একটি ধর্ষণের মামলায় বাংলায় পুলিশ এবং রাজ্য সরকারকে তীব্র ভর্ৎসনা করল কলকাতা হাইকোর্ট। এই মামলায় বিচারপতি মন্তব্য করেন, ‘এটা রাজ্যের জন্য লজ্জা।’ এরপরে এই ঘটনার তদন্তে পুলিশের উপর আস্থা না রাখতে পেরে সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি জয় সেনগুপ্ত। বৃহস্পতিবার এই নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। আজ সমস্ত নথি পুলিশকে সিআইডির হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
আরও পড়ুন: রাজস্থানে কিশোরীকে 'গণধর্ষণ করে পোড়ানো হল কয়লার চুল্লিতে', টুকরো করা হয় দেহ?
বৃহস্পতিবার উলুবেরিয়া ধর্ষণকাণ্ডের শুনানি ছিল বিচারপতি জয় সেনগুপ্তের এজলাসে। গত বছরের ডিসেম্বরে এই ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছিল। অভিযোগ, একটি সরকারি জায়গায় চায়ের দোকান করেছিলেন স্থানীয় এক ব্যক্তি। তবে এলাকার কিছু লোক সেই দোকান সরানোর জন্য তাঁকে চাপ দেয়। কিন্তু তাতে অস্বীকার করায় ওই ব্যক্তির নাবালিকা মেয়েকে ধর্ষণ করা হয় বলে অভিযোগ। ঘটনায় তিনি পুলিশের কাছে অভিযোগ জানান। কিন্তু অভিযোগ নেয়নি পুলিশ। সমাজের চোখে লজ্জায় পড়ে ওই ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। পরে তাঁর স্ত্রী আদালতের দ্বারস্থ হন। অভিযোগ পুলিশের তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। অভিযুক্তরা এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। ৩ জনকে গ্রেফতার করা হলেও মূল অভিযুক্তরা পরিবারকে বারবার হুমকি দিচ্ছে।
সেই মামলায় বিচারপতি উল্লেখ করেন, ‘এটা রাজ্যের লজ্জা। একজন নির্যাতিতার জন্য রাজ্যের পাশে থাকা উচিত। কিন্তু সেখানে রাজ্যের পুলিশ অন্যের হয়ে কাজ করছে। এরকম চলতে পারে না।’ উলুবেরিয়া ধর্ষণকাণ্ডের মূল অভিযুক্ত এখনও ধরা না পড়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। তিনি প্রশ্ন করেন, ‘কতবার তল্লাশি হয়েছে? পুলিশ কী কী পদক্ষেপ করেছে? আমি কেস ডায়েরি থেকে এসব দেখতে চায়।’ তখন বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘মামলাকারী কী খুবই প্রভাবশালী।’ এদিন উলুবেরিয়ার আইসি রামেশ্বর ওঝা ও আইওকে সশরীরে আদালতে হাজির হন। এরপরেই বিচারপতির তীব্র ভর্ৎসনার মুখে পড়তে হয় আইসি এবং আইওকে। ধর্ষণের মতো ঘটনার তদন্ত গুরুত্ব দিয়ে না করার জন্য তাদের উপর ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি। এদিন বিচারপতি বলেন, ‘কেস ডায়েরি দেখে মনে হচ্ছে পুলিশ কিছু নথি দেখে ভেবেছে এটা গণধর্ষণের ঘটনা নয়। এখানে মাস পিটিশনের সঙ্গে ১০ টাকার স্ট্যাম্প পেপারে তথ্য দেখে পুলিশ তাই মনে করেছে।’
আদালতের মতে, এই মামলার তদন্তে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে পুলিশ। শুধু পুলিশ নয়, এটা রাজ্যের ব্যর্থতা। তাই ঘটনার তদন্তের ভার সিআইডি হাতে তুলে দেন বিচারপতি। একইসঙ্গে পরিবারকে যেহেতু হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাই তাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি। আজ শুক্রবার এ সমস্ত মামলার নথি হাতে তুলে দেওয়ার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।