পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতেই রাজ্যে সর্বত্র শুরু হয়েছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার প্রক্রিয়া। কিন্তু দ্বিতীয় দিনেই অশান্তির ছবি ধরা পড়ে লাভপুরে। এই মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেওয়া এবং মারধরের অভিযোগ তুলেছিল বিরোধী দল বিজেপি। এই ঘটনার ২৪ ঘণ্টা কাটতে না কাটতে ব্যতিক্রমী ছবি ধরা পড়ল লাভপুরে। গাড়িতে করে মাইক হাতে বিরোধীদের মনোনয়ন জমার ক্ষেত্রে অভয় দিচ্ছেন তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক। এমন দৃশ্য আগে কখনও দেখেনি বাংলা। বাম জমানাতেও বিরোধীরা মনোনয়ন জমা করতে পারত না বলে অভিযোগ তুলত। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের জমানায় বিরোধীদের এভাবে অগ্রাধিকার দেওয়া বিরল।
এদিকে মাইক হাতে বিরোধীদের অভয় দিতে দেখা গেল এলাকার বিধায়ক অভিজিৎ সিনহাকে। রবিবার নিজের বিধানসভায় এলাকায় দিনভর বিরোধীদের মনোনয়ন দিতে উৎসাহ দিলেন তিনি। তার এই বার্তা বিরোধীদের উজ্জীবিত করবে বলেই মনে করা হচ্ছে। আগামী ৮ জুলাই একদফাতেই পঞ্চায়েত নির্বাচন হবে গোটা রাজ্যে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের ঘোষণার পরের দিন থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে মনোনয়ন জমা নেওয়ার প্রক্রিয়া। তার সঙ্গে অশান্তি, মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বিরোধীদের অভিযোগ, পঞ্চায়েত নির্বাচনে মনোনয়ন জমার ক্ষেত্রে বাধা দিচ্ছে তৃণমূল কংগ্রেস। ব্যতিক্রম নয় বীরভূমও।
তারপর ঠিক কী দেখা গেল? এই পরিস্থিতিতে দেখা গেল, গাড়িতে চেপে মাইক হাতে নিয়ে স্বয়ং বিধায়ক অভিজিৎ সিনহা বলছেন, ‘সব বিরোধী দলই মনোনয়ন জমা দিতে পারবে। কোনওরকম ঝামেলা করা হবে না। কেউ বাধা দিলে পুলিশ–প্রশাসনকে জানান।’ মনোনয়নপত্র জমার দ্বিতীয় দিনে তৃণমূল কংগ্রেস কর্মী–সমর্থকদের হাতে প্রহৃত হন বিজেপির লাভপুর ব্লকের সম্পাদক মহাদেব মণ্ডল। জামনা পঞ্চায়েতের গোপীনাথপুরের বুথ সভাপতি গদাধর মোহান্ত, ইন্দাস পঞ্চায়েতের বকুল দাস–সহ ৫ জন বিজেপি কর্মী জখম হন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়াকে ঘিরে এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস সৃষ্টির অভিযোগ ওঠে। তার প্রেক্ষিতে তিনজনকে গ্রেফতার করে লাভপুর থানার পুলিশ।
আর কী বলছেন বিধায়ক? দিনক্ষণ ঘোষণার আগে থেকেই শান্তিপূর্ণ পঞ্চায়েত নির্বাচনের বার্তা দিচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে এমন আবহ বেমানান। তাই লাভপুরের বিধায়ক অভিজিৎ সিনহা বলেন, ‘লাভপুরের বিধায়ক হিসেবে সকল রাজনৈতিক দলের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনারা যে অঞ্চলে প্রার্থী দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চান, সকলে নির্ভয়ে মনোনয়ন জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করুন। কেউ কোনও অশান্তি করবে না। প্রয়োজনে শাসকদল সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবে। আমরা চাই শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। বিধায়ক হিসাবে আমার একটা দায়িত্ব আছে। যাতে এলাকায় শান্তিশৃঙ্খলা বজায় থাকে। তৃণমূল কংগ্রেসের একজন কর্মী হিসেবে, আমার দলের যে নির্দেশ, সেই নির্দেশ পালন করা আমার কর্তব্য। তাই আমি এলাকায় এমন প্রচার করছি।’