বাংলা নিউজ >
ছবিঘর > ফিরে দেখা ২০২০: CAA বিরোধী প্রতিবাদ থেকে কৃষক বিক্ষোভ, তোলপাড় রাজনৈতিক মঞ্চ
ফিরে দেখা ২০২০: CAA বিরোধী প্রতিবাদ থেকে কৃষক বিক্ষোভ, তোলপাড় রাজনৈতিক মঞ্চ Updated: 31 Dec 2020, 11:50 PM IST Uddalak Chakraborty অজানা দুর্বিপাকের বছর হিসেবে বিশ্ববাসীর চোখে চিহ্নিত হলেও ২০২০ সাল সাক্ষী থাকল বেশ কিছু সাড়া জাগানো রাজনৈতিক ঘটনাপঞ্জীর। করোনাভাইরাস সংক্রমণ থেকে সাইক্লোনের তাণ্ডব, সীমান্ত সংঘাতের জেরে সর্বব্যাপী উত্তেজনা এবং অর্থনৈতিক দোলাচল। সব মিলিয়ে ঘটনাবহুল বছরে বহুবর্ণের রাজনৈতিক দৃশ্যাবলীর সাক্ষী থাকল ভারতবাসী। দেখে নেওয়া যাক তারই কিছু ঝলক। 1/7 বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জেরে দিল্লিতে সংঘর্ষের বলি হলেন ৫৩ হতভাগ্য। আহত হলেন আরও ২০০ জনেরও বেশি। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভারত সফরের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে আগুন জ্বলল রাজধানীতে। বিক্ষোভের আঁচে রাস্তায় পাথর ছুড়ে বিক্ষোভ দেখালেন কেন্দ্র-বিরোধী প্রতিবাদীরা। জ্বলল অগুনতি গাড়ি, ভাঙচুর হল দোকান-বাজার এবং শহরের কিছুঅঞ্চল কার্যত যুদ্ধক্ষেত্রের চেহারা নিল। ঘটনার জেরে অচিরেই রাজনৈতিক দলগুলি পরস্পরকে দোষারোপের মধ্যে দিয়ে হাওয়া গরম করে তুলল। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের পদত্যাগ দাবি করলেন কংগ্রেস সভাপতি সনিয়া গান্ধী। অন্য দিকে কংগ্রেসের ইতিহাসকে কাঠগড়ায় তুলে শাহ জবাব দিলেন, কলঙ্কিত অতীতের দায় মাথায় নিয়ে কাউকে দোষারোপের অধিকার নেই কংগ্রেসের। কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি-র তরফে অভিযোগ জানাল হল, হিংসা নিয়ে রাজনীতি করছে বিরোধীরা। পাশাপাশি, বিজেপি বনাম আম আদমি পার্টির সংঘর্ষে রাজনৈতিক তরজায় নতুন মাত্রা যুক্ত হল। 2/7 ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদের মধ্যেই সংসদের উভয় কক্ষে পাশ হয়ে গেল কেন্দ্রীয় সরকারের তিনটি কৃষি বিল। সংঘাতের জেরে এনডিএ ছাড়ল এক জোট শরিক। সরকারের দাবি, নতুন কৃষি আইনগুলি কৃষকদের বড় সংস্থার কাছে নিজেদের উৎপন্ন ফসল বিক্রি করতে সহায়ক হবে। কিন্তু বিরোধীরা পালটা দাবি করলেন যে, নতুন আইন সম্পূর্ণ ভাবে কৃষক বিরোধী। তাঁরা ওই তিন কৃষি আইনকে কালা কানুন বলে চিহ্নিত করলেন। এর জেরে বিরোধীদের বিরুদ্ধে কৃষকদের ভুল পথে প্ররোচিত করার অভিযোগ আনল কেন্দ্রে আসীন এনডিএ সরকার। রাজনীতির আঙিনায় ঘাত-প্রতিঘাতের মাঝেই এবাস কেন্দ্রীয় কৃষি আইনের বিরুদ্ধে পথে নামলেন কৃষকরা। প্রথমে পঞ্জাব ও হরিয়ানার কৃষকরাই প্রধানত আন্দোলনে নামলেও ক্রমে দেশের অন্যান্য রাজ্যগুলিতেও ছড়িয়ে পড়ল কৃষি আইন বিরোধী বিক্ষোভ। পঞ্জাব, হরিয়ানা, রাজস্থান, উত্তরাখণ্ড