যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় এখন রাজ্য–রাজনীতি সরগরম। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী বাংলায় এসে রাজ্য সরকারকে দায়ী করছেন। আর রাজ্য সরকার সরাসরি এই বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রের অধীন বলে পাল্টা দায় চাপিয়েছে। এমনকী রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসকে কাঠগড়ায় তুলেছেন। এই পরিস্থিতিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনা নিয়ে বেফাঁস মন্তব্য করেছেন বিজেপি সাংসদ দিলীপ ঘোষ। রবিবার ভাটপাড়ায় একটি দলীয় সমাবেশে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেন দিলীপ ঘোষ। আর তা নিয়ে পাল্টা আক্রমণ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ শান্তনু সেন।
ঠিক কী বলেছেন দিলীপ? এদিকে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি তোলার ডাক দিয়েছেন বিজেপি সাংসদ। দিলীপ ঘোষের মন্তব্যের প্রবল সমালোচনা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ–সভাপতিকে তীব্র আক্রমণ করেছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও। ভাটপাড়ায় দলীয় সমাবেশে যাদবপুর নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘এমন বিশৃঙ্খলা চলা উচিত কি? যেখানে এই রকমের সন্ত্রাসবাদী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, সমাজবিরোধী শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে, আমরা বুট দিয়ে থেঁতলে দিয়েছি। যান জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে দেখে আসুন। ওখানেও আজাদি আজাদি করা হতো। সবাইকে আজাদ করে দেওয়া হয়েছে। আজ ওখানে লেনিন, মাও সে তুং নেই। বিবেকানন্দের মূর্তি দাঁড়িয়ে রয়েছে। এই সরকার যেদিন যাবে, সেদিন যাদবপুরে বিবেকানন্দের স্ট্যাচু আর ভারত মাতাজির জয় স্লোগান হবে। কাশ্মীর ঠান্ডা করে দিয়েছি, কোথায় যাদবপুর!’
আর কী বলেছেন বিজেপি সাংসদ? ইতিমধ্যেই এই ঘটনার তদন্তে নেমে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী–সহ মোট ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। র্যাগিংয়ের জেরেই মর্মান্তিক এই পরিণতি হয়েছে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার বলেই সবাই মনে করছেন। এই আবহে দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘কোনও মূল্যে এদের ক্ষমা নেই। যেখানেই সমাজবিরোধীরা মাথা চাড়া দিয়েছে, মাথা বুট দিয়ে কুচলে দিয়েছি। বুটের লাথি মেরে জেএনইউ ঠান্ডা করে দেওয়া হয়েছে। পুলিশ কী জন্য আছে? শুধু ঘুষ নেওয়ার জন্য? কেন পুলিশ লেজ গুটিয়ে বসে আছে? বাবা–মা স্বপ্ন নিয়ে ছেলেমেয়েকে পড়াশোনা করতে পাঠান। সেখানে এমন ঘটনা।’
আরও পড়ুন: এরিয়া কমিটির কাজে অসন্তুষ্ট শীর্ষ নেতারা, রিপোর্টে এল সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা
আর কে, কি বলেছেন? দিলীপ ঘোষের এমন ভাষায় আক্রমণ মেনে নেননি কেউই। তবে বিজেপির পক্ষ থেকে কিছু বলা হয়নি। এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘দিলীপ ঘোষকে অনেকদিন সংবাদমাধ্যমে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাই তিনি বিস্ফোরক কথা বলে সংবাদমাধ্যমে জায়গা করতে চাইছে। ওঁর কথার মধ্যে দিয়ে আরএসএসের মনোভাবটা স্পষ্ট হচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে ব়্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে ওরা নয়, আসলে যাদবপুরের ওপরে রাগ, মুক্তচিন্তার ওপরে রাগ।’ এই বিষয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেনের কটাক্ষ, ‘দিলীপবাবু মনকষ্টে ভুগছেন। দলের সর্বভারতীয় সহ–সভাপতির পদ চলে গিয়েছে। দলে তাঁর গুরুত্ব বাড়াতে অন্তসারশূন্য কথাবার্তা বলছেন।’ আর জয়প্রকাশ মজুমদারের মন্তব্য, ‘উনি বলেছেন জেএনইউ–কে বুটের লাথি দিয়ে আমরা সিধে করেছি। এটা একটা সাংঘাতিক স্বীকারোক্তি।’