ভোট-পরবর্তী হিংসা মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস সরকার। তবে শাসকদলের মুখপত্রে ‘জাগো বাংলা’-র সম্পাদকীয়তে সাহসী মুখ তুলে ধরা হল। দাবি করা হল, হাইকোর্টের রায়ে মোটেও উদ্বিগ্ন নয় তৃণণূল। বরং যে ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে ১৬ জনই তৃণমূলকর্মী বলে দাবি করা হয়েছে।
শনিবার তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রের সম্পাদকীয়তে দাবি করা হয়েছে, কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের পর 'বিজেপির বড় বড় কথা নজরে আসছিল।' তৃণমূলের তরফে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব উপযুক্ত সময় মুখ খুলবে। সেই অবস্থানই বজায় আছে তৃণমূলের। সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, 'কিন্তু এইটুকু আমরা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতে পারি তৃণমূল এতটুকু উদ্বিগ্ন নয়। যেখানে ২১টি মৃত্যুর ঘটনার ১৬টিই তৃণমূলকর্মীর, কেন উদ্বিগ্ন হব আমরা? হোক তদন্ত।’
গত বৃহস্পতিবার ভোট-পরবর্তী হিংসার মামলায় কলকাতা হাইকোর্টে ধাক্কা খেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চের নির্দেশ, হত্যা, ধর্ষণ এবং মহিলাদের উপর অপরাধের মতো গুরুত্বপূর্ণ অভিযোগের তদন্ত করবে সিবিআই। এছাড়া বাকি অভিযোগের তদন্ত করবে সৌমেন মিত্র, সুমন বালা, রণবীর কুমারকে নিয়ে গঠিত তিনজনের বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট)। সিটের তদন্ত আদালতের নজরদারিতে হবে। সেজন্য সুপ্রিম কোর্টের এক অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে নিয়োগ করা হয়েছে।
কতদিনের মধ্যে তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট জমা দিতে হবে, তাও উল্লেখ করে দিয়েছে হাইকোর্ট। পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, ছ'সপ্তাহের মধ্যে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এবং সিটকে অন্তর্বর্তীকালীন তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে হবে। তদন্ত প্রক্রিয়ায় রাজ্যকে পুরোপুরি সহযোগিতা এবং ক্ষতিগ্রস্তদের অবিলম্বে ক্ষতিপূরণের নির্দেশ নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে হাইকোর্ট জানিয়েছে, নয়া ডিভিশন বেঞ্চ গঠন করা হবে। যে মামলার শুনানি হবে আগামী ২৪ অক্টোবর। পাশাপাশি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে যে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলেছিল রাজ্য সরকার, তার কোনও ভিত্তি নেই বলে জানিয়েছে হাইকোর্ট।
হাইকোর্টের রায় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ না করলেও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের বিরুদ্ধে সরাসরি পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলা হয়েছে। ‘জাগো বাংলা’-র সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, ‘জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্ট বিজেপি-র দলীয় ইস্তেহার। ইতিমধ্যেই হাইকোর্ট তার ১০ রকম ভুল ধরেছে। পরবর্তী আইনি পদক্ষেপে তা আরও নিশ্চিত হবে।’ পাশাপাশি, 'ভোট-পরবর্তী হিংসার' সময় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের হাতে ছিল বলে তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রে দাবি করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বে থাকার সময় তাদের পছন্দের পুলিশ প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন সময়ে যদি কিছু হয়ে থাকে, তার দায় রাজ্য সরকারের ঘাড়ে চাপানো হবে কেন? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেওয়ার পর থেকে পরিস্থিতি শান্ত। তবে বিজেপি-র গোষ্ঠীবাজি চলছেই।’
এমনিতে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফলাফল প্রকাশের পর যে ‘হিংসা’ ছড়িয়েছিল, তা নিয়ে কমিশনের রিপোর্টের ছত্রে ছত্রে শাসক দল তৃণমূলের সমালোচনা করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়, ‘রাজ্যের যা অবস্থা, তাতে আইনের শাসনের পরিবর্তে শাসকের আইন চলছে।’ দাবি করা হয়, বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকে রবীন্দ্রনাথের মাটিতে হিংসার শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। খুন, ধর্ষণের মতো ঘটনা ঘটেছে। মানুষকে ভিটেছাড়া হতে হয়েছে। এই ধরনের হিংসার ঘটনায় অবিলম্বে লাগাম টানতে হবে। সেই উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারলে ভারতীয় গণতন্ত্রের মৃত্যুঘণ্টা বেজে যাবে। হিংসা ছড়িয়ে পড়বে অন্য রাজ্যেও। সেইসঙ্গে রিপোর্টে সিবিআই তদন্তের সুপারিশ করা হয়। পরামর্শ দেওয়া হয়, আদালতের পর্যবেক্ষণ তদন্ত করা হোক। ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গঠন করে দ্রুত মামলার বিচারপ্রক্রিয়া শেষ করতে হবে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সেই সুপারিশ কার্যত মেনে নিলেও বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কমিশনের যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, সেই কমিটিকে সুপারিশ প্রদানের দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তাই যে রিপোর্টের যে অংশে সুপারিশ করা হয়েছিল, তা আইনের চোখে ঠিক নয়।