আগামী ২ জানুয়ারি হাফ পাল্লা খুলে দেওয়ার কথা বলেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ। আর দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখেছেন কাঁথির সভা থেকে—হালকা করে দরজাটা একটু খুলে দেব নাকি? এই প্রেক্ষাপটে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। তার আগে কি ফের দলত্যাগ হবে? এই প্রশ্নেই চোরাস্রোত বইছে বঙ্গ–বিজেপির অন্দরে। সূত্রের খবর, এই নিয়ে জোর চর্চায় মেতেছেন রাজ্য বিজেপির শীর্ষ নেতাদের একটি বড় অংশ। কোনও নেতার সঙ্গে কি ভিন দলের কারও কথা হয়েছে? এই প্রশ্নের উত্তর পেতে মরিয়া বঙ্গ–বিজেপি। যদিও এই বিষয়টি নিয়ে প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন বিজেপি নেতারা। হাল এমন হয়েছে যে, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে এই নিয়ে মাঠে নামতে হয়েছে।
বিষয়টি ঠিক কী ঘটেছে? এই পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার আরএসএসের কেশব ভবনে বৈঠক ছিল। সেই বৈঠকে ছিলেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের কেন্দ্রীয় পদাধিকারী। এই রাজ্যে কোথায় কী সমস্যা হচ্ছে, সংগঠনগুলির চিত্র নিয়ে সেখানে আলোচনা হয়। মূলত এটি ছিল সমন্বয় বৈঠক। এই বৈঠকে ডাক পান বিজেপির সর্বভারতীয় সহ–সভাপতি দিলীপ ঘোষ, বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার এবং সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। কিন্তু এই বৈঠকে ডাকা হয়নি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে। দল ভেঙে কয়েকজন বিধায়ক বেরিয়ে যেতে পারেন বলে এখানে আভাস দেওয়া হয়েছে। তাতেই চমকে উঠেছেন সুকান্ত–দিলীপরা বলে সূত্রের খবর।
আর কী জানা যাচ্ছে? মাঝে দিলীপ–শুভেন্দুর তরজা শুরু হয়েছিল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক্কালে সেটা নীচুতলায় প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামলাতে বিএল সন্তোষ এদিন সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় সরকারের একটি অতিথিশালায় নিয়ে গিয়ে তাঁদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সূত্রের খবর, তিনি আলাদা করে দিলীপ–শুভেন্দুর সঙ্গে কথা বলেছেন। সেই রিপোর্ট তিনি অমিত শাহ–জেপি নড্ডাকে পাঠাতে পারেন। সেখানে এই দলবদল করার বিষয়টি তুলে ধরা হবে। শুভেন্দু অধিকারীর জন্মদিন উপলক্ষ্যে যে নৈশভোজের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে বিএল সন্তোষ, দিলীপ ঘোষ, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার–সহ অনেক শীর্ষনেতাই উপস্থিত ছিলেন।
দলবদল নিয়ে ঠিক কী জানা যাচ্ছে? নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘রাজ্যে আমরা সরকারে নেই। তাই আমাদের বিধায়ক সংখ্যা ৭৭ থেকে কমে ৭০–এ এলেও যা হবে, ৭–এ এসে ঠেকলেও তাই হবে। তবে বিধায়ক হোন, কিংবা সাংসদ— দলত্যাগ করলে ধরেই নিতে হবে যে, তিনি বা তাঁরা কোনও মতাদর্শের কারণে বিজেপিতে যোগ দেননি।’ এই দলবদলের আভাসই পেয়েছে বাংলার বিজেপি নেতৃত্ব। সংগঠনের শীর্ষ নেতারা যদি আকচা–আকচিতে জড়িয়ে পড়েন তাহলে দলের নীচুতলার কর্মীদের মনোবলে ধাক্কা লাগে বলেই বার্তা দেন বিএল সন্তোষ–বনশলরা। আগামী সোমবার নয়াদিল্লিতে বঙ্গ–বিজেপির সাংসদদের বৈঠক আছে। যেখানে রাজ্যের আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনকে নিয়ে প্রাথমিক রণকৌশল স্থির করবেন পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা। উঠে আসবে দলবদলের প্রসঙ্গও।