ঠাকুরনগর: সিএএ-র বিধি কার্যকর হয়েছে কয়েক সপ্তাহ হয়ে গেল। লোকসভা ভোটের আগে বাংলায় পদ্ম ফোটানোর 'বীজ' হিসেবে এই ইস্যুকে হাতিয়ার করতে চেয়েছিল বিজেপি। তবে সিএএ নামক বাউন্সারে আপাতত ব্যাট চালাতে নারাজ অনেকেই। তবে এরই মধ্যে 'প্রস্তুতি' চলছে। যে সিএএ নিয়ে ঠাকুরনগরে এত 'উল্লাস' দেখা গিয়েছিল কয়েকদিন আগেও, সেখানে এখন 'মতুয়া কার্ড' করানোর হিড়িক। ভরদুপুরেও তাই মতুয়া কার্ডের আবেদন জানাতে অনেকেই সেখানে পৌঁছে যান। আর সিএএ-মতুয়া কার্ড যোগ খোঁজার জন্যে ঠাকুরবাড়ির কিছু অনুগামীদের সঙ্গে কথা বলে হিন্দুস্তান টাইমস বাংলা। আর তাতেই উঠে এল বিস্ফোরক সব দাবি। (আরও পড়ুন: আশঙ্কায় পরিণত উল্লাস, 'বাংলাদেশের নথি দিতে পারব না', CAA নিয়ে কী বলছে ঠাকুরনগর?)
আরও পড়ুন: দুই ফুলের মাঝে 'ফেঁসে' বনগাঁ, সিএএ সংশয়ের মাঝে লোকসভা ভোটে পাল্লা ভারী কার?
অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের অফিসে বসে দু'জন ব্যক্তি তখন মতুয়া কার্ডের আবেদন গ্রহণ করছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন ছিলেন সুনীল মণ্ডল। সেই তিনি হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে বলেন, 'আমি সাধারণ কর্মচারী এখানকার। আমাদের সিএএ নিয়ে কথা বলতে বারণ করা হয়েছে। সারাবছর ধরেই কার্ডের আবেদন চলে। অবশ্য সাম্প্রতিককালে অনেক নতুন মতুয়া হয়েছে। অনেকে কার্ড করাতে আসছে। তার মধ্যে সামনে মেলা আছে, এর জন্যেও এখন অনেক বেশি লোক আসছে ঠাকুরবাড়িতে।' এরপরই মতুয়া কার্ড করতে আসা এক মধ্যবয়স্ক ব্যক্তিকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। অফিসের বাইরে দাঁড়িয়েই তিনি বলেন, 'আজকেই মতুয়া কার্ডের জন্যে আবদেন করলাম। আমি এবং পরিবারের আরও তিনজনের জন্য। তবে সিএএ-তে আবেদন করিনি। এখন সেটা কেন করব?' (আরও পড়ুন: এনআরসি-র আগে ফিরিয়ে নেওয়া হবে সিএএ-র? জানালেন শাহ)
আরও পড়ুন: পাসপোর্ট বিধি ও নাগরিকত্ব আইনে সংঘাত লাগলে কোনটি প্রাধান্য পাবে? যা বলল আদালত
এরপরই এই নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করলেন সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা এক ব্যক্তি। কিছু আগেই মহাসংঘের অফিসে ঢুকে তিনি কর্মীদের সঙ্গে কথাও বলছিলেন। সুনীল খাঁ নামক সেই বৃদ্ধ বলেন, 'এখন যারা নতুন মতুয়া কার্ড করছে, তাদের মধ্যে অনেকেই নমশূদ্র নয়। এখন সবাই মতুয়া কার্ড করাচ্ছে। আর যারা আসছে, তাদের সবাইকে করেও দেওয়া হচ্ছে। এই যে কার্ডটা আমরা করেছি, এর খবর দিল্লি পর্যন্ত গিয়েছে। তা না হলে মতুয়াকে এমনিতে কেন্দ্র বলে? এমনিতেই এখন আমাদের দাম দিচ্ছে? কত মতুয়া আছে, সেই সব খবর এখন দিল্লি যাচ্ছে। এর জন্যে মতুয়াদের জন্যে পশ্চিমবঙ্গে সহজে নাগরিক