এই বারও লিগ শিল্ড জিততে পারেনি এটিকে মোহনবাগান। আইএসএল তালিকার তিনেই শেষে করতে হয়েছে এটিকে মোহনবাগানকে। তবে কিছু নজির সবুজ-মেরুন ব্রিগেড তাদের লিগ পর্বে করেছে।
এর আগেও কলকাতার এটিকে মোহনবাগান তাদের প্রথম দুই মরশুমে সেরা চারে ছিল। সেই ধারাই বজায় রাখল এটিকে মোহনবাগানও।
এ বছর টানা ১৫টি ম্যাচে অপরাজিত ছিল তারা। কিন্তু লিগ পর্বের শেষ ম্যাচে তাদের সেই ধারাবাহিকতা ব্যহত হয়। তবে টানা ১৫ ম্যাচে অপরাজিত থাকার নজির যুগ্ম ভাবে তারা গড়েছে। এর আগে এফসি গোয়া টানা ১৫ ম্যাচে অপরাজিত থেকে এই রেকর্ড গড়েছিল, যা ছুঁল এটিকে মোহনবাগান। এফসি গোয়া যখন এই রেকর্ড গড়ে, তখনও (২০২০-২১) তাদের কোচ ছিলেন যিনি, সেই স্পেনের জুয়ান ফেরান্দোর প্রশিক্ষণেই এই নজির ছুঁয়ে ফেলল সবুজ-মেরুন শিবির।
চলতি মরশুমে তারা মাত্র তিনটি ম্যাচে হেরেছে। গত মরশুমে তারা চারটি ম্যাচে হার মেনেছিল। এ বার সবচেয়ে কম হারের সেই নজির ভেঙে যুগ্মভাবে নতুন নজির গড়ল তারা। জামশেদপুরও তিনটি ম্যাচই হেরেছে। আর হারার জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়ে তারা এ বার ১২ পয়েন্ট অর্জন করেছে, যা বেঙ্গালুরু এফসি-র সঙ্গে সমান।
প্রথম আন্তোনিও লোপেজ হাবাস ও পরে ফেরান্দোর প্রশিক্ষণাধীন কলকাতার দল এ বার সাতটি ম্যাচে ড্র করেছে, যা যুগ্ম ভাবে দ্বিতীয়। কেরালা ব্লাস্টার্সও সাতটি ম্যাচে ড্র করেছে এ বারের লিগে। ড্রয়ের সংখ্যার দিক থেকে সবার ওপরে রয়েছে এসসি ইস্টবেঙ্গল (৮)। হারের দিক থেকেও সবার ওপরে তারা।
লিগ পর্বে মোট ৩৭টি গোল করেছে এটিকে মোহনবাগান। যা হায়দরাবাদ এফসি (৪৩), জামশেদপুর এফসি-র (৪২) পরেই তিন নম্বরে। এই ৩৭টি গোলের মধ্যে ২৮টিই তারা করেছে ওপেন প্লে থেকে এবং ন’টি হয়েছে থ্রু পাস থেকে। ওপেন থেকে এতগুলো গোল আর কোনও দল এ বারের লিগে করতে পারেনি। থ্রু পাস থেকে করা গোলেও সবুজ-মেরুন শিবিরই সেরা।
তবে সেটপিস থেকে করা গোলের দিক থেকে একেবারে নীচের দিকে রয়েছে জুয়ান ফেরান্দোর দল। সেটপিস থেকে দশেরও কম গোল করেছে যারা এমন পাঁচটি দলের মধ্যে রয়েছে এটিকে মোহনবাগান। সেরা চারটি দলের মধ্যে তারাই সেটপিস থেকে সবচেয়ে কম গোল করেছে।
সেমিফাইনালে উঠলেও সেটপিসে অক্ষমতার চেয়েও একটি বড় নেতিবাচক দিক দেখা গিয়েছে এটিকে মোহনবাগানের। লিগ পর্বে সবচেয়ে বেশি লাল কার্ড তাদের ফুটবলাররাই দেখেছেন। মোট তিনটি লালকার্ড দেখেছে তারা। লাল কার্ড দেখেছেন দীপক টাঙরি, প্রবীর দাস ও রয় কৃষ্ণা।
নেতিবাচক থেকে বরং ইতিবাচক দিকে ফেরা যাক। এ বারের হিরো আইএসএলে ভারতীয়দের দ্বারা হওয়া সবচেয়ে বেশি গোল এটিকে মোহনবাগানেরই। সব মিলিয়ে ১৯টি গোল করেছেন দলের ভারতীয়রা। আর কোনও দলের ভারতীয় ফুটবলাররা এত গোল করতে পারেননি। ২০১৮-১৯ মরশুমে বেঙ্গালুরু এফসি দলের ভারতীয় ফুটবলাররা ২০টি গোল করেছিলেন। সেই নজির ছুঁতে আর একটি গোল বাকি এবং বাকি দুই বা তিনটি ম্যাচে লিস্টন কোলাসো, মনবীর সিংরা নতুন নজির গড়তে পারেন কি না, সেটাই দেখার।
এখনও পর্যন্ত ক্লাবের সর্বোচ্চ গোলদাতা লিস্টন করেছেন আটটি গোল। মনবীর সিং করেছেন ছ’টি গোল। নবাগত স্ট্রাইকার কিয়ান নাসিরি করেছেন তিনটি গোল। শুভাশিস বোস ও প্রীতম কোটাল একটি করে গোল করেছেন। শুধু গোল করা নয়, করানোর দিক থেকেও এগিয়ে সবুজ-মেরুন শিবিরের ভারতীয়রা। এ পর্যন্ত মোট দশটি ‘অ্যাসিস্ট’ করেছেন তাঁরা। অর্থাৎ, দেখা যাচ্ছে, ক্লাবের ২৯টি গোলে ভারতীয় ফুটবলারদের অবদান রয়েছে। অন্য কোনও দলের ভারতীয় ফুটবলারদের এত বেশি গোলে অবদান নেই।
ফিনল্যান্ডের ইউরো দলের সদস্য জনি কাউকো দলের সবচেয়ে বেশি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন। তিনি মোট ৬টি গোলে অ্যাসিস্ট করেছেন। সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের তালিকায় তিনি আপাতত রয়েছেন পাঁচ নম্বরে। সবচেয়ে বেশি অ্যাসিস্ট করেছেন জামশেদপুর এফসি-র গ্রেগ স্টুয়ার্ট। সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টের তালিকায় প্রথম দশে রয়েছেন এটিকে মোহনবাগানের তিনজন, কাউকো, হুগো বুমৌস (৫) ও রয় কৃষ্ণা (৪)। গোলের সুযোগ তৈরির ক্ষেত্রে সবার ওপরে রয়েছেন লিস্টন কোলাসো, যিনি লিগ পর্বে ৭৩ বার গোলের চেষ্টা করেছেন। গোলে সর্বোচ্চ শটের দিক থেকে লিস্টন (২৮) রয়েছেন দু’নম্বরে, কেরালা ব্লাস্টার্সের আলভারো ভাসকেজের (৩০) পরেই।
সবচেয়ে বেশি গোল বাঁচিয়েছেন এটিকে মোহনবাগানেরই গোলরক্ষক অমরিন্দর সিং। তিনি লিগ পর্বে ৫৫টি সেভ করেছেন। এই তালিকায় দু’নম্বরে হায়দরাবাদ এফসি-র লক্ষ্মীকান্ত কাট্টিমণি (৪৮)।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।