ইউক্রেন-রাশিয়া ইস্যুতে নিরপেক্ষ ভারত। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছে মোদী সরকার। অনেকে মনে করছেন ভারতের এই মনোভাব পরিচিত। কেন?
যদি রাশিয়ার বিষয়ে ভারতের অবস্থানের ইতিহাস দেখেন, দেখবেন আগেও এমনই 'নিউট্রাল' থেকেছে ভারত। ২০১৪ সালে পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করেছিলেন এবং ক্রিমিয়াকে সংযুক্ত করেছিলেন। তখনও ভারত নিরপেক্ষ থেকেছিল।
সেই সময়ে মনমোহন সিং সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিব শঙ্কর মেনন ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করে বলছিলেন, ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার 'বৈধ' স্বার্থ রয়েছে।
এবারে ভারত কী বলেছে?
ভারত সরকার জানিয়েছে, 'ইউক্রেনের ঘটনায় ভারত গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। ভারত সহিংসতা অবিলম্বে বন্ধের আবেদন জানায়। ভারত বলেছে, শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক পথে ফিরে আসা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই। ভারত বরাবরই বিবাদের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে।'
কিন্তু ভারত নিরপেক্ষ কেন?
ভারত জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে যখন কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে গিয়েছে, তখন অভিজ্ঞতা ভাল হয়নি। ভারত স্বাধীনতার পর থেকেই এক্ষেত্রে পশ্চিমের নিরপেক্ষতা পেয়েছে। সেই সময়ে সদস্য দেশগুলো ভারতের অভিযোগের বিষয়ে বিশেষ কর্ণপাত করেনি।
অন্যদিকে রাশিয়া জাতিসংঘে ভারতের অন্যতম সেরা অংশীদার। কৌশলগত অংশীদারিত্ব রয়েছে ভারত ও রাশিয়ার। দুই দেশের মধ্যে গভীর প্রতিরক্ষা সম্পর্ক কারও অজানা নয়। ভারত এখনও রাশিয়া থেকে অস্ত্র কিনছে। S-400-র মত প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তার সর্বশেষ উদাহরণ। এই পরিস্থিতিতেও ভারতে সেগুলি সরবরাহের আশ্বাস দিয়েছে রাশিয়া।
অন্যদিকে, কাশ্মীর সহ অন্যান্য অনেক বিষয়ে রাশিয়া ধারাবাহিকভাবে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে রাশিয়া প্রকাশ্যে ভারতকে সমর্থন করেছিল। সেই সময়ে পশ্চিমী দেশগুলো ছিল ভারতের বিপক্ষে।
১৯৭৯-৮০ সালে রাশিয়া যখন আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালায়, তখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রুশ সামরিক অভিযানকে সমর্থন করে বলেছিলেন, 'আফগানিস্তানের কমিউনিস্ট হাফিজুল্লাহ আমিন সরকারের অনুরোধেই সোভিয়েত সেনারা কাবুলে প্রবেশ করেছিল।'
রয়েছে ঝুঁকিও
রুশ আগ্রাসন সম্পর্কে ভারত সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ না হলে ঝুঁকি রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তান ও চিনের মোকাবিলা করতে ভারতের রাশিয়া প্রয়োজন। একদিকে পাকিস্তান কাশ্মীর নিয়ে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদ ছড়াচ্ছে। অন্যদিকে চিন অরুণাচল নিয়ে ভিত্তিহীন দাবি করছে। এমন পরিস্থিতিতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে গেলে ভারতের সমস্যা বাড়তে পারে। বিশেষত, চিন ও রাশিয়ার বন্ধুত্ব কারও অজানা নয়। ফলে চিনকে নিয়ন্ত্রণের রাখতে 'মিউচুয়াল ফ্রেন্ড' রাশিয়াকে প্রয়োজন।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি হল, রাশিয়া চটে গেলে, রুশ হাইড্রোকার্বন সেক্টরে বিনিয়োগের পরিকল্পনা লাইনচ্যুত হতে পারে। ভারতের জ্বালানি চাহিদা মেটাতে এই পরিকল্পনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
ভারতের প্রাক্তন বিদেশ সচিব কানওয়াল সিবাল সম্প্রতি এ বিষয়ে একটি মন্তব্য করেন। তিনি লিখেছেন, 'রাশিয়া, আমেরিকা ও ইউরোপের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমরা কারও পক্ষ নিতে চাই না। এর জন্য প্রয়োজন দক্ষ কূটনীতির।' তবে পশ্চিমী দেশের দ্বিমুখীতার বিষয়ে সোচ্চার হয়েছেন তিনি।
কানওয়াল সিবাল এক সময়ে রাশিয়ায় ভারতের রাষ্ট্রদূত ছিলেন।