শিশিরের চরণস্পর্শ করতেই লেখা হয়ে গিয়েছিল বিধিলিপি। অবশেষে কাঁথি পুরসভার চেয়ারম্যান পদ থেকে খাতায় কলমে সুবল মান্নাকে সরিয়ে দিল তৃণমূল। সোমবার ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরির ডাকা তলবি সভায় ১৬ জন কাউন্সিলরই সুবলবাবুকে অপসারণের পক্ষে মত দেন। এব্যাপারে সুবল মান্নার প্রতিক্রিয়া এখনও পাওয়া যায়নি।
গত ২৩ ডিসেম্বর কাঁথির শাহবাজপুট এলাকায় এক বেসরকারি স্কুলের অনুষ্ঠানে একই মঞ্চে হাজির ছিলেন স্থানীয় সাংসদ শিশিরবাবু ও পুরপ্রধান সুবল মান্না। সেখানে তিনি শিশিরবাবুকে রাজনৈতিক পিতা ও গুরুদেব বলে উল্লেখ করেন। এর পরই সুবল মান্নাকে শো কজ করে তৃণমূল। যার কোনও জবাব দেননি সুবলবাবু। গত ২৭ ডিসেম্বর তাঁকে পুরপ্রধান পদ ছাড়তে বলে তৃণমূল। কিন্তু দলের নির্দেশ মেনে ইস্তফা দেননি তিনি। এর পর গত ২ ডিসেম্বর দুর্নীতি ও দুর্ব্যবহারের অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন কাউন্সিলররা। ১৫ দিনের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রমাণ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও কোনও সভা ডাকেননি সুবলবাবু। বদলে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন তিনি। সোমবার সেই মামলায় সুবলবাবুর আবেদন খারিজ করে দেয় আদালত। এর পর তলবি সভা ডাকেন ভাইস চেয়ারম্যান সুপ্রকাশ গিরি। সেখানে ১৬ জন কাউন্সিলরের প্রত্যেকে সুবলবাবুকে অপসারণের পক্ষে মত দেন। সভায় হাজির ছিলেন না সুবলবাবু নিজে। সুপ্রকাশ গিরি বলেন, ‘নিয়ম মেনে সুবল মান্নাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ করেছেন কাউন্সিলররা।’
গত ২৩ ডিসেম্বর শিশির অধিকারীর সামনে অরাজনৈতিক মঞ্চে সুবলবাবু বলেছিলেন, ‘জন্ম দিয়েছেন পিতা-মাতা ঠিকই। কিন্তু যিনি পথ দেখিয়েছেন, যাঁর জন্য আজ আমি এখানে, সেই রাজনৈতিক গুরু শিশির অধিকারীকে প্রণাম জানাই।’ তারপরই রাতে পৌঁছে যায় শো-কজের চিঠি। এই বিষয়ে সুবল মান্নার বক্তব্য, ‘শিশিরবাবুকে প্রণাম করে অন্যায় করে থাকলে তার বিচার ভগবান করবে। আমি শোকজের চিঠি পাইনি। আমি প্রশাসনিক পদে আছি। সুতরাং সাংগঠনিক জেলা সভাপতি আমাকে শোকজ করতে পারেন না। আমি নিষ্ঠা, সততা নিয়েই কাজ করি।’
পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের কাঁথি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি পীযূষ পণ্ডার কথায়, ‘গুরুজনকে প্রণাম করা শিষ্টাচার। সেটা নিয়ে কিছু বলার নেই। যে পরিবার তৃণমূলের থেকে সব সুবিধা নিয়ে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, তাঁদের সঙ্গে একই মঞ্চে আমাদের কোনও নেতা বসলে এবং প্রশংসা করলে দলীয় কর্মীদের ভাবাবেগে আঘাত লাগে।’ সব শুনে কাঁথির সাংসদ শুধু বলেন, ‘কোন দলে এমন হয় জানি না। যা ঘটছে তার জবাব মানুষ দেবে।’