সেই কলঙ্কিত অধ্যায়ের প্রায় ৫০ বছর হতে চলল। কিন্তু এখনও সেই দিনটার কথা ভুলতে পারেন না সুব্রত ভট্টাচার্য। ১৯৭৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর আইএফএ শিল্ডের ফাইনালে ইস্টবেঙ্গলের কাছে ৫-০ গোলে হারের পর খেলোয়াড় ও কোচ হিসেবে প্রিয় মোহনবাগানকে অনেক ম্যাচে জিতিয়েছেন, অনেক ট্রফি এনে দিয়েছেন। কিন্তু আজও সেই হাহাকার, সেই হারের প্রতিশোধ নিতে না পারার যন্ত্রণা কুরে-কুরে খায় মোহনবাগানের 'ঘরের ছেলে'-কে। একবার ইস্টবেঙ্গলকে ৫-৩ গোলে মোহনবাগান হারালেও ১৯৭৫ সালের হারের গ্লানি এখনও ভুলতে পারেন না সুব্রত।
সেই কলঙ্কিত দিনে মোহনবাগানের ঠিক কী হয়েছিল? কেন এরকম দশা হয়েছিল মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের? কীভাবে সুব্রতের রক্ষণ ভেদ করে পাঁচ-পাঁচটা গোল করেছিল ইস্টবেঙ্গল? তা আজও ভাবায় মোহনবাগানের প্রবীণ সমর্থকদের। তবে সেদিন ঠিক কী হয়েছিল মোহনবাগানের, কী কী সমস্যা হয়েছিল, তা আত্মজীবনীতে জানালেন সুব্রত। তাঁর মতে, সেদিন মাঠের বাইরে মোহনবাগান এমন দুটি কাজ করেছিল, যা বড় বিপদ ডেকে এনেছিল। সেইসঙ্গে কোচ অরুণ ঘোষের জেদ তথা স্বজনপোষণকেও কিছুটা দায়ী করেছেন সুব্রত।
আত্মজীবনী ‘ষোলো আনা বাবুল- বিতর্কিত আত্মজীবনী’-তে সুব্রত লিখেছেন, সেই বছর লিগের ম্যাচে ইস্টবেঙ্গলের কাছে এক গোলে হারলেও আইএফএ শিল্ড ফাইনালের আগে ভালো ছন্দে ছিল মোহনবাগান। ফলে ইস্টবেঙ্গলকে হারিয়ে ঘরে শিল্ড তোলার আশায় বুক বাঁধছিলেন সবুজ-মেরুন সমর্থকরা। সেই আবহের মধ্যেই ডার্বির দু'তিনদিন আগে মোহনবাগানের সব খেলোয়াড়দের ডায়মন্ড হারবারে পাঠিয়ে দিয়েছিল ক্লাব কর্তৃপক্ষ।
কিন্তু আচমকা কেন সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল? সুব্রত জানিয়েছেন, সেইসময় ধীরেন দে নাকি খবর পেয়েছিলেন যে টানা চারটি মরশুমে লিগ এবং শিল্ড জয়ের নজির গড়তে কয়েকজন মোহনবাগান খেলোয়াড়কে ‘ম্যানেজ’ করতে পারে ইস্টবেঙ্গল। সেই আশঙ্কা থেকেই পুরো মোহনবাগান টিমকে ডায়মন্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি লুকিয়ে-লুকিয়ে অনুশীলনের পরিকল্পনাও ছিল মোহনবাগানের।
সেইমতো শিল্ড ফাইনালের আগে ডায়মন্ড হারবারের একটি হোটেলে মোহনবাগানের খেলোয়াড়রা থাকছিলেন বলে স্মৃতিচারণা করেন সুব্রত। তিনি জানিয়েছেন, যেদিন শিল্ড ফাইনাল ছিল, সেদিন সকালে ডায়মন্ড হারবার থেকে লাক্সারি বাসে করে মোহনবাগানের খেলোয়াড়দের কলকাতায় নিয়ে আসা হয়েছিল। ফলে ম্যাচের আগে কয়েক ঘণ্টা পা ঝুলিয়ে বাসে বসেছিলেন মোহনবাগান খেলোয়াড়। যা মস্ত বড় ভুল ছিল বলে অভিমত সুব্রতের। আর মাঠের বাইরে তাঁরা যে দ্বিতীয় ভুলটা করেছিলেন, সেটা হল যে ডায়মন্ড হারবার থেকে কলকাতায় ফিরে তাঁরা এক মোহনবাগান সমর্থকের বাড়িতে ভাত-মাংস খেয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: ১৯ বছর পরে Durand Cup Final-এ ফের কলকাতা ডার্বি! দেখে নিন কোন পথে ফাইনালে উঠল দুই প্রধান
সুব্রতের মতে, দীর্ঘক্ষণ পা ঝুলিয়ে বাসে করে আসায় মাঠে খেলার সময় মোহনবাগান ফুটবলারদের পা ভারী হয়ে গিয়েছিল। আর ভাত-মাংস খেয়ে কলকাতা ডার্বিতে খেলতে নামায় মাঠে ফুটবলারদের মধ্যে একটা আলস্য ভাব তৈরি হয়েছিল। পা চলছিল না। নিজের স্বাভাবিক ছন্দে খেলতে পারছিলেন না। আর সেটার সম্পূর্ণ সদ্ব্যবহার করেছিল লাল-হলুদ। যদিও সুব্রতের মতে, সেদিন ইস্টবেঙ্গল দারুণ কিছু খেলেনি। মোহনবাগান এতটাই জঘন্য খেলেছিল যে ১৯৭৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর গঙ্গাপাড়ের ক্লাবকে সেই কলঙ্কের মুখে পড়তে হয়েছিল।
সেটা ছাড়াও সেদিনের ম্যাচে মোহনবাগান কোচ অরুণ ঘোষ একটি ট্যাকটিকাল ভুল করেছিলেন বলে মনে করেন সুব্রত। আত্মজীবনীতে সুব্রত লিখেছেন যে সেদিন তরুণ এবং অনভিজ্ঞ গোলকিপার ভাস্করকে খেলিয়ে বড় ভুল করেছিলেন মোহনবাগানের কোচ। নিয়মিত গোলকিপার প্রশান্ত মিত্র ফিট থাকলেও (সেমিফাইনালে ফুড পয়জনের জন্য খেলতে পারেননি) ভাস্করকে নামানোর জেদ করেছিলেন। সুব্রতের আপত্তি থাকলেও শেষপর্যন্ত গোলে ভাস্করকেই রেখেছিলেন কোচ। আর জীবনের প্রথম বড় ম্যাচে প্রথম চারটি গোলের মধ্যে তিনটিই ভাস্করের হাত ফসকে হয়েছিল বলে দাবি করেছেন সুব্রত।
তবে ভাস্করকে দোষারাপ করেননি মোহনবাগানের ঘরের ছেলে বাবলু। বরং আত্মজীবনীতে সুব্রত লিখেছেন, ‘ভাস্করকে কোনও দোষ দেব না। তখন ওর খুব কম বয়স। অবনী বসুর ছাত্র। তাঁর প্রভাবেই মোহনবাগানে এসেছিল। অরুণদা আবার অবনী বসুর বন্ধু ছিলেন। ভাস্করকে অতিরিক্ত ভালোবাসা দেখাতে গিয়ে অরুণদা সেদিন টিমকে ডুবিয়েছিলেন।’ যদিও সেইসঙ্গে সুব্রত স্বীকার করে নিয়েছেন যে সেই কলঙ্কিত দিনে মোহনবাগানের প্রত্যেকে খারাপ খেলেছিলেন।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।