তন্ময় চট্টোপাধ্যায়
পুরুলিয়ার কাদলাগোড়াতে হুল বিদ্রোহের নায়ক কানহোর মূর্তি ভাঙাকে কেন্দ্র করে চরমে বিজেপি – তৃণমূল কোন্দল। ঘটনায় ইতিমধ্যে গ্রেফতার হয়েছেন বৈদ্যনাথ মান্ডি নামে এক বিজেপি কর্মী। বিজেপির দাবি, লোকসভা নির্বাচনের পর বিধানসভা নির্বাচনেও হার আসন্ন বুঝে এসব করাচ্ছে তৃণমূল।
গত মঙ্গলবার পুরুলিয়ার মানবাজার থানা এলাকার কাদলাগোড়া গ্রামে পড়ে থাকতে দেখা যায় বিদ্রোহী কানহোর মূর্তি। গত ৩০ জুন মূর্তিটি বসিয়েছিল সরকার। রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর বাস ওই গ্রামে। সেখানে এমন কাণ্ডে জেলা জুড়ে শোরগোল পড়ে।
ঘটনার তদন্তে নেমে বৈদ্যনাথ মান্ডি নামে স্থানীয় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আর এই গ্রেফতারিকে হাতিয়ার করে পালটা প্রচারে নেমেছে তৃণমূল। তাদের দাবি, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কলকাতায় বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙার পর ফের একই অপরাধ করেছে বিজেপি।
মঙ্গলবার তৃণমূলের তরফে টুইটে লেখা হয়েছে, বাংলার সংস্কৃতির ওপর হামলা চালিয়ে তাকে খতম করার শপথ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ বিজেপি। প্রথমে তারা বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙেছে। তার পর পুরুলিয়ায় তারা সাঁওতাল বিদ্রোহী কানহো মুর্মুর মূর্তি ভাঙল। তৃণমূল এই ধরণের হামলার তীব্র প্রতিবাদ করে।
তৃণমূলের তরফে আরেকটি টুইটে জানানো হয়েছে, ‘আমাদের কর্মীরা পুরুলিয়ার মানুষের দোরে দোরে গিয়ে মাটি সংগ্রহ করে ওই মূর্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে।’
বিজেপির যদিও দাবি, ২০২১ সালে হার নিশ্চিত জেনে বিজেপির ভাবমূর্তি খারাপ করতে ময়দানে নেমেছে তৃণমূল।
বিজেপি সাংসদ খগেন মুর্মু বলেন, ‘আদিবাসী এলাকায় বিজেপির শক্তি কয়েক গুণ বেড়েছে। পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুর, মেদিনীপুরের মতো আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকায় লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি জয় পেয়েছে। গত ৯ বছর ধরে তৃণমূল আদিবাসীদের শুধু গল্প শুনিয়েছে। কাজের কাজ কিছুই করেনি।’
তিনি বলেন, ‘বিজেপির বিরুদ্ধে এই অপপ্রচারের পালটা বিক্ষোভ হবে। শুধু পুরুলিয়া নয়। সব জেলায় বিক্ষোভ দেখাবে বিজেপি। তৃণমূল জানে যে তাদের আর হাতে আর কয়েকটা দিন অবশিষ্ট। তাই ভাঙচুর করে ইস্যু তৈরি করতে চাইছে তারা। কোনও আদিবাসী কখনও কানহোর মূর্তি স্পর্শ করতে পারেন না।’
বিজেপির পুরুলিয়া জেলা সভাপতি বিদ্যাসাগর চক্রবর্তী বলেন, ‘বৈদ্যনাথ মান্ডিকে মানুষ সৎ ব্যক্তি বলেই চেনে। তাছাড়া একজন মানুষের পক্ষে অতবড় মূর্তি উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। ওই গ্রামে মন্ত্রী নিজে সপরিবারে থাকেন। ২৪ ঘণ্টা সেখানে পুলিশি পাহারা থাকে। কী করে একজন ব্যক্তি পুলিশের চোখ এড়িয়ে ভাঙচুর করলেন সেটাও একটা প্রশ্ন।’
হিন্দুস্তান টাইমসের তরফে মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা হলেও সম্ভব হয়নি। অন্য সংবাদমাধ্যমকে তিনি জানিয়েছেন, ‘বৈদ্যনাথ মান্ডি অপরাধের কথা স্বীকার করেছেন।’
২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ৪৯.৩ শতাংশ ভোট পেয়ে জেতেন বিজেপি প্রার্থী জ্যোতির্ময় সিং মাহাতো। পরাজিত হন প্রাক্তন সাংসদ মৃগাঙ্গ মাহাতো। তিনি ৩৪.১৯ শতাংশ ভোট পান। পুরুলিয়া লোকসভার অন্তর্গত সাতটি বিধানসভা আসনের মধ্যে মানবাজার ছাড়া বাকি প্রত্যেকটিতে এগিয়ে ছিল বিজেপি। আর ভোটের ফল বেরনোর পর মানবাজারেও তৃণমূলের জনপ্রিয়তা মাটিতে ঠেকেছে বলে দাবি জেলা বিজেপি সভাপতির।