শুরু থেকেই বাংলার বিধানসভা ভোট কড়া মনোভাব নিল নির্বাচন কমিশন। রাজ্য প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে উপ-নির্বাচন কমিশনার সুদীপ জৈন স্পষ্ট করে দিলেন, অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ করা হবে। কোনওরকম ঢিলেম বরদাস্ত করা হবে। এমনকী কর্তব্যে ন্যূনতম গাফিলতিতেও রাজ্য প্রশাসনের কর্তা এবং পুলিশ আধিকারিকদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
বুধবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী অফিসারের দফতরে জেলাশাসক, পুলিশ সুপার, পুলিশ কমিশনারদের সঙ্গে বৈঠক করেন জৈন। সেখানে রাজ্যে ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিতভাবে আলোচনা হয়। সূত্রের খবর, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন উপ-নির্বাচন কমিশনার। যা যা কাজ বাকি আছে, তা আগামী কয়েকদিনের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছেন। যে সব অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় গ্রেফতারি পরোয়ানা আছে, তাঁদের ক্ষেত্রেও সপ্তাহদুয়েকের মধ্যে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একইসঙ্গে ২০১৬ সালের বিধানসভা ভোট এবং ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে বিভিন্ন জায়গায় যে হিংসার অভিযোগ উঠেছিল, সেই পরিসংখ্যানও তুলে ধরা হয়। সেইমতো অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৈঠকে থাকা এক উচ্চপদস্থ পুলিশ কর্তা বলেন, ‘অবাধ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন নিশ্চিত করতে সব জেলাকে কড়া হাতে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।’
সূত্রের খবর, সংশোধিত ভোটার তালিকা নিয়েও বৈঠকে বেশ কিছুটা সময় ব্যয় করেন জৈন। দ্রুত অবৈধ ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের স্পর্শকাতর এবং অতি স্পর্শকাতর বুথের পরিসংখ্যানও তুলে ধরে আলোচনা হয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তা বলেন, ‘বুধবারের বৈঠকে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং ভোটার তালিকার সংশোধনের বিষয় দুটি নিয়ে মূলত আলোচনা হয়েছে।’ সেইসঙ্গে শান্তিপূর্ণ বিধানসভা ভোটে আয়োজনের ক্ষেত্রে কোনওরকম গাফিলতি হলে কোনওরকম নমনীয়তা না দেখিয়ে কড়া ব্যবস্থার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন জৈন। সেক্ষেত্রে শো-কজ না করে সরাসরি শাস্তিও যে দেওয়া হতে পারে বলে সেরকমও ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। পুলিশের ওই কর্তা বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে কারও কর্তব্যে গাফিলতি হলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
আসন্ন বিধানসভা ভোটের আগে জৈনের এটি দ্বিতীয় বঙ্গ সফর। গত ডিসেম্বরে এসেও তিনি রাজ্যের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখিয়েছিলেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে ভোট আয়োজনের জন্য রাজ্যের স্বাস্থ্য কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক সেরেছিলেন। বৃহস্পতিবারও স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে একপ্রস্থ বৈঠক করতে পারেন জৈন। তবে বুধবারের বৈঠকে যেভাবে কড়া মনোভাব দেখিয়েছেন জৈন, তাতে এবার রাজ্যে বেশি সংখ্যক কেন্দ্রীয় বাহিনী আসতে পারে। এমনকী আগের সব রেকর্ডকেও ছাপিয়ে যেতে পারে বলে ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।