ও উত্তর প্রদেশ থেকে কাতারে কাতারে কৃষকপায়ে হেঁটে ও ট্র্যাক্টর নিয়ে দিল্লি অভিমুখে মিছিল শুরুকরলেন। রাজধানীতে পৌঁছানোর পথে বিস্তর বাধা দেওয়া হলেও রোখা গেল না কৃষক মিছিল। দিল্লির নিরঙ্কারী সমাবেশ মাঠে বিক্ষোভকারীদের একাংশকেঠাঁই দেওয়া হলেও মিছিলের বেশিরভাগই আটকে গেল দিল্লিতে প্রবেশের মুখে। বর্তমানে দিল্লি-হরিয়ানা ও দিল্লি-উত্তর প্রদেশ সীমান্তে বিক্ষোভ অবস্থান চালিয়ে যাচ্ছে কৃষক সংগঠনগুলি। কেন্দ্রের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হলেও এখনও অধরা সমাধানসূত্র। 3/7 গত ৫ অগস্ট জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের বর্ষপূর্তির মাঝেই অযোধ্যায় বহু বিতর্কিত রাম মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ভাষণে প্রধানমন্ত্রী ওই বিশেষ দিনটিকে ‘ধ্বংস ও পুনর্জাগরণের শৃঙ্খল ভেঙে রামজন্মভূমির স্বাধীনতা দিবস’ হিসেবে চিহ্নিত করলেন। তিনি বললেন, সমগ্র ভারতের কাছে এ এক আবেগঘন মুহূর্ত। তবে তাঁর সঙ্গে আদৌ সহমত হননি বিরোধীরা। এনসিপি প্রধান শরদ পাওয়ার কোভিড সংক্রমণের মাঝে ভিত্তিপ্রস্তর অনুষ্ঠান আয়োজনের কড়া সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় সরকারকে অভিযুক্ত করলেন। আর এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রধানমন্ত্র্রীর উপস্থিতি নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিলেন। তাঁর দাবি, সংবিধান মেনে শপথগ্রহণ এবং দেশের ধর্মনিরপেক্ষ ভাবাবেগে আঘাত হেনেছেন মোদী। 4/7 উত্তর প্রদেশের হাথরাসে দলিত যুবতীকে চার উঁচু জাতের প্রতিনিধি গণধর্ষণ করার পরে নিগ্রহ এবং তার জেরে নিগৃহীতার মৃত্যু নিয়ে উত্তাপ ছড়াল দেশজুড়ে। বিশেষ করে গভীর রাতে চুপিসাড়ে তাঁর গ্রামের বাড়ির কাছে পুলিশি তত্ত্বাবধানে পরিবারের অনুমতির তোয়াক্কা না করে নিগৃহীতার দেহ দাহ করা নিয়ে প্রশ্ন তুললেন বিরোধীরা। এর পরেও বিরোধী নেতা ও সংবাদমাধ্যমকে নিগৃহীতার পরিবারের কাছে পৌঁছানোয় পুলিশের বাধা দান ঘিরে অভিযোগের তির উঠল উত্তর প্রদেশ সরকারের দিকেই। দ্বিতীয় বারের চেষ্টায় অবশ্য হতভাগ্য পরিবারের কাছে পৌঁছলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল ও প্রিয়াঙ্কা গান্ধী। উলটো দিকে বিজেপির অভিযোগ, মানুষের পাশে কখনই দাঁড়ায়নি কংগ্রেস। 5/7 কোভিড সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশে দেশব্যাপীলকডাউন ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তার জেরে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়লেন অসংখ্য পরিযায়ী শ্রমিক। অতিমারী নিয়ন্ত্রণে কেন্দ্রকে কাঠগড়ায় তুললেন বিরোধী নেতারা। বিশেষ করে পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্ভোগ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লাগাতার