ঋদ্ধিমান সাহাকে এক সাংবাদিকের হুমকি দেওয়ার ঘটনা সামনে আসার পর থেকেই নড়েচড়ে বসেছে ভারতীয় ক্রিকেটমহল। জল এতদূর গড়িয়েছে যে, বিসিসিআই গোটা ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। বহু প্রাক্তন ক্রিকেটার তো বটেই এমনকি ক্রিকেটার্স অ্যাসেসিয়েশনও বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিন্দা করেছে ঘটনার। সকলেই শাস্তি দাবি করছেন সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকের।
তবে ভারতীয় ক্রিকেটে যে এমন ঘটনা নতুন নয়, এবং এর জন্য কিছু ক্রিকেটারের সুবিধাভোগী মানসিকতাও যে দায়ী, সেই বিষয়টাই সোশ্যাল মিডিয়ায় তুলে ধরলেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রাক্তন টিম ডিরেক্টর জয় ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, টেলিভিশন আসার পরে যখন নিউজ চ্যানেলগুলির রমরমা শুরু হয়, সমস্যার সূত্রপাত সেই থেকেই।
জয়ের দাবি, নিউজ চ্যানেলগুলি আসলে ক্রিকেটের বোদ্ধা সাংবাদিক চায় না। তারা চায় এমন কাউকে, যে সহজেই তারকা ক্রিকেটারদের কাছে পৌঁছে ক্যামেরার সামনে তাঁদের মুখ থেকে কথা বার করাতে পারবে। সেই থেকেই এমন এক শ্রেণির সাংবাদিকের উদ্ভব হয়, যাঁরা গাভাসকর-কন্ট্রাক্টরকে না চিনতে পারেন, তবে এটা জানেন যে, কীভাবে স্টারদের পিছনে ঘুরে সাউন্ডবাইট আদায় করতে হয়।
টুইটারে তিনি জানান, ক্রীড়াজগতের বাইরের লোকেদের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয়, কোনও সাংবাদিক কীভাবে এত ক্ষমতাশালী হতে পারেন যে, একজন টেস্ট ক্রিকেটারকে হুমকি দেন? কীভাবেই বা এইসব তথাকথিত সাংবাদিকদের ক্রীড়ামহলের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে, সেটাও অনেকের বোধগম্য হবে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিষয়টা স্পষ্ট করতেই জয় হদিশ দেন, ক্রিকেটারদের সঙ্গে সখ্যতা বাড়াতে কীভাবে সাংবাদিকরা ভিন্ন পন্থা খুঁজে বার করেন। তাঁর দাবি, ক্রীড়াবিদরা সকলেই চান খেলার বাইরে তাঁদের বাকি কাজের ক্ষেত্রে যাতে অসুবিধার মুখে পড়তে না হয়। তাই ক্রিকেটারদের স্ত্রীদের শপিংয়ে নিয়ে যেতে পারলে, লন্ডনের কোনও কনসার্টের টিকিট ধরাতে পারলে, বা কোনও গাড়ি সংস্থার এমডিকে ফোন করে দাম সংক্রান্ত সুবিধা পাইয়ে দিতে পারলে সহজেই খেলোয়াড়দের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি করা যায়। এই বিশেষ শ্রেণির সাংবাদিকরা এভাবেই প্রভাব তৈরি করেন বলে জানান জয়।
তাছাড়া কোনও সাংবাদিক যদি সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারের সম্পর্কে ভালো ভালো কথা বলে পরোক্ষে দল নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারেন, বা প্রতিপক্ষ ক্রিকেটার সম্পর্কে গুজব রটাতে পারেন বলে বিশ্বাস তৈরি করতে পারেন, তাঁদের ক্ষেত্রে কাজ আরও সুবিধাজনক হয়ে দাঁড়ায় বলেই দাবি প্রাক্তন নাইট কর্তার।
জয় জানান, এক্ষেত্রে এই শ্রেণির সাংবাদিকরা বিশেষ ক্ষমতাবলে সরকারিভাবে বোর্ডের কাছ থেকে জানার আগেই সংশ্লিষ্ট ক্রিকেটারকে ফোন করে জানাতে পারেন তিনি সুযোগ পাচ্ছেন এবং এও জানাতে ভোলেন না যে, তাঁর সুযোগ পাওয়ার পিছনে সেই সাংবাদিকেরও হাত রয়েছে।
আসলে ক্রিকেটাররা কীভাবে এইসব সাংবাদিকদের নিজেদের সুবিধামতো কম-বেশি ব্যবহার করেন, সেটাও উল্লেখ করতে ভোলেননি জয় ভট্টাচার্য্য। এখন বিষয়টা নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে বলে পরিস্থিতি বদলে যাবে বলে বিশ্বাস করেন না জয়। বরং ঝড় থামলে আবার সব আগের মতো হয়ে দাঁড়াবে বলেই মনে করছেন তিনি।