নরক চতুর্দশীতে অকাল মৃত্যু থেকে মুক্তি এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য পূজা করা হয়। একটি পৌরাণিক বিশ্বাস অনুসারে, ভগবান শ্রী কৃষ্ণ কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশীতে নরকাসুরকে বধ করেন ।আসুন জেনে নেওয়া যাক এ বছর নরক চতুর্দশী কবে।
নরক চতুর্দশী দীপাবলির এক দিন আগে এবং ধনতেরসের একদিন পরে উদযাপিত হয়। তবে এবার নরক চতুর্দশী ও দীপাবলি একই দিনে পালিত হবে। এটি ছোট দিওয়ালি, রূপ চৌদাস, নরকা চৌদাস, রূপ চতুর্দশী বা নরকা পূজা নামেও পরিচিত। এই দিনে মৃত্যুর দেবতা যমরাজ ও শ্রীকৃষ্ণের পূজা করার বিধান রয়েছে। রূপ চৌদ্দের দিন সন্ধ্যায় প্রদীপ জ্বালিয়ে চারপাশ আলোকিত করা হয়।
পঞ্চাং অনুসারে, কার্তিক কৃষ্ণপক্ষের চতুর্দশী তিথি ২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা ০৬.০৩ টা থেকে শুরু হচ্ছে। অন্যদিকে চতুর্দশী তিথি শেষ হবে ২৪ অক্টোবর বিকেল ৫টা ২৭ মিনিটে। এমন পরিস্থিতিতে আগামী ২৫ অক্টোবর উদয় তিথি অনুযায়ী নরক চতুর্দশী পালিত হবে।
নরকাসুর পুরাণ অনুসারে, পৃথিবীর গর্ভ থেকে জন্মগ্রহণকারী এক বিখ্যাত অসুর ছিলেন, যাকে বলা হয় বিষ্ণুপুত্র। তিনি বরাহ অবতারের সময়ে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, যখন বিষ্ণু পৃথিবী রক্ষা করেছিলেন। তাই তিনি পৃথ্বীর পুত্র ছিলেন। নরকাসুর বানাসুরের সান্নিধ্যে পড়ে দুষ্ট হয়ে উঠেছিলেন, যার কারণে বশিষ্ঠ তাকে বিষ্ণুর হাতে নিহত হওয়ার অভিশাপ দিয়েছিলেন।
লঙ্কার রাজা রাবণকে হত্যা করার সময়, যেখানে জানকী (সীতা) জন্মগ্রহণ করেছিলেন সেই স্থানেই পৃথিবীর গর্ভ থেকে নরকাসুর জন্মগ্রহণ করেছিলেন। ষোল বছর বয়স পর্যন্ত রাজা জনক দ্বারা লালিত পালিত হয়েছিলেন। বিষ্ণু তাকে প্রাগজ্যোতিষপুরের রাজা করেন। নরকাসুর মথুরার রাজা কংসের অসুর বন্ধু ছিলেন।
কিছু দিন নরকাসুর ঠিকঠাক রাজত্ব করলেও বানাসুরের সাহচর্যে পড়ে সে দুষ্ট হয়ে পড়ে। এবার বশিষ্ঠ অভিশাপ দিলেন বিষ্ণুর হাতে নিহত হবে। কিন্তু নরকাসুর ব্রহ্মাকে তপোবলে সন্তুষ্ট করে এই বর পেয়েছিলেন যে, দেবতা, রাক্ষস, অসুর প্রভৃতি কেউ তাঁকে হত্যা করতে পারবে না এবং তাঁর রাজ্য চিরকাল থাকবে। নরকাসুর দেবরাজ ইন্দ্রকে জয় করে অত্যাচার শুরু করেন।
নরকাসুরের অত্যাচারে পীড়িত ইন্দ্র কৃষ্ণকে বললেন- "ভৌমাসুর (নরকাসুর) অনেক দেবতাকে হত্যা করেছে, মেয়েদের বন্দী করেছে। সে আমার 'ঐরাবত'ও নিতে চায়। আমাদের বাঁচাও." কৃষ্ণ আশ্বাস দিয়ে নরকাসুরকে আক্রমণ করেন। তিনি সুদর্শন চক্র দিয়ে তাকে দুই টুকরো করেন। ভূমি আবির্ভূত হয়ে তখন কৃষ্ণকে বললেন - "যখন তুমি আমাকে বরাহ রূপে রক্ষা করেছিলে, তখন তোমার স্পর্শে আমি এই পুত্রকে পেয়েছি। এখন তুমি নিজেই তাকে হত্যা করেছ। তুমি নরকাসুরের বংশ রক্ষা করো।" কৃষ্ণ যুদ্ধ শেষ করে বন্দী রাজকন্যাদের দ্বারকায় নিয়ে এসেছিলেন।
(উপরোক্ত তথ্য ধর্মীয় আস্থা ও লৌকিক মান্যতার উপর আধারিত)