ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি বানচাল করতে বার্লিনে দরবার করেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী৷ জার্মান চ্যান্সেলর এখনই ইরানের সঙ্গে বোঝাপড়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না৷ ফিলিস্তিনি প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস বার্লিন সফরে এসে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎসের সামনে ফিলিস্তিনিদের উপর ইসরায়েলের নিপীড়নকে ‘হলোকস্ট' হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন৷
তৎক্ষণাৎ এর প্রতিবাদ না করে দেশে-বিদেশে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন শলৎস৷ এবার ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী ইয়াইল লাপিদ বার্লিনে এসে জার্মান চ্যান্সেলরের ভূমিকার প্রশংসা করে সেই চাপ কিছুটা কমামোর চেষ্টা করলেন৷ লাপিদ বলেন, ঘটনার আকস্মিকতায় বিহ্বল হলেও শলৎস কিন্তু পরে কড়া ভাষায় আব্বাসের বক্তব্যের নিন্দা করেছিলেন৷ তিনি শলৎসকে সেই স্পষ্ট বক্তব্যের জন্য ধন্যবাদ জানান৷
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে প্রথম জার্মানি সফরে লাপিদের আসল লক্ষ্য ছিল ইরান৷ সে দেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরমাণু চুক্তি পুনরুদ্ধার করতে জার্মানি-সহ ইউরোপের উদ্যোগ সম্পর্কে ইসরায়েল অন্তত সন্দিহান৷ প্রধানমন্ত্রী লাপিদ অবিলম্বে সেই আলোচনা বন্ধ করার জন্য চাপ দিচ্ছেন৷ তার মতে, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ইরানের হাতে পরমাণু অস্ত্র আসা মোটেই বন্ধ করা যাবে না৷
লাপিদ আলোচনার প্রক্রিয়াকে ব্যর্থ হিসেবে মেনে নেবার পক্ষে সওয়াল করেন৷ তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইরানের সঙ্গে পরমাণু সংক্রান্ত বোঝাপড়ায় আবার ফিরে যাওয়া মারাত্মক এক ভুল হবে৷ নিজের বক্তব্যের সপক্ষে তিনি জার্মান চ্যান্সেলরকে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সূত্রে সংগ্রহ করা নানা গোপন তথ্য দেখিয়েছেন বলে লাপিদ দাবি করেন৷ ইরানের উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা তোলা হলে সেই অর্থ গোপন পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি আরও তরান্বিত করবে বলে ইসরায়েল দাবি করছে৷
জার্মান চ্যান্সেলর শলৎস বলেন, তিনি এমনিতেই অদূর ভবিষ্যতে ইরানের সঙ্গে দ্রুত বোঝাপড়ার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন না৷ তার মতে, ইরান ইউরোপীয় মধ্যস্থতাকারীদের ন্যায্য প্রস্তাব উপেক্ষা করে আসছে৷ উল্লেখ্য, গত মাসে নতুন চুক্তির খসড়া নিয়ে কিছুটা আশার আলো দেখা দিলেও আলোচনা আবার থমকে গেছে৷ সপ্তাহান্তে জার্মানি, ফ্রান্স ও ব্রিটেন এ বিষয়ে ইরানের আন্তরিকতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে৷ এক যৌথ বিবৃতিতে এই তিন দেশ এমন কূটনৈতিক সুযোগ হাতছাড়া করার জন্য ইরানের সমালোচনা করেছে৷
আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থাও গত সপ্তাহে ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে৷ আইএইএ জানিয়েছে, সেই কর্মসূচি আদৌ শান্তিপূর্ণ কিনা, সেই মর্মে কোনও গ্যারেন্টি দেওয়া সম্ভব নয়৷ এমন সংশয় দূর করতে ইরান সোমবার সেই সংস্থার সঙ্গে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে৷
নাৎসি আমলে ইহুদি নিধন যজ্ঞ বা হলোকস্টের নিজের পরিবারের একাধিক সদস্যদের হারিয়েছেন ইয়াইর লাপিদ৷ জার্মানি সফরে তিনি এমন আরও কয়েকজন ইসরায়েলিকে সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন৷ সোমবার চ্যান্সেলর শলৎসও তাদের সঙ্গে বার্লিনে ভানসে কনফারেন্স শৌধে উপস্থিত ছিলেন৷ সেখানেই ১৯৪২ সালে নাৎসিরা ইহুদিদের নির্মূল করার ভয়াবহ ষড়যন্ত্র করেছিল৷ লাপিদ জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আনালেনা বেয়ারবকের সঙ্গেও আলোচনা করেন৷
(বিশেষ দ্রষ্টব্য: প্রতিবেদনটি ডয়চে ভেলে থেকে নেওয়া হয়েছে। সেই প্রতিবেদনই তুলে ধরা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমস বাংলার কোনও প্রতিনিধি এই প্রতিবেদন লেখেননি।)