কার্ড করে দেওয়া হবে। শান্তনু ঠাকুর আমাদের কিছু দেয়নি। তবে এই একটা জিনিস, মতুয়া কার্ড করে দিচ্ছেন তিনি। শান্তনু ঠাকুরের ওই কার্ডের ওপরেই আমরা ভরসা করছি। গুজরাট, দিল্লি, মুম্বইয়ের লোকেদের মতুয়া কার্ড আমি করে দিয়েছি। তিন হাজারের বেশি, প্রায় চার হাজার। ব্রাহ্মণরা পর্যন্ত এই কার্ড করিয়েছে। আমি করিয়ে দিয়েছি ব্রাহ্মণদের মতুয়া কার্ড। মুসলিমরাও মতুয়া কার্ড করাতে চেয়েছে। তাদের বলেছি, হরিসভায় এলে মতুয়া কার্ড করে দেব। যারা হরিসভায় আসছে, সেই মুসলিমদেরও মতুয়া কার্ড করা যায়। সবাই এই কার্ড করতে পারে।' যেন 'সিএএ' যদি পাসপোর্ট হয়, তাহলে 'মতুয়া কার্ড' হল ভিসা।
আরও পড়ুন: সিএএ-র জন্য 'যোগ্যতা সার্টিফিকেট' দিতে পারবেন স্থানীয় পুরোহিত, বড় দাবি রিপোর্টে
উল্লেখ্য, সম্প্রতি সিএএ হেল্পলাইনের বরাত দিয়ে 'দ্য হিন্দু' সংবাদপত্রের একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়েছিল, সিএএ-র জন্যে যে ধর্মীয় সংশাপত্র প্রয়োজন, তা দিতে পারবেন স্থানীয় কোনও পুরোহিত। অর্থাৎ, বাংলাদেশ, পাকিস্তান থেকে আসা শরণার্থী যে হিন্দু বা উল্লেখিত ৬ ধর্মের একটির অনুসরণকারী, তা প্রমাণ করতে স্থানীয় পুরোহিতের লিখিত বয়ানই যথেষ্ঠ হবে। আর ঠাকুরনগর বা আশেপাশের বাসিন্দারা তাই সিএএ-তে আবেদন না করলেও মতুয়া কার্ড করিয়ে রাখছেন। পরবর্তীতে এই কার্ডই যেন তাদের 'সাহায্য' করবে। তবে এই মতুয়া কার্ড নিয়ে 'সংঘাত' রয়েছে ঠাকুরবাড়ির অন্দরেও। ঠাকুরবাড়ি লাগোয়া একটি ছবি প্রিন্ট করার দোকানের মালিক এই বিষয়ে বলেন, 'শান্তুনু ঠাকুরের তরফ থেকে একটি পৃথক মতুয়া কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আবার মমতাবালা ঠাকুরের থেকে আলাদা মতুয়া কার্ড দেওয়া হচ্ছে। আগে তো একটাই ছিল।'
আরও পড়ুন: 'দেড় কোটি নয়, ৩-৬ লাখ আবেদন করবেন CAA-তে', দাবি অসমের মুখ্যমন্ত্রীর, অভিযোগ NRC নিয়ে
এদিকে ঠাকুরবাড়ি লাগোয়া একটি দোকানের মালিকের ইঙ্গিত, মতুয়া সেজে অনেকেই নাগরিকত্ব পেতে চাইছেন। সাম্প্রতিককালে ঠাকুরনগরে অনেক 'নতুন ভক্ত' দেখা যাচ্ছে বলে দাবি করলেন তিনি। সেই দোকানদার হিন্দুস্তান টাইমস বাংলাকে এই বিষয়ে বলেন,'এখন এখানে অনেক নতুন মতুয়া দেখা যায়। আমি এখানে কয়েক দশক ধরে থাকি, আজ ঠাকুরবাড়ির সামনে এক ঠেলাওয়ালাকে দেখলাম। সে বলে, এখানে নাকি ১৮ বছর ধরে ব্যবসা করছে। আমি তাকে জীবনে এই প্রথমবার এখানে দেখলাম। ঠাকুরবাড়িতে আসি ছোটবেলা থেকে। আর যাদের কখনও দেখিনি, তারা এখন বলে এখানে নাকি তারা থকেন ১৮ বছর, ৩১ বছর, ৩২ বছর ধরে। আমার পাশেই একজন থাকেন। তিনি দাবি করলেন ৩২ বছর ধরে এখানেই থাকছেন। দলিলে দেখি ৪ বছর আগে জমি কেনা। কিন্তু তার দাবি, সে এখানেই থেকেছেন চিরকাল।'