অভিযোগ জানালেন বিরোধীরা। দেরি না করে শাসকদল বিজেপি পরিযায়ীদের ঘরে ফেরাতে নানান উদ্যোগ নিল, তবু বেশ কিছু শ্রমিক ঘরে ফেরার পথে অকালমৃত্যুর শিকার হলেন। রোজগারহীন কয়েক লাখ শ্রমিকের দীর্ঘ পথ হেঁটে বাড়ি পৌঁছানোর চেষ্টা নিয়ে কেন্দ্রকে বিঁধলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী মোদীকে আক্রমণ করে রাহুল বললেন, ‘উনি প্রায়ই বলেন যে শ্রমিকদের সামনে তিনি মাথা নত করেন। কিন্তু যখন তাঁদের সত্যিই ওঁকে দরকার হল, তিনি নিষ্ক্রিয়ই থাকলেন। তোমরা খিদে তেষ্টা বুকে চেপে শুধু হাজার হাজার কিলোমিটার হেঁটে চল, কিন্তু মোদীজি তোমাদের ট্রেন দেবেন না। সরকার বলছে, তোমরা মরো, আমার কিছু যায় আসে না।’ 6/7 গত এপ্রিল মাসে মুম্বই শহর থেকে মাত্র ১২৫ কিমি দূরে মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলার ছোট্ট গ্রামে গণপিটুনিতে প্রাণ হারালেন দুই সাধু-সহ তিন ডজন। অঙ্গ পাচারের জন্য শিশু অপহরণের অভিযোগ এনে তাদের উপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে উন্মত্ত জনতা। ঘটনার জেরে রাজনৈতিক কাজিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছলে অতিমারী আবহে জোটশরিক শিব সেনার সঙ্গে বিজেপি-র সম্পর্কে ফাটল দেখা দেয়। সাধুহত্যা নিয়ে সেনার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানায় বিজেপি। তার পালটা দিতে উত্তর প্রদেশের এক মন্দিরে দুই সাধুর মৃত্যু নিয়ে বিজেপি-র উপরে চাপ তৈরি করে উদ্ধব ঠাকরের দল। 7/7 ১৫ জুন রাতে পূর্ব লাদাখে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখা সংলগ্ন গালওয়ান উপত্যকা অঞ্চলে চিনা ফৌজের সঙ্গে সংঘাতে শহিদ হন ২০জন ভারতীয় সেনা সদস্য। আহত হন ৭৬জন। ঘটনার জেরে চিন ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি ঘটে। চিনা বাহিনীতেও বেশ কিছু হতাহতের ঘটনা ঘটে। যদিও সেই সংখ্যা প্রকাশ্যে আনেনি বেজিং। সামরিক সংঘাতের উত্তাপ রাজনৈতিক ময়দানে ছড়িয়ে পড়তে দেরি হয়নি। ঘটনার জেরে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ আনেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। প্রধানমন্ত্রী মোদী চিনের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন বলে দাবি করেন রাহুল। পালটা অভিযোগে কগ্রেসের বিরুদ্ধে সংকট নিয়ে রাজনীতি করার জন্য রাহুলের বিরুদ্ধে তোপ দাগে বিজেপি। রাহুল গান্ধীকে বিঁধে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শংকর তথ্য বিকৃতির নালিশ জানান। তিনি জানান, ১৯৯৬ ও ২০০৫ সালের চুক্তি মোতাবেক সেনাবাহিনীর অস্ত্র তুলে নেওয়ার অধিকার নেই বলেই চিনা ফৌজের সামনে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে ভারতীয় সেনা।