ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষের একাদশী তিথিকে আমলকী একাদশী বলা হয়। এই একাদশীর অপর একটি নাম রঙভরনী একাদশীও। তবে এই একাদশীর দিনক্ষণ সম্পর্কে অনেকের মনে ভ্রান্তি রয়েছে। অনেকের ধারণা ২৪ মার্চ একাদশী আবার কারও কারও মতে ২৫ মার্চ পালিত হবে আমলকী একাদশী ব্রত।
কবে আমলকী একাদশী?
জ্যোতিষাচার্যদের মতে, উদয়া তিথিতে একাদশী ব্রত পালিত হয়। ২৪ মার্চ সকাল ১০টা ২৩ মিনিট পর্যন্ত দশমী, তার পর একাদশী তিথি আরম্ভ হবে, থাকবে ২৫ মার্চ সকাল ৯টা ৪৭ মিনিট পর্যন্ত। এর পর দ্বাদশী তিথি শুরু হবে। তাই ২৫ মার্চ উদয়া তিথিতে একাদশী ব্রত পালিত হবে।
আমলকী একাদশী ২০২১-এর শুভক্ষণ:
একাদশী ব্রতভঙ্গের সময়- ২৬ মার্চ সকাল ৬টা ১৮ মিনিট থেকে ৮টা ২১ মিনিট পর্যন্ত।
অভিজীত মুহূর্ত- দুপুর ১২টা ০৮ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ৫৬ মিনিট পর্যন্ত।
অমৃতকাল- রাত ৯টা ১৩ মিনিট থেকে রাত ১০টা ৪৮ মিনিট পর্যন্ত।
ব্রহ্ম মুহূর্ত- সকাল ৪টা ৫৩ মিনিট থেকে সকাল ৫টা ৪১ মিনিট পর্যন্ত।
আমলকী একাদশী ব্রত কথা:
প্রাচীনকালে চিত্রসেন নামক রাজার রাজত্ব ছিল। তাঁর রাজ্যে একাদশী ব্রতর অধিক গুরুত্ব স্বীকার করা হত। তাঁর রাজ্যের সমস্ত প্রজা একাদশী ব্রত পালন করতেন। অন্য দিকে রাজার মনে আমলকী একাদশীর প্রতি অসীম শ্রদ্ধা ছিল। একদিন শিকার করতে গিয়ে জঙ্গলে অনেক দূর এগিয়ে যান রাজা। সেখানে কিছু ডাকাতদের কবলে পড়েন তিনি। অস্ত্র দিয়ে রাজাকে আক্রমণ করতে শুরু করে ডাকতরা। কিন্তু রাজার ওপর যে অস্ত্রই প্রয়োগ করা হোক না কেন, সে সবই ফুলে পরিণত হতে শুরু করে।
বিপুল সংখ্যক ডাকাতদের মোকাবিলা করতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে যান রাজা। সে সময় রাজার শরীর থেকে একটি দৈব শক্তি প্রকট হয় ও ডাকাতদের বিনাশ করে পুনরায় অদৃশ্য হয়ে যায়। জ্ঞান ফিরলে রাজা দেখেন সমস্ত ডাকাত মৃত পড়ে রয়েছে। রাজা আশ্চর্যচকিত হয়ে যান। তখন আকাশবাণী হয়, ‘হে রাজা! এই সমস্ত রাক্ষস তোমার আমলকী একাদশীর ব্রতর প্রভাবে মারা গিয়েছে। তোমার শরীর থেকে উৎপন্ন আমলকী একাদশীর বৈষ্ণবী শক্তি এদের সংহার করেছে। এদের বধ করে সেই শক্তি পুনরায় তোমার শরীরে প্রবেশ করেছে। এই কথা শুনে রাজা প্রসন্ন হন এবং নিজের রাজ্যে ফিরে গিয়ে একাদশীর মাহাত্ম্য প্রচার করেন।’
কী ভাবে উৎপত্তি আমলকী গাছের:
বিষ্ণু পুরাণ অনুযায়ী বিষ্ণুর মুখ থেকে একবার চন্দ্রের সমান বিন্দু প্রকট হয়ে পৃথিবীতে গিয়ে পড়ে। সেই বিন্দু থেকেই আমলকী গাছের উৎপত্তি হয়। বিষ্ণুর মুখ থেকে উৎপন্ন আমলকীর বৃক্ষকে সর্বশ্রেষ্ঠ বলে মনে করা হয়। প্রচলিত আছে, এই ফলের স্মরণ মাত্রেই রোগ ও তাপ নাশ হয় এবং শুভফল লাভ করা যায়। আমলকী বিষ্ণুর অধিক প্রিয়। এই ফল খেলে তিন গুণ শুভ ফল লাভ করা যেতে পারে।
উল্লেখ্য, আমলকী একাদশীর দিনে আমলকী গাছের পুজো করা হয় এবং অনেকে উপবাস রাখেন। ধর্মীয় ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী, এই ব্রত ব্যক্তিকে রোগ মুক্ত করে।