ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট অনুসারে, স্কুল পাঠ্যপুস্তকে মহিলাদের খাটো করে উপস্থাপন করা হয়।
সম্প্রতি প্রকাশিত বার্ষিক প্রতিবেদনের চতুর্থ সংস্করণটি উল্লেখ করা হয়েছে, পাঠ্যপুস্তকে কেবল পুরুষদের ছবির তুলনায় মহিলাদের ছবির সংখ্যা যে খুব কম তাই নয়, তাঁদের উপস্থাপন করা হয় তুলনায় ‘কম মর্যাদাপূর্ণ’ পেশাজীবী এবং সমাজের অন্তর্মুখীন ও নিষ্ক্রিয় সদস্য হিসাবে।
যখন ডাক্তার হিসাবে পুরুষদের দেখানো হয় তখন মহিলাকে নার্স হিসাবে দেখানো হয়। কেবলমাত্র খাদ্য, ফ্যাশন বা বিনোদন সম্পর্কিত বিষয়গুলিতে মহিলাদের চিত্রিত করা হয়। স্বেচ্ছাসেবীর ভূমিকায় নারীদের দেখানো এবং পুরুষদের বেতনভোগী কাজের ক্ষেত্রে দেখানো হয়। লিঙ্গ বৈষম্যের এই দিকটাই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। তবে কিছু দেশ লিঙ্গ ভারসাম্যের লক্ষ্যে পাঠ্যপুস্তকের ছবিগুলি সংশোধন করেছে।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, আফগানিস্তানে, নব্বইয়ের দশকে প্রকাশিত প্রথম শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে মহিলারা প্রায় অনুপস্থিত ছিলেন। ২০০১ সাল থেকে, তাঁদের পরোক্ষ ও ঘরোয়া ভূমিকা় যেমন মা, যত্নশীল কন্যা এবং বোন হিসাবে উপস্থাপন করা হয়। বেশিরভাগ মহিলাকেই পরনির্ভরশীল হিসেবে দেখানো হয়। শিক্ষিকার পেশাই তাঁদের কাছে একমাত্র কেরিয়ার।
'একই ভাবে, ইরানে ৯৫টি প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বাধ্যতামূলক শিক্ষার পাঠ্যপুস্তক পর্যালোচনা থেকে দেখা গিয়েছে যে, মহিলাদের ৩৭টি ছবিতে দেখানো হয়েছে। প্রায় অর্ধেক ছবিতে মহিলাদের পরিবার ও শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত দেখানো হয়েছে।
২০১৯ সালে মহারাষ্ট্র স্টেট ব্যুরো অফ স্কুল বুক প্রোডাকশন অ্যান্ড কারিকুলাম রিসার্চ লিঙ্গগত স্টিরিওটাইপগুলি মুছে ফেলে বহু পাঠ্যপুস্তকের ছবি সংশোধন করেছে।
দ্বিতীয় শ্রেণির পাঠ্যপুস্তকে দেখানো হয়েছে, একজন মহিলা চিকিৎসক এক পুরুষ শেফের সঙ্গে গৃহকর্ম ভাগ করে নিচ্ছেন। শিক্ষার্থীদের এই চিত্রগুলি লক্ষ্য করতে এবং সেগুলি সম্পর্কে বলতে বলা হয়।
একটি স্বাধীন দল গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট (GEM রিপোর্ট) তৈরি করেছে এবং ইউনেস্কো তা প্রকাশ করেছে। শিক্ষার সঠিক উন্নয়নে অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে ইউনেস্কো।
রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষার পাঠ্যপুস্তকের পাঠ্য ও চিত্রগুলিতে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ায় ৪৪%, বাংলাদেশে ৩৭% এবং পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে ২৪% নারীর অংশীদারিত্ব বহাল।
প্রতিবেদন অনুসারে, আমেরিকায় প্রারম্ভিক অর্থনীতি পাঠ্যপুস্তকের একটি সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে উল্লিখিত ১৮ শতাংশ চরিত্রগুলির মহিলারা বেশিরভাগই খাদ্য, ফ্যাশন বা বিনোদনের সঙ্গে যুক্ত।
স্পেনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহিলা চরিত্রের অংশ ছিল ১০% এবং মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠ্যপুস্তকে ১৩%। ১২০০০ এরও বেশি চিত্রের পঞ্চমাংশে মহিলারা ছিলেন।
ইউনেস্কোর এই রিপোর্টে স্পষ্ট যে, যতই সমানাধিকারের কথা বলা হোক না কেন আজও অর্ধেক আকাশ ছুঁতে পারেনি নারী।