জনসংখ্যার দিক থেকে ভারতের দ্বিতীয় জনবহুল জেলা উত্তর ২৪ পরগনা। আর এই জেলা নিয়েই এখন সমস্যায় পড়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার। জেলায় দিনের পর দিন বেড়ে চলা করোনা আক্রান্তের সংখ্যা নিয়ে সম্প্রতি প্রশাসনিক বৈঠকেও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু আক্রান্তের সংখ্যাই নয়, করোনা পজিটিভ এবং মৃত্যুর হারও এই জেলায় অনেকটা বেশি। স্বাস্থ্যকর্তা ও জেলা প্রশাসনের অন্য আধিকারিকদের এই সমস্যা সমাধানের নির্দেশও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজ্যের এক স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, জনসংখ্যার নিরিখে উত্তর ২৪ পরগনায় করোনা আক্রান্তের হার ২০.৬%, যা সারা দেশের দ্বিগুণ। স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেকদিন নতুন করোনা আক্রান্তের সংখ্যার দিক থেকেও অন্যান্য জেলাকে পিছনে ফেলে দিয়েছে উত্তর ২৪ পরগনা। বৃহস্পতিবার প্রকাশিত স্বাস্থ্য দফতরের বুলেটিন অনুযায়ী, একদিনে এই জেলায় নতুন করে ৬৭৩ জন করোনা রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। যেখানে কলকাতায় নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৫৭১ জন।
উত্তর ২৪ পরগনায় ক্রমশ বেড়ে চলা সংক্রমণ কেন নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না— সাম্প্রতিক প্রশাসনিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই প্রশ্ন ছুড়ে দেন রাজ্য নগর উন্নয়ন বিভাগ ও জেলা প্রশাসনের আধিকারিক এবং জনপ্রতিনিধিদের কাছে। তাঁদের এ ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
রাজ্য নগর উন্নয়ন বিভাগের এক আধিকারিকের মতে, এই জেলায় ২৭টি পুর এলাকার মধ্যে বহু জনবহুল জায়গা রয়েছে। রয়েছে প্রচুর কারখানা, পাটকল ইত্যাদি। জেলায় ২০০ কিলোমিটারেরও বেশি সীমানা রয়েছে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে। ওই আধিকারিক স্বীকার করেছেন, জেলার কিছু কিছু এলাকায় কলকারখানা ও শিল্পাঞ্চলগুলিই করোনাভাইরাসের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিণত হয়েছে।
যদিও সংক্রমণ রোধে ইতিমধ্যে জেলার বিভিন্ন পুরসভা, থানার আধিকারিক ও মার্কেট কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলোচনায় চলছে প্রশাসনিক স্তরে। বেশ কিছু সচেতনতামূলক ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। জেলাবাসী যাতে মাস্ক পরে, বাজারে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে তা নিশ্চিত করতে উদোগী হয়েছে পুলিশ। জনবহুল এলাকায় সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে স্থানীয় ক্লাব ও স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলির সাহায্য নেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, কাজের জায়গায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে পাটকল–সহ বিভিন্ন কারখানায় সারপ্রাইজ ভিজিট করার পরিকল্পনাও করা হয়েছে রাজ্য শ্রম দফতরের পক্ষ থেকে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক জানান, উপসর্গহীন বা সামান্য উপসর্গ রয়েছে এমন করোনা রোগীদের আইসোলেশনে রাখতে জেলায় ২৬টি সেফ হোমও রয়েছে।