রেলের ফাঁড়া যেন কাটছে না। একের পর এক দুর্ঘটনা বা বিপত্তি ঘটে চলেছে। আর সেই লম্বা তালিকায় যুক্ত হল হাওড়া-মুম্বই মেলের নাম। এবার বরাতজোরে কেউ হতাহত না এলেও যে বিপত্তি ঘটেছে, তা বড়সড় দুর্ঘটনার চেহারা নিতে পারত। কারণ শুক্রবার রাতে হাওড়া-খড়্গপুর লাইনের বীরশিবপুর স্টেশনের কাছে ট্রেনের কাপলিং খুলে যায় মুম্বই মেলের। সামনের দুটি কামরা নিয়ে খড়্গপুর স্টেশনের দিকে ছুটে যেতে থাকে ইঞ্জিন। আর ট্রেনের বাকি সব কামরাগুলি বীরশিবপুরেই থেকে যায়। প্রায় দু'কিলোমিটার যাওয়ার পরে সেই বিষয়টা বুঝতে পেরে ইঞ্জিন থামিয়ে দেন লোকো পাইলট। পুনরায় ইঞ্জিন পিছন দিকে নিয়ে আনেন। আপাতত বগি জোড়ার চেষ্টা চালাচ্ছেন রেলকর্মীরা। তবে সেই ঘটনার জেরে প্রায় রাত ন'টা থেকে স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে হাওড়া-খড়্গপুর শাখায় আপ লাইনের ট্রেন পরিষেবা।
এক যাত্রী বলেন, ‘আমি A1 কোচে ছিলাম। উলুবেড়িয়া পার করার ঠিক পরেই মারাত্মক ঝাঁকুনি অনুভূত হয়। পুরো কেঁপে ওঠে ট্রেন। তারপর দেখি যে কয়েকটি বগি নিয়ে ইঞ্জিন সামনের দিকে চলে গিয়েছে। সেরকম কোনও ক্ষতি হয়নি। তবে বড়সড় বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছি আজ।’ সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা গিয়ে দেখি যে আমাদের বগির সামনে কোনও বগি নেই। সামনে শুধু রেললাইন দেখতে পাচ্ছিলাম।’
আর সেই ঘটনার পর রেলের সুরক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন উঠে গিয়েছে। গত জুনে ওড়িশার বালাসোরে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছিল। সেই দুর্ঘটনায় প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। তারপর থেকে একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। কখনও ট্রেন লাইনচ্যুত হয়েছে। কখনও সংঘর্ষ হয়েছে দুই ট্রেনের। এই বুধবার আবার বর্ধমান স্টেশনের জলের ট্যাঙ্ক ভেঙে পড়ে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। সেই ঘটনায় উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রেল। শুক্রবার রাতে মুম্বই মেলের ঘটনাতেও উচ্চপর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে রেল সূত্রে খবর।
যদিও সেই আশ্বাসে একেবারেই সন্তুষ্ট হতে পারছেন না যাত্রীরা। এক যাত্রী বলেন, ‘যাত্রীসুরক্ষার কিছু দেখতে পাচ্ছি না। যাত্রীসুরক্ষা বলে কিছু নেই। আজকাল ট্রেনে যাওয়ার সময় কী হবে, সেটা কারও জানা নেই। আজও খুব বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। ঠাকুরের আশীর্বাদে বড়সড় কিছু হয়নি। যাতে ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা না ঘটে, সেটা রেলের দেখা উচিত। কয়েকদিন আগে চেন্নাইয়ের ট্রেনের সঙ্গে যেরকম ঘটল, আমাদের সঙ্গেও আজ সেটা হতে পারত।’