করোনাভাইরাস সংক্রমণের জেরে নিজের প্রিয় পোষ্য সিউ-এর থেকে সাময়িক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন ওয়েলস-এর বাসিন্দা লোরেন নাডিন (৩০)। লকডাউন না ওঠা পর্যন্ত তাই ভিডিয়ো কলের সাহায্যে বাংলায় সিউ-এর সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখছেন।
সপ্তাহে একদিন ব্রিটেনের ওয়েলস থেকে সাঁতরাগাছির ক্রেশে থাকা সিউ-এর সঙ্গে কথা বলেন নাডিন। ক্রেশের মালকিন রিষা চট্টোপাধ্যায় এই ব্যাপারে তাঁকে সাহায্য করেন। প্রতি সপ্তাহে সিউ-এর একাধিক ছবিও তাঁকে অমনলাইনে পাঠাতে হয় নাডিনকে। লকডাউন উঠে গিয়ে আন্তর্জাতিক উড়ান চালু হলে প্রিয় পোষ্যকে নিজের কাছে নিয়ে যেতে পারবেন নাডিন।
সিউ-এর সঙ্গে নাডিনের আলাপ মেঘালয়ে, ২০১৯ সালে। ওই বছর নাডিনের স্বামী ক্রিস্চিয়ান নাইট মায়ানমারের ইয়্যাংগন থেকে মোটরসাইকেলে ওয়েলস ফেরার পরিকল্পনা করেন। যাত্রাপথে তাঁরা মেঘালয়, অসম, সিকিম হয়ে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পৌঁছান। মেঘালয়ের উমসলিং গ্রামে থাকার সময় ৭-৮ মাসের কুকুরছানা সিউ-এর (খাসি ভাষায় অর্থ কুকুর) সঙ্গে তাঁদের আলাপ জমে ওঠে। শেষে তাকে দত্তক নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন ব্রিটিশ দম্পতি।
তাঁদের সঙ্গে বাইকে চেপে কলকাতায় এসে পৌঁছায় সিউ। কিন্তু তার পরেই করোনা সংক্রমণের জেরে দেশব্যাপী লকডাউন আরোপ হওয়ার ফলে শহরের এক হোটেলে তাঁরা আটকে পড়েন। এর পর ব্রিটিশ সরকারের চেষ্টায় তাঁদের দেশে ফেরার বিশেষ বিমান কলকাতায় পৌঁছনোর আগে নাডিনরা জানতে পারেন, সেই বিমানে পোষ্যদের ঠাঁই হবে না। বাধ্য হয়ে তাই সিউ-এর জন্য সাময়িক আশ্রয় খুঁজতে শুরু করেন নাডিন ও নাইট।
অনলাইনে বিস্তর খোঁজাখুঁজির পরে অনেক প্রস্তাব এলেও শেষ পর্যন্ত তাঁদের পছন্দ হয় সাঁতরাগাছির রিষা চট্টোপাধ্যায়ের ক্রেশ। ঠিক হয়, আপাতত সেখানেই সিউ-কে রেখে যাবেন তাঁরা। পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তাকে নিজেদের কাছে নিয়ে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন দম্পতি।
১৯ এপ্রিল ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের বিমানে ওয়েলস পাড়ি দেন নাডিন ও নাইট, আর সিউ থেকে যায় সাঁতরাগাছিতে। নিজের বাড়ি ফিরেও কিন্তু পুঁচকে সিউ-এর জন্য দিন-রাত কষ্ট হয় নাডিনের। সপ্তাহে বেশ কয়েক দিন তিনি রিষা চট্টোপাধ্যায়কে ফোন করে তার সম্পর্কে খবর নেন, দেখতে চান সিউ-এর ছবি। তাঁকে আশ্বস্ত করে সপ্তাহে একদিন ভিডিয়ো কলের মাধ্যমে সিউ-এর সঙ্গে নাডিনের দেখা করান রিষা।
লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে সিউ-কে ওয়েলসে নিয়ে আসার পরিকল্পনা থাকলেও তা কবে সম্ভব হবে, জানেন না নাডিন। তাঁরা চেষ্টা করছেন, সবকিছু ঠিকঠাক চললে কলকাতা থেকে পশ্চিম ইউরোপের কোনও যাত্রীর সঙ্গে যদি সিউ-কে নিয়ে আসা যায়। তবে এই মুহূর্তে সে সবই অলীক কল্পনা বলে মনে হচ্ছে ব্রিটিশ দম্পতির।