অন্য দেশের হয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় হিংসামূলক প্রচার। অথবা অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুবিধার সঙ্গে রয়েছে বেশ কিছু অন্ধকার দিক। আর সেই অন্ধকার দূর করাই নতুন কেন্দ্রীয় সাইবার নিরাপত্তা নীতির মূল উদ্দেশ্য।
ভারতের সর্বশেষ জাতীয় সাইবার সিকিউরিটি পলিসি ২০১৩ সালে নির্ধারিত হয়। তারপর গত ৮ বছরে সোশ্যাল মিডিয়া অনেকটাই বদলেছে। অথচ বদলায়নি পুরনো, অকেজো নীতি। একের পর এক বড় অশান্তি, হিংসা, দেশবিরোধী কার্যকলাপের অনুঘটক হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়াকে।
আর তা হবে নাই বা কেন। কোনও প্রত্যক্ষ বাধাহীন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। কিন্তু সঙ্গে যে রিজনেবল রেস্ট্রিকশনের অংশটি রয়েছে, তার থোড়াই কেয়ার। ফলে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়ো খবর, হিংসামূলক তত্ত্ব ছড়িয়েছে দাবানলের মতো। পরিস্থিতি এমনই যে কোনও স্থানে অশান্তি ছড়ালেই আগে ইন্টারনেট শাট ডাউন করে সোশ্যাল মিডিয়া বন্ধ করে পুলিস-প্রশাসন।
'সবদিক খতিয়ে নতুন নীতিগুলো স্থির করা হয়েছে। আগের সমস্ত খামতি পূরণের চেষ্টা করা হয়েছে। তাছাড়া পরিকাঠামো উন্নয়ন ও পুরনো নীতিটার একটা আপডেট ভীষণই জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছিল,' জানালেন নতুন নীতির উপর কাজ করা এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক।
প্রায় ৫০ পৃষ্ঠার এই সাইবার সিকিউরিটি পলিসি ২০২১-এ কী থাকছে কী থাকছে না? সেটা অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর দফতরের সবুজ সংকেতের পরেই জানা যাবে। তবে, আপাতত এই নীতি নির্ধারণের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা কিছু তথ্য দিয়েছেন হিন্দুস্তান টাইমসকে। দেখুন কী জানিয়েছেন তাঁরা...
গত দুই বছরে ভারতে বেশ বড়সড় কয়েকটি সাইবার হানা হয়েছে। গত ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ায় উত্স এমন একটি সাইবার হানার লক্ষ্য ছিল কুদানকুলাম পারামাণবিক বিদ্যুত্ প্রকল্প ও ইসরো। তাছাড়া চলতি সপ্তাহেই মুম্বইয়ের বিদ্যুত্ বিভ্রাটের পেছনে চিন ও অন্যান্য কয়েকটি রাষ্ট্রের সাইবার হানার যোগ খুঁজে পেয়েছে মুম্বই পুলিস।
গত মাসেই বিভিন্ন সরকারি ডোমেইনের ই-মেল অ্যাড্রেস ব্যবহার করে সাইবার হানা চালায় হ্যাকাররা। এর ফলেই সরকারি সার্ভারগুলির বলগাহীন দশা প্রকাশ্যে চলে আসে। যে কোনও মুহূর্তে দেশের নাগরিক, সম্পদ, অর্থনীতি সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ গোপন তথ্য চলে যেতে পারে হ্যাকারদের হাতে।
কোনও দেশের নাম না করেই এক সরকারি আধিকারিক জানালেন, 'আমরা জানি কোন দেশ বা সংগঠন এই ধরণের সাইবার হানার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশের হয়ে অনেকে এই ধরণের কাজ করছেন।'
আধিকারিকের মতে, এই মুহূর্তে পরিস্থিতি যথেষ্ট উদ্বেগজনক। হ্যাকারদের দক্ষতাও সময়ের সঙ্গে বেড়ে চলেছে। তারা আমাদের পরিকাঠামো নষ্ট করে দিয়ে দেশের মানুষকে চাপে ফেলতে চায়।
সাইবার বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনার পরেই এই নীতিগুলি নির্ধারণ করা হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের পথেই সাবধানতা অবলম্বন করতে চলেছে ভারত।
এছাড়া নয়া নীতিতে সোশ্যাল মিডিয়ায় ন্যারাটিভ অর্থাত্ হিংসামূলক তত্ত্ব ছড়ানোর বিরুদ্ধেও নেওয়া হচ্ছে কড়া ব্যবস্থা। ভুয়ো খবর, প্ররোচনামূলক মেসেজ, মিথ্যা ছবি ও ভিডিয়োর বিরুদ্ধে দ্রুত ও কড়া পদক্ষেপ করা হবে। 'আমাদের জনসংখ্যার একটা বড় অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় অ্যাকটিভ, তাই এক্ষেত্রে নজরদারির গুরুত্ব অপরিসীম।'
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিয়মিত কাজ করে এমন সরকারি বা বেসরকারি সংস্থাগুলিকে এবার থেকে নিজস্ব সাইবার সেল তৈরী করার প্রয়োজনীয়তা হতে পারে নয়া নীতিতে। নিজের ও নিজের ক্লায়েন্টদের সাবধান রাখতে তা করা প্রয়োজন বলে জানালেন আধিকারিকরা। নীতি নির্ধারণ ও প্রণয়নের মাধ্যমে সামাজিক মাধ্যমে শান্তি বজায় রাখা সহজতর হবে বলে অনুমান তাঁর।