একশো দিনের কাজ নিয়ে রাজ্য–কেন্দ্র সংঘাত চলছেই। আজ, সোমবার রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সঙ্গে বৈঠকের পর রাজভবনের সামনে থেকে ধরনা উঠে গেল। আন্দোলন আবার হবে সদুত্তর না পেলে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার এই সংক্রান্ত একটি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের তোপের মুখে পড়ল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে মামলা গড়িয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। আজ কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে সেই মামলার শুনানি কিছু গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। যাঁরা বৈধভাবে কাজ করেছেন, তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন? কেন্দ্রের উদ্দেশে প্রশ্ন প্রধান বিচারপতির।
এদিকে আদালত সূত্রে খবর, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আজ দাবি করা হয়েছে, ২০২১–২০২২ সালে রাজ্য সরকার খরচের কোনও নথি দেয়নি কেন্দ্রকে। তাই তার পর থেকে রাজ্য সরকারকে তহবিল দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে জানান কেন্দ্রের আইনজীবী বিল্বদল ভট্টাচার্য। তখনই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ প্রশ্ন তোলেন, রাজ্য যে কেন্দ্রের টাকা নয়ছয় করেছে, রাস্তা তৈরি করেনি, সেতু তৈরি করেনি, খালি টাকা নিয়ে দুর্নীতি করেছে, সেটার সপক্ষে প্রমাণ কই? আর প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আদালত কোনও অবৈধ কাজ সমর্থন করে না। কিন্তু কিছু লোক তো ১০০ দিনের প্রকল্পে বৈধভাবে কাজ করেছেন। রাস্তা তৈরি হয়েছে। তাঁরা কেন বঞ্চিত হবেন?’
অন্যদিকে একশো দিনের কাজের বকেয়া নিয়ে এবার সরাসরি কেন্দ্রকেই প্রশ্ন করেন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি। আদালতের স্পষ্ট বক্তব্য, ‘যাদের জব কার্ড ভুয়ো তারা টাকা পাবে না, সেটা ঠিক আছে। কিন্তু কারা আসল আর কারা নকল সেটা তো খুঁজে বের করতে হবে। এখানে অনেক পচা আপেল আছে। তাই ভাল আপেল খুঁজে বের করতে হবে।’ বিজেপি নেতা–মন্ত্রীরা আগে দাবি করেছেন একশো দিনের কাজে দুর্নীতি হয়েছে। পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেস প্রশ্ন তুলেছে, তাহলে প্রমাণ–সহ পুলিশের কাছে এফআইআর করেনি কেন বিজেপি? বরং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এবার বিপাকে পড়ল কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: ‘আগামী ৬ মাস যেন কলেজের ত্রিসীমানায় না দেখি’, প্রাক্তনীদের হুঁশিয়ারি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের
আর কী উঠে এল আদালতে? রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসেই কেন্দ্রের কাছে একটি কমপ্লায়েন্স রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। সেই বিষয়টিও আজ উঠে আসে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চে। এই কথা শুনে কেন্দ্রকে উদ্দেশ্য করে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য, ‘চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে আপনাদের কাছে একটি কমপ্লায়ান্স রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। সেটা খতিয়ে দেখুন। তারপর টাকা পাঠানোর ব্যবস্থা করুন। ১০ ভাগের ১ ভাগ লোকও যদি কাজ করে থাকেন, তাহলে তাঁরা কেন টাকা পাবেন না? সবকিছু তো অবৈধ হতে পারে না। আপনারা চাইছেন সিবিআই অনুসন্ধান করুক। তদন্ত করুন। কিন্তু নিরীহ মানুষের টাকা কেন আটকে থাকবে? এক হাজার লোক যদি জেনুইন হয় তাহলে তাদের টাকা বন্ধ থাকবে কেন?’ আগামীকাল, মঙ্গলবার এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে।