দিল্লি-হাওড়া রুট ভারতের অন্যতম ব্যস্ত রুট। সেই রুটের একাংশের জন্য বড় পরিকল্পনা করল ভারতীয় রেল। বুধবার রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানিয়েছেন, ওই রুটের সোননগর (বিহার) থেকে অন্ডাল পর্যন্ত আরও দুটি লাইন তৈরি করা হবে। অর্থাৎ আপাতত যে দুটি লাইন আছে, সেটার সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে চার (যাত্রীবাহী এবং পণ্যবাহী করিডর মিশে যাবে)। ৩৭৪.৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই পুরো প্রকল্পের মোট খরচ ধরা হয়েছে ১৩,৬০৬ কোটি টাকা। মোট তিনটি রাজ্যে (বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পশ্চিমবঙ্গ) সেই বাড়তি দুটি লাইন পাতার কাজ চলবে। পশ্চিমবঙ্গে ৪০.৩ কিলোমিটার অংশে সেই কাজ হবে। যদিও সেই পরিস্থিতিতে সোননগর থেকে ডানকুনি পর্যন্ত ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডর নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। অন্ডাল পর্যন্ত সেই ফ্রেট করিডর এসে থেমে যেতে পারে বলে ইঙ্গিতও মিলেছে।
বুধবার দেশের সাতটি মাল্টি-ট্র্যাকিং প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা। সেই বৈঠকের পর সাংবাদিক বৈঠকে রেলমন্ত্রী বলেন, 'সোননগর (বিহার) পর্যন্ত ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। সোননগর থেকে অন্ডাল পর্যন্ত অংশে চারটি লাইন তৈরি করা হবে। আপাতত ওই অংশে 'ডবল লাইন' আছে। এবার ওই রুটের পুরো অংশে চারটি লাইন তৈরি করা হবে।'
সোননগর-অন্ডাল মাল্টি-ট্র্যাকিং প্রকল্পের ইতিবৃত্ত
১) দৈর্ঘ্য: ৩৭৪.৫ কিলোমিটার।
২) খরচ: ১৩,৬০৬ কোটি টাকা।
৩) নদীর উপর গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজ: ফালগু (৬৮৬ মিটার) এবং বরাকর (৫৯৪ মিটার)।
৪) কোন রাজ্যে কত কিমি রেললাইনে কাজ হবে? রেলের তরফে জানানো হয়েছে, বিহারের দুটি জেলা গয়া এবং ঔরঙ্গাবাদে ১৩২.৬ কিমি রেলপথে সেই কাজ চলবে। ঝাড়খণ্ডে ২০১.৬ কিমি রেলপথে সেই কাজ করবে রেল (ধানবাদ, গিরিডি, হাজারিবাগ এবং কোডার্মা)। পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ৪০.৩ কিমি লাইনে সেই কাজ চলবে।
সোননগর-অন্ডাল মাল্টি-ট্র্যাকিং প্রকল্পের ফলে কী কী লাভ হবে?
১) বুধবার সাংবাদিক বৈঠকে রেলমন্ত্রী জানান, সোননগর এবং অন্ডালের মধ্যে আরও দুটি লাইন তৈরির যে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, তা দেশের অর্থব্যবস্থার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। অত্যন্ত ব্যস্ত দিল্লি থেকে কলকাতার মেন লাইনের জন্যও সেই প্রকল্প অত্য়ন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২) রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, ওই রুট দিয়ে পূর্ব ভারত, উত্তর-পূর্ব ভারত, বিহার, ঝাড়খণ্ড এবং পূর্ব উত্তরপ্রদেশের প্রচুর মানুষ যাতায়াত করেন। কেউ দিল্লিতে যান, কেউ পঞ্জাবে বা অন্যত্র যান। আবার প্রচুর পরিযায়ী শ্রমিকও ওই রুটের ট্রেন ধরে কর্মক্ষেত্রে যান। তাঁরা লাভবান হবেন। সেইসঙ্গে ঝাড়খণ্ড এবং ওড়িশার লোহা এবং কয়লার যে অঞ্চল আছে, তা আরও বিস্তৃত হতে পারবে।
৩) রেলের তরফে জানানো হয়ছে, বর্তমানে ওই রুটের আপ বা ডাউন লাইনে ৩৫টি ট্রেন চলাচল চলে। যে সংখ্যাটা ২০৫০ সালের মধ্যে বাড়িয়ে ১০০ (একটি অভিমুখে) করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
৪) দিল্লি-হাওড়া রুটে ট্রেনের যে চাপ বেড়েছে, সেটা কমবে। তার ফলে দিল্লি-হাওড়া শিল্প করিডরের লাভ হবে। সেইসঙ্গে সহজেই পশ্চিমবঙ্গ, বিহার এবং ঝাড়খণ্ড থেকে বিভিন্ন কাঁচামাল এবং শিল্পজাত দ্রব্য অন্যত্র পাঠানো যাবে।
৫) কলকাতা থেকে দিল্লির মধ্যে আপাতত ৪০টি মেল বা এক্সপ্রেস ট্রেন চলে। সোননগর-অন্ডাল মাল্টি-ট্র্যাকিং প্রজেক্টের ফলে সেই সংখ্যা কয়েক গুণ বৃদ্ধি পাবে।
ডানকুনি পর্যন্ত ফ্রেট করিডর নিয়ে সংশয়
সোননগর থেকে ডানকুনি পর্যন্ত ফ্রেট করিডরের ভবিষ্যৎ নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি রেলমন্ত্রী। তবে তিনি যা ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাতে ডানকুনি পর্যন্ত সম্ভবত ফ্রেট করিডর আসবে না। তিনি জানান, সোননগর থেকে অন্ডাল সেকশনে চারটি লাইন পাতা হবে। এটার আগের অনেক অংশেই চারটি লাইন আছে। তার ফলে হাওড়া পর্যন্ত ইস্টার্ন ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডরের সংযোগ তৈরি হয়ে যায়। বন্দরেও পৌঁছে যায়। অর্থাৎ অন্ডাল থেকে সোননগর পর্যন্ত মিসিং লিঙ্ক ছিল। অন্ডালে তিনদিক থেকে ট্রেন আসে। ওটা ‘চোক’ পয়েন্ট তৈরি হয়ে যাচ্ছিল। অর্থাৎ ভিড় বেড়ে যাচ্ছিল। সেইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, পিপিপি মডেলে অন্ডাল থেকে নতুন করে আর করিডর তৈরি করা হচ্ছে না।