গত ম্যাচে কম্বোডিয়াকে হারিয়ে আত্মবিশ্বাসে টগবগ করে ফোটা ভারতীয় দল যুবভারতীতে মাঠে নেমেছিল আফগানিস্তানের। দুই দলের শেষ ম্যাচ ১-১ ড্র হয়েছিল। তবে এএফসি এশিয়ান কাপ কোয়ালিফায়ারে প্রথম ম্যাচে হংকংয়ের কাছে ২-১ হার সমেত নিজেদের শেষ তিন ম্যাচেই হেরেছিল আফগানরা। তাই খাতায় কলমে এই ম্যাচে ভারতই এগিয়ে ছিল।
ম্যাচের শুরুতে দুই দলই একে অপরকে মেপে দেখে নিচ্ছিল। ভারতের হয়ে এদিন প্রথম এগারোয় সুযোগ পাওয়া আশিক কুরুনিয়ান শুরুতেই বেশ ভাল কয়েকটি ক্রস তোলেন, তবে জমাট রক্ষণে আফগানরা বড় সুযোগ তৈরি হতে দেয়নি। ম্যাচ এগোলে দুই দলের কেউই খুব বেশি বড় সুযোগ তৈরি করতে পারেনি, তবে বল দখলের লড়াইয়ে ভারতই এগিয়ে ছিল। ভারতের হয়ে আশিক, আকাশ মিশ্র, রোশন সিংরা একের পর এক সুন্দর ক্রস তুললেও, বেশিরভাগ সময়েই আফগান বক্সে সেই বলগুলি কালেক্ট করার মতো ভারতীয় খেলোয়াড়ের কমতি দেখা যায়।
ভারতের হয়ে কর্ণার থেকে সুনীল ছেত্রী একটি লেট রান নিয়ে প্রায় ফাঁকায় বল পেয়ে যান। তবে তাঁর হেডার অল্পের জন্য গোলের ওপর দিয়ে চলে যায়। আফগানিস্তান প্রথমার্ধের শেষ মিনিটে একেবারে দারুণ এক রক্ষণ ভাঙা পাসে গোলের দিকে এগোনোর সুযোগ পেয়েছিলেন বটে, তবে সন্দেশ ঝিঙ্গান দ্রুত সেই সুযোগ কাট আউট করেন। প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর দ্বিতীয়ার্ধে শুরুর দিকেই একেবারে মনবীরের ক্রস থেকে সুনীল গোলের সামনে একটু জায়গা পেয়ে গিয়েছিলেন। তবে বল ঠিক সময়ে তাঁর নাগালে না আসায় সুযোগ হাতছাড়া হয়। ৬৩ মিনিটে দ্বিতীয় পোস্টে কার্যত ফাঁকা গোলে হায়দারি মাথা ছোঁয়ালেই গোল হয়ে যেত। তবে তিনি তা করতে ব্যর্থ হন।
আফগানিস্তানের হয়ে ৭৪ মিনিটে জাজাই সম্ভবত তখনও অবধি ম্যাচের সবথেকে বড় সুযোগটি পান। বক্সের কোণা থেকে হওয়ায় শরীর ভাসিয়ে অসাধারণ শট নেন তিনি। তবে কার্যত গোটা ম্যাচ কিছু না করতে হলেও, সঠিক সময়ে দারুণ রিফ্লেক্স দেখিয়ে এক অসাধারণ সেভ করেন ভারতীয় গোলকিপার গুরপ্রীত। এই সুযোগ আসন্ন ঝড়ের ইঙ্গিত ছিল। ম্যাচ যত শেষের দিকে গড়ায় তত খেলা খুলতে থাকে। দুই দলই একটু বেশি আক্রমণে মন দেয়। এমন অবস্থায় আশিককে ফাউল করায় দারুণ এক জায়গায় ফ্রি-কিক পায় ভারত। ৮৬ মিনিটে এক বিশ্বমানের বাঁক খাওয়ানো ফ্রি-কিকে ভারতকে এগিয়ে দেন সুনীল ছেত্রী।
তবে মাত্র দুই মিনিট থাকে সেই লিড। ৮৮ মিনিটে কর্ণার থেকে ভারতের খারাপ রক্ষণের সুযোগ নিয়ে প্রথম পোস্টে দুর্ধর্ষ এক হেডারে আফগানদের হয়ে সমতা ফেরান হায়দার আমিরি। তাঁকে কেউই ঠিকঠাক মার্ক না করায় ফ্রি-হেডার মারার সুযোগ পেয়ে গোল করতে ভুল করেননি আমিরি। তবে নাটক কিন্তু এখনও শেষ হয়েছিল না। ম্যাচ যখন ড্র হবে ভেবে ভারতীয় দলকে হতাশ দেখাচ্ছিল। ঠিক তখনই সুনীলের জায়গায় মাঠে নামা সাহাল আব্দুল সামাদ ঠান্ডা মাথায় অসাধারণ এক ফিনিশে ভারতকে আবারও এগিয়ে দেন। পাস আসে আশিকের পা থেকে।
৯২ মিনিটে সাহালের গোলের পর উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে যুবভারতী। তাঁকে জরিয়ে উল্লাসে মাতে গোটা ভারতীয় দল। শেষমেশ ২-১ ম্যাচ জিতে নেয় ভারত। একটি গোল না করলেও, এই ম্যাচে ভারতের হয়ে সেরা খেলোয়াড় কিন্তু আশিক কুরুনিয়ানই। অক্লান্ত পরিশ্রম ও দারুণ দক্ষতার প্রদর্শন করে কোচের ভরসার মান রাখলেন তিনি। ম্যাচ শেষের বাজতেই অবশ্য মাঠে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে দুই দল, যা আবারও এই ম্যাচের ফলাফলের গুরুত্বটা বুঝিয়ে দেয়। ভারতের পরের ম্যাচ হংকংয়ের বিরুদ্ধে ১৪ জুন।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।