বিজেপিতে যোগদানের পর প্রথম রাজনৈতিক সভায় পুরনো দল তৃণমূল কংগ্রেসকে আগাগোড়া আক্রমণ করলেন বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারী। মঙ্গলবার পূর্ব বর্ধমানের পূর্বস্থলিতে তখন বেলা ঢলে গিয়েছে। তবু ভাটা পড়েনি হাজির জনতার উৎসাহে। কারণ রাতারাতি তাঁরা জানতে পেরেছেন এদিনের সভায় হাজির থাকবেন শুভেন্দু। বিজেপিতে যোগদানের পর তৃণমূল তাঁকে যে ভাষায় আক্রমণ করেছে তার তিনি কী জবাব দেন তা দেখতে সভায় নজর রেখেছিল সংবাদমাধ্যমও।
এদিন শুভেন্দু স্পষ্ট করেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনৈতিক দল ছেড়ে অন্য দলে যোগদান করতে গেলে যে নীতি নৈতিকতা অনুসরণ করতে হয় কোথাও তার ব্যতিক্রম করেননি তিনি। শুভেন্দু বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মী হিসাবে আমি আমার নৈতিকতা বিসর্জন দিইনি। গত ২৭ নভেম্বর আমি তিনটি দফতরের মন্ত্রিত্ব সহ যাবতীয় সরকারি পদে ইস্তফা দিয়েছি। আমি বিধানসভার সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। আমার পুরনো দল তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি। অন্য কোনও রাজনৈতিক দল আমাকে যদি সদস্যপদ দেয় আমি তা নিতে পারি। বহুদলীয় গণতন্ত্রে আমার রাইট আছে’।
এর পরই পুরনো দলের নেতাদের উদ্দেশে শুভেন্দু আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ‘গত তিন দিন ধরে আমাকে বিভিন্ন জায়গায় বিশ্বাসঘাতক, মিরজাফর বলছেন। বন্ধু তাদেরকে আমি প্রশ্ন করতে চাই, ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেস প্রতিষ্ঠা হওয়ার পরে ৯৮-এর লোকসভা ভোট, ৯৯-এর বিধানসভা ভোটে তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে কারা ছিল? সেদিন যদি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী, ভারতবর্ষের তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আদবাণী তৃণমূল কংগ্রেসকে আশ্রয় না দিতেন এই পার্টিটা ২০০১ সালের আগে উঠে চলে যেত। এটা তো অস্বীকার করতে পারবেন না’?
পুরনো ঘটনা স্মরণ করে শুভেন্দু বলেন, ‘অস্বীকার করতে পারবেন না যেদিন ছোট আঙারিয়া গণহত্যা হয়, কেন্দ্রের বিজেপি নেতা মন্ত্রী বিজয় গোয়েল, কিরীট সোমাইয়ার নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় সরকার টিম পাঠিয়ে অত্যাচারীদের রুখে দিয়েছিল’।
তিনি নিজেও যে কখনো ভয়ে পিছ পা হননি তা বোঝাতে শুভেন্দু বলেন, ‘২০০৪ সালে লক্ষ্মণ শেঠের বিরুদ্ধে কেউ লড়তে রাজি হয়নি। আমি সেদিন একদিকে বিজেপির ঝান্ডা একদিকে তৃণমূলের ঝান্ডা নিয়ে লড়াই করেছিলাম’।
এর পরই নন্দীগ্রাম কাণ্ডের পর বিজেপির ভূমিকা স্মরণ করান শুভেন্দু। বলেন, ‘২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রাম গণহত্যার পর অন্য কোনও রাজনৈতিক দলের নেতারা আসেননি। অবরুদ্ধ নন্দীগ্রামে লালকৃষ্ণ আদবাণী, সুষমা স্বরাজ, রাজনাথ সিং হেঁড়িয়া, খেজুরি দিয়ে নন্দীগ্রামে প্রবেশ করেছিলেন। ৬২ দিন ধরে লোকসভা-রাজ্যসভা অচল করে নন্দীগ্রাম গণহত্যা আলোচনার জায়গায় পৌঁছে দেয় তার নাম ভারতীয় জনতা পার্টি, NDA. সিঙুরের অনশন মঞ্চে ফলের রসটা কে খাইয়েছিল? তার নাম তো রাজনাথ সিং’।
এদিনের সভা থেকে রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারকে উৎখাতের ডাক দেন তিনি। একাধিকবার বলেন, পরিবর্তনের পরিবর্তন চাই। সঙ্গে বক্তব্য শেষে জয় শ্রীরাম ধ্বনী তোলেন তিনি। জানান, দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে প্রাণ বাজি রেখে লড়বেন তিনি।