ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব ফুটবলে খেলতে গিয়েও মাঠে নামতে পারেননি তিনি। হঠাৎ চোট পেয়ে যাওয়ায় তাঁর খেলার সম্ভাবনা কার্যত শেষ হয়ে যায়। শুধু চোটই নয়, যে কোচের পছন্দে ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব সিবেনিক সন্দেশ ঝিঙ্গনকে নিয়ে যায়, সেই কোচও হঠাৎ দায়িত্ব ছেড়ে চলে যান। ফলে ইউরোপিয়ান ফুটবলে অভিজ্ঞতা অর্জনের স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যায় ভারতীয় তারকা ডিফেন্ডারের। চলতি হিরো আইএসএলেও খেলা হয়ে ওঠেনি তাঁর। ক্রোয়েশিয়া থেকে ফিরে এটিকে মোহনবাগানে যোগ দিলেও এখনও মাঠে নামার সুযোগ পাননি তিনি।
ফুটবল জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নিয়ে অবশ্য বিন্দুমাত্র আক্ষেপ নেই পাঞ্জাবের এই ফুটবলারের। ভারতীয় ফুটবল মহলে অনেকে তাঁর এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করলেও তিনি বলেছেন, ‘ওখানে যা যা হয়েছে, সে জন্য আমার কোনও আক্ষেপ নেই। কারণ, আমি সব কিছুই দিয়েছিলাম। কিন্তু যেটা হওয়ার নয়, সেটা হয় না। সে যতই পরিশ্রম করো বা যত ভাল ভাবেই পরিকল্পনা করো।’
গত অগস্টে মলদ্বীপে এএফসি কাপে খেলতে যাওয়ার আগেই সন্দেশ ক্লাবকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব ফুটবলে খেলতে যাচ্ছেন, তাই এই মরশুমে এটিকে মোহনবাগানের হয়ে খেলতে পারবেন না। তাতে ক্লাব আপত্তি করেনি। তাঁকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।
কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার ক্লাব এইচএনকে সিবেনিকে তাঁর সময় খুব একটা ভালো কাটেনি। অনুশীলনে দ্বিতীয় দিনই চোট পান তিনি। গত তিন মাসে আরও তিন বার তাঁর পায়ের পেশীতে চোট লাগে। তাই ওই ক্লাবের হয়ে মাঠে নামা হয়নি তাঁর। এর মধ্যেই কলকাতার ক্লাব তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। তাই দেশে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত নেন সন্দেশ।
ক্রোয়েশিয়ার অভিজ্ঞতা নিয়ে সন্দেশ বলেছেন, ‘জীবনে সব কিছুই এক একটা অভিজ্ঞতা। ওখানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম নিজের কমফর্ট জোন থেকে বেরোবার জন্য। তাই কোন দিকে যাচ্ছি, তা জেনেশুনেই ওখানে গিয়েছিলাম। ক্রোয়েশিয়ান খেলোয়াড়দের কাছ থেকে কী কী শেখা যেতে পারে এবং দলকে কী ভাবে সাহায্য করতে পারি, সেই নিয়ে কোচের সঙ্গে কথা বলেছিলাম। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনই অপ্রত্যাশিত ভাবে চোট পেয়ে যাই।’
১৩ মাস মাঠের বাইরে থাকার পরে গত মরশুমের আগে এটিকে মোহনবাগানের সঙ্গে পাঁচ বছরের চুক্তিতে সই করেন সন্দেশ। সবুজ-মেরুন জার্সি গায়ে ২২টি ম্যাচ খেলেন। সারা মরশুমে ৫২টি ট্যাকল, ২৬টি ইন্টারসেপশন, ১১৯টি ক্লিয়ারেন্স ও ৪০টি ব্লকের হিসেব জমা হয় তাঁর পারফরম্যান্সের খতিয়ানে। সারা মরশুমে মাত্র দু’বার হলুদ কার্ড দেখেন। কোনও লাল কার্ড ছিল না। এতটাই পরিচ্ছন্ন ফুটবল খেলেন তিনি। দলের নেতৃত্বের দায়িত্বেও ছিলেন তিনি। সবুজ মেরুন সমর্থকদের ভালবাসাই হয়তো তাঁকে ফের সবুজ-মেরুন শিবিরে ফিরিয়ে এনেছে। কিন্তু এখনও মাঠে নামার সুযোগ পাননি সন্দেশ।
ভারতে ফেরা নিয়ে সন্দেশ বলেন, ‘এখানে ফিরে আসতে পেরে আমি খুশি। সিবেনিকে যখন ম্যানেজমেন্ট বদলে গেল এবং কোচও দায়িত্ব ছেড়ে চলে গেল, তখন পরিবারের সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিই, এ বার চোটটা সারানোর জন্য আমার ফিরে যাওয়া উচিত। তাড়াতাড়ি মাঠে নামতে চাইছিলাম, কারণ সামনেই ভারতীয় দলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ রয়েছে। চোটের পরে এটিকে মোহনবাগান আমাকে খুবই সাহায্য করেছে।’
আপাতত সবুজ-মেরুন সমর্থকেরা তাঁদের প্রিয় ডিফেন্ডারকে মাঠে দেখার অপেক্ষায় রয়েছেন। বিশেষত যেখানে দলের রক্ষণের অবস্থা খুব একটা ভাল নয়। গত দশটি ম্যাচে ১৮টি গোল খেয়েছে তারা। ভারতীয় দলের নিয়মিত ডিফেন্ডারকে কবে খেলান এটিকে মোহনবাগান কোচ জুয়ান ফেরান্দো, সেটাই এখন দেখার।
রোহিতদের প্রস্তুতির রোজনামচা, পাল্লা ভারি কোন দলের, ক্রিকেট বিশ্বকাপের বিস্তারিত কভারেজ, সঙ্গে প্রতিটি ম্যাচের লাইভ স্কোরকার্ড । দুই প্রধানের টাটকা খবর, ছেত্রীরা কী করল, মেসি থেকে মোরিনহো, ফুটবলের সব আপডেট পড়ুন এখানে।