শুরুটা করেছিলেন, ‘হে বিধাতা, দাও দাও মোদের গৌরব দাও' দিয়ে। শেষ করলেন - 'ওরে গৃহবাসী খোল, দ্বার খোল' দিয়ে। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তির অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ৩৫ মিনিটের ভাষণে কমপক্ষে পাঁচবার উঠে এল রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সৃষ্টি।
বৃহ্স্পতিবার নিজের ভাষণে আগাগোড়া রবীন্দ্রময় ভাষণ দেন মোদী। বিশ্বভারতীর ভূয়সী প্রশংসা করেন। বলেন, ‘গুরুদেব যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়িত করার জায়গা হল বিশ্বভারতী।’ সঙ্গে জানালেন, কীভাবে আত্মনির্ভর ভারতের মূল ভিত্তি তৈরি করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। রাষ্ট্রবাদের যে ভাবনার সূচনা করেছিলেন তিনি, তা এখনও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে জানান মোদী। বলেন, 'গুরুদেব ভারতীয়দের পরম্পরার সঙ্গে বিশ্বভারতী গড়ে তুলেছিলেন, তা দেশের সহায়তা করেছে। বিশ্বভাতৃত্ব, রাষ্ট্রবাদের চিন্তায় মুখর ছিলেন তিনি। বিশ্বভারতীকে গুরুদেব যে স্বরূপ দিয়েছিলেন, তা ভারতের জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রে উদাহরণ হয়ে উঠেছে।'
বাঙালি আবেগকে হাতিয়ার করে ‘ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল’-ও শোনান। সঙ্গে জানান, ‘লোকাল ফর ভোকাল’ এবং ‘আত্মনির্ভর ভারত’-এর লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসতে আর্জি জানালেন। অনুপ্রেরণা হিসেবে রবীন্দ্রনাথের গানকে বেছে নেন। বলেন, ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তাহলে একলা চলো রে।’ একইসঙ্গে আগামী বছর ভোটের আগে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর, শহিদ ক্ষুদিরাম, প্রফুল্ল চাকী, বীণা দাস, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেরের নাম উল্লেখ করেন। তাৎপর্যপূর্ণভাবে সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর-সহ রবীন্দ্রনাথের পরিবার এবং গুজরাতের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের যোগের উপরও জোর দেন মোদী। জানান, গুজরাতে নিজের দুটি কবিতা লিখেছিলেন কবিগুরু। ‘ক্ষুধিত পাষাণ’-এর একটি অংশও গুজরাতে থাকাকালীন লিখেছিলেন বলে জানান মোদী। শুধু তাই নয়, ভক্তি আন্দোলনের সঙ্গেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে যোগসূত্র খুঁজে বের করেন তিনি। সেই রেশ ধরে চৈতন্যু মহাপ্রভু, রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব এবং স্বামী বিবেকানন্দের নামও নেন।
মোদীর বক্তব্য :
১) ‘হে বিধাতা, দাও দাও মোদের গৌরব দাও' - বিশ্বভারতীর শতবর্ষে এটাই সারাদেশের মানুষের প্রার্থনা। বিশ্বভারতীয় শতবর্ষে সারাদেশের মতো আমার গৌরব হচ্ছে। প্রত্যেক ভারতীয়ের কাছে এটা গর্বের।
২) গুরুদেব যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা বাস্তবায়িত করার জায়গা বিশ্বভারতী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তা পূরণের চেষ্টা করছে বিশ্বভারতী এবং শান্তিনিকেতন।
৩) গ্রামীণ উন্নয়নে বিশ্বভারতীর ভূমিকা প্রশংসনীয়। আদর্শ মানুষ তৈরির শিক্ষামন্দির হল বিশ্বভারতী। আদর্শ মানুষ তৈরির চেষ্টা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
৪) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে লক্ষ্য নিয়েছিলেন, তা আত্মনির্ভর ভারতের মূল ভিত্তি ছিল। কৃষি, বাণিজ্য, শিল্প, সাহিত্যকে আত্মনির্ভর দেখতে চেয়েছিলেন তিনি। সেজন্য আত্মশক্তির কথা বলেছিলেন।
৫) শহিদ ক্ষুদিরামের কথা ভাবুন। মাত্র ১৮ বছরে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। প্রফুল্ল চাকী আছেন। বীণা দাস আছেন। যিনি বাংলার ‘অগ্নিকন্যা’ হিসেবে পরিচিত। মাত্র ২১ বছরেই জেলে গিয়েছিলেন। প্রীতিলতা ওয়াদ্দের মাত্র ২১ বছরে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তাঁরা ভারতের আত্মসম্মানের জন্য মৃত্যুবরণ করেছিলেন। আজ তাঁদের থেকে প্রেরণা নিয়ে আমাদের আত্মনির্ভর ভারতের স্বপপূরণ করতে হবে।
৬) বিশ্বভারতীর নামেই দেখুন। ভারতমাতা এবং বিশ্বের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে বিশ্বভারতী।রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাবধারাকে মনে রেখে আমাদের এগিয়ে চলা উচিত। ভারতের পরম্পরা, এবং রাষ্ট্রবাদের ভাবাধারাকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে বিশ্বভারতী। তাঁর রাষ্ট্রনির্মাণের কথা আজও প্রাসঙ্গিক।
৭) এবার ঐতিহাসিক পৌষমেলা হয়নি। শতবর্ষের ইতিহাসে এই নিয়ে তৃতীয়বার এরকম হয়নি। মহামারী ‘লোকাল ফর ভোকাল’ শিখিয়েছে আমাদের। পৌষমেলাও তো বরাবরই ‘লোকাল ফর ভোকাল’-এর ছিল। এবার শিল্পীরা পৌষমেলায় আসতে পারেননি। বিশ্বভারতীর পড়ুয়াদের কাছে আর্জি, পৌষমেলায় আসা শিল্পীদের সঙ্গে কথাবার্তা বলুন। তাঁদের উৎপাদকদের সঙ্গে কথা বলুন। কীভাবে ডিজিটাল মাধ্যমে বাণিজ্য নিয়ে যাওয়া যায়। সোশ্যাল মিডিয়াকে কীভাবে ব্যবহার করা যায়, তা দেখুন। তবে গুরুদেবের স্বপ্ন পূরণ করেন। গুরুদেবের সবথেকে অনুপ্রেরণামূলক মন্তব্য তো মনে আছে - ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তাহলে একলা চলো রে।’
৮) আমাদের নয়া লক্ষ্য তৈরি করতে হবে। সেই যাত্রার পথ দেখাবে গুরুদেবের বিচার। এই শতবর্ষ যেন আমাদের নয়া উচ্চতায় নিয়ে যায়। যে স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বভারতী তৈরি হয়েছিল, সেই পথে হেঁটে বিশ্ব এবং ভারতের কল্যাণ করতে পারে। আমি এমনই আশা করছি।