দিনটা ছিল ৩০ জুন। চাটার্ড ফ্লাইটে করে দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একঝাঁক তৃণমূল কংগ্রেসত্যাগী নেতা। যোগ দিয়েছিলেন বিজেপিতে। সেই ঘটনার পাঁচ মাস কাটতে না কাটতেই রাজ্য তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষের ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’ করলেন রাজীব। তা নিয়ে ‘রয়্যাল প্যাসেঞ্জার’ খোঁচা দিলেন বিজেপি নেতা অনুপম হাজরা।
শনিবার সন্ধ্যায় বিজেপি নেতা ফেসবুকে অনুপম লেখেন, ‘প্রত্যাশা মতো চাটার্ড ফ্লাইটের একজন রয়্যাল প্যাসেঞ্জার আজ অন্য দেশে ল্যান্ড করলেন, বাকি রয়্যাল প্যাসেঞ্জারদের সন্ধান চলছে।’ পরে তা টুইটারে পোস্ট করেন।
এমনিতে কুণালের বাড়িতে আচমকা হাজির হওয়ায় রাজীবের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়। শনিবার সন্ধ্যায় 'বন্ধু ও দাদা' কুণালের পাশে দাঁড়িয়ে রাজীব জানান, উত্তর কলকাতায় এক অসুস্থ আত্মীয়কে দেখতে এসেছিলেন। সেই সময় 'দীর্ঘদিনের পরিচিত' কুণালের সঙ্গে দেখা করে যাবেন বলে ভাবনাচিন্তা করেন। সেইমতো ফোন করেন কুণালকে। ‘কাকতলীয়ভাবে’ তখন মানিকতলায় ছিলেন কুণাল। তাই নেহাতই ‘সৌজন্য সাক্ষাতের’ এসেছিলেন। রাজীবের কথায়, ‘চা খেয়ে যাব বলেছিলাম। রাজনীতি নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি, কোথায় কী প্রত্যাবর্তন, সে বিষয়েও আলোচনা হয়নি।’
কিন্তু মুকুল রায়ের তৃণমূলের প্রত্যাবর্তনের মধ্যে কুণালের সঙ্গে দেখা করা কি স্রেফ সৌজন্য সাক্ষাৎ? তাও কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা ছাড়া ও অন্যের গাড়িতে এসেছিলেন? তাও সেই বৈঠক চলেছে প্রায় দেড় ঘণ্টা? রাজীবের সাফাই, কুণালের সঙ্গে তো দেখা করেছেন ‘সহকর্মী’ তথা বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়।
যদিও সম্প্রতি নিজের ফেসবুক পোস্ট নিয়ে অনড় থেকেছেন রাজীব। বলেন, ‘এখনও বলছি যে এই বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা একটা সরকারের একমাস হয়েছে। সেখানেই যদি এক্ষুণি রাষ্ট্রপতি জারি করতে চায় বা গোঁড়া সাম্প্রদায়িকতা কোথাও দেখাতে চায় বা ধর্মীয় বিভাজন তৈরি করতে চায়, (তার বিরোধিতা করছি)। বিগত দিনে দলেও বিরোধিতা করেছি।’ সঙ্গে বলেন, ‘নীতিগত দিক থেকে আমার রিজার্ভেশন আছে, সেটা আমি দলকেও জানিয়েছি।’
দিনকয়েক আগেই রাজ্য সরকারের 'পাশে' থাকার বার্তা দিয়েছিলেন রাজীব। বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন নিয়ে বিজেপি যখন সুর চড়াচ্ছে, সেই সময় ফেসবুক পোস্টে রাজীব লেখেন, ‘সমালোচনা তো অনেক হল। মানুষের বিপুল জনসমর্থন নিয়ে আসা নির্বাচিত সরকারের সমালোচনা ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধিতা কতে গিয়ে কথায় কথায় দিল্লি, আর ৩৫৬ ধারার জুজু দেখালে বাংলার মানুষ ভালোভাবে নেবেন না। আমাদের সকলের উচিত, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কোভিড ও ইয়াস - এই দুই দুর্যোগে বিপর্যস্ত বাংলার মানুষের পাশে থাকা।’