিনে দু'বার হিমালয়ের খামখেয়ালিপনায় আটকে যায় উদ্ধারকাজ। গত বৃহস্পতিবারের মতো শুক্রবারও ফের একবার ড্রিল করতে গিয়ে পাহাড়ে কোনও এক ধাতব বস্তুর মুখোমুখি হতে হয় উদ্ধারকর্মীদের। এর জেরে ড্রিল মেশিন থমকে যায়। এর আগে শুক্রবার সাংবাদিকদের জানানো হয়েছিল, আরও ১২ মিটার ড্রিল করলেই আটকে থাকা শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো যাবে। তবে সেটুকু পথ পাড়ি দিতেই অনেক বাধার মুখে পড়তে হয় অগার মেশিনকে। এই আবহে অগার মেশিনের সাহায্যে ড্রিল করার বিকল্প থেকে সরে আসে উদ্ধারকারী দল। অথচ গত বুধবার সন্ধ্যা-রাতের দিকে মনে করা হচ্ছিল, যে কোনও মুহূর্তে আটকে থাকা ৪১ শ্রমিককে উদ্ধার করা সম্ভব হবে। এরই মাঝে শনিবার জানিয়ে দেওয়া হয়, অগার মেশিনের সাহায্যে আর ড্রিল করা হবে না। এই আবহে শুরু হয় ব়্যাট হোল মাইনিং। হাতেই সুড়ঙ্গ কেটে পৌঁছে যাওয়া হয় সেই ৪১ শ্রমিকের কাছে। এই আবহে গত সন্ধ্যায় বের করে আনা হয় তাঁদের।
রিপোর্ট অনুযায়ী, সিল্কিয়ারা এবং দন্ডলগাওঁয়ের মাঝে তৈরি হচ্ছিল এই টানেলটি। গত ১২ নভেম্বর খুব ভোরে সেই টানেলে ধস নেমেছিল। এই গোটা টানেলটি সাড়ে চার কিলোমিটার লম্বা বলে জানা যায়। তারই মধ্যে ১৫০ মিটার লম্বা এলাকা জুড়ে ধসটা নামে সেদিন ভোর ৪টে নাগাদ। জানা যায়, টানেলের সামনের দিক থেকে ভিতরের দিকে প্রায় ১৫০ মিটার জমি ধসে পড়ে ওপর থেকে। অর্থাৎ, টানেলের ছাদ ধসে পড়ে। তাতেই আটকা পড়েন শ্রমিকরা। তবে লাগাতার প্রচেষ্টায় অবশেষে উদ্ধার করা গিয়েছে তাদের। তাঁদের সবাই অক্ষত অবস্থায় সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। প্রসঙ্গত, ব্রহ্মকাল-যমুনোত্রী জাতীয় সড়কটি চারধাম রোড প্রোজেক্টের অংশ। এই সড়ক সারা বছর সব ধরনের প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই চালু থাকার কথা। এই সড়কটি তৈরি হলে উত্তরকাশী এবং যমুনোত্রীর মধ্যে যারাপথ ২৬ কিলোমিটার কমে আসবে।