করোনাভাইরাসের প্রকোপের মধ্যে রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা জারি রাখা নিয়ে আশঙ্কা তৈরি হল। ইতিমধ্যে রাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতালে কর্মরত মণিপুরের ১৮৫ জন নার্স ফিরে গিয়েছেন। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ওড়িশা, ত্রিপুরা এবং কেরালার নার্স বাড়ি ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তার জেরে রীতিমতো প্রমাদ গুনছে রাজ্যের স্বাস্থ্য মহল।
গত ৯ মে মণিপুর সরকারের তরফে ‘ট্রানজ়ট পাস’ জারি করে এ রাজ্যে কর্মরত ১৮৫ জন নার্স এবং ১৩২ জনকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে মেডিকা হাসপাতালের চেয়্যারম্যান অলোক রায় বলেন, ‘দক্ষিণ কলকাতায় আমাদের সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের ৬০ শতাংশের বেশি নার্স ভিনরাজ্যের। মণিপুরের ৭০ জন ইতিমধ্যে ফিরে গিয়েছেন। এটা গুরুতর পরিস্থিতি।’
কলকাতায় আমরি হাসপাতালগুলিতে ৯০০ জন জন নার্স কর্মরত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি নার্স উত্তর-পূর্ব ভারত, ওড়িশা এবং কর্নাটকের বাসিন্দা। রাজ্যের প্রথম বেসরকারি করোনা হাসপাতালে কর্মরত উত্তর-পূর্ব কয়েকজন ইতিমধ্যে বাড়ি ফিরে গিয়েছেন। বাকিরাও লকডাউনের পর নিজ রাজ্যে ফিরে যাবেন বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে আগাম জানিয়ে রেখেছেন।
আমরি গ্রুপের সিইও কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ড্রাস্টির হেলথ-কেয়ার চেয়ারম্যান রূপক বড়ুয়া বলেন, ‘মণিপুরের অনেক নার্স ছেড়ে গিয়েছেন। আমরা ত্রিপুরার নার্সদের কাউন্সেলিং করছি এবং তাঁদের ছেড়ে যেতে বারণ করছি। কেরালা ও কর্নাটকে জোরদারভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া চালানোর জন্য আমাদেরর মানবসম্পদ বিভাগকে নির্দেশ দিয়েছি। উত্তর-পূর্ব ভারতে যেহেতু মহামারীর কম প্রভাবে পড়েছে, সেহেতু সেখানকার নার্সরা বাড়িতে থাকতে সুরক্ষিত বোধ করছেন। কয়েকজন নার্স দাবি করেন, তাঁদের রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে দৈনিক ১,০০০ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে। দৈনন্দিন খরচের টাকাও দেওয়া হবে। পরিবারের সঙ্গে থাকতে পাশাপাশি বেশি টাকা মেলার প্রস্তাব দারুণ হওয়া উচিত।’ তিনি জানান, ত্রিপুরার কয়েকজন নার্স ইস্তফা দিলেও অধিকাংশই কিছু না জানিয়েই চলে গিয়েছেন।
শুধু মেডিকা বা আমরি নয়, রাজ্যের বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত নার্সদের একটা বড় অংশই (৬০ শতাংশের কম নয়) ভিনরাজ্যের বাসিন্দা। মূলত উত্তর-পূর্ব ভারত, ওড়িশা, ত্রিপুরা থেকে তাঁরা এ রাজ্যে আসেন। পর্যাপ্ত সুরক্ষা সত্ত্বেও সম্প্রতি একের পর এক নার্স করোনায় আক্রান্ত হওয়রা পর তাঁরা বাড়ি ফিরতে উদগ্রীব হতে পারেন বলে আগেই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষগুলি।
সেই আশঙ্কা সত্যি হওয়ায় রীতিমতো চিন্তিত রাজ্যের স্বাস্থ্য মহল। একাধিক নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানোর ফলে বাকিদের দিয়ে কোনওক্রম স্বাস্থ্য পরিষেবা জারি রাখা হচ্ছে। এরইমধ্যে একসঙ্গে এতজন নার্স নিজ রাজ্য ফিরে গেলে কীভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা দেওয়া হয়, তা নিয়ে রাতের ঘুম উড়েছে স্বাস্থ্য মহলের। চিন্তাটা আরও বেড়েছে কারণ রাজ্যের ৬৮ টি করোনা হাসপাতালের মধ্যে ৫২ টিই বেসরকারি। তার জেরে উদ্বিগ্ন রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতরও।