আবার বঞ্চনার শিকার বাংলা। একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা, গ্রাম সড়ক যোজনার টাকা, আবাস যোজনার টাকা, স্বাস্থ্য মিশনের টাকা আটকে রেখেছে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদীর সরকার। এবার বাংলার বিপুল পরিমাণ শিশু যারা জন্মগত হৃদযন্ত্রের সমস্যা আছে তাদের অস্ত্রোপচার এবং চিকিৎসার প্রাপ্য অর্থ বন্ধ করে দিল নয়াদিল্লি বলে অভিযোগ। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের এই সিদ্ধান্তের ফলে শিশুদের হার্টের চিকিৎসা নিয়ে সমস্যা পড়েছেন অভিভাবকরা। এই পরিস্থিতিতে সেই এগিয়ে এল নবান্ন। ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে শিশুদের হার্টের চিকিৎসার জন্য। শিশুসাথী প্রকল্পে টাকা দিচ্ছে না কেন্দ্র। তাই এই প্রকল্পকে স্বাস্থ্যসাথীর সঙ্গে জুড়ে দিয়ে অভিভাবকদের চিন্তামুক্ত করল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
এদিকে একশো দিনের কাজের বকেয়া টাকা রাজ্য সরকার মিটিয়ে দেবে বলে ধরনা মঞ্চ থেকে ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাতে চাপে পড়ে গিয়েছে এই রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল এবং কেন্দ্রীয় সরকার। কারণ এই টাকা সংবিধান অনুযায়ী দেওয়ার কথা কেন্দ্রের। সেখানে রাজ্য সরকার টাকা মিটিয়ে দিলে কেন্দ্রের অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠে যাবে। এই অবস্থায় আবার শিশুসাথী প্রকল্পের টাকা বন্ধ করে দিল মোদী সরকার। নবান্ন সূত্রে খবর, অর্থ ও স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষজ্ঞ কমিটি শিশুসাথী প্রকল্প স্বাস্থ্যসাথীর সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। তবে হকের টাকা চেয়ে কয়েকবার নয়াদিল্লিকে চিঠি দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। লাভ হয়নি।
অন্যদিকে কেন এমন করল কেন্দ্রীয় সরকার? এই প্রশ্ন উঠছে। এখানেও দেখা যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার বাংলার শিশুদের বঞ্চনা করছে শুধুমাত্র নামের স্বার্থে। কেন্দ্রীয় সরকার চায় এই প্রকল্পের নাম হোক—‘রাষ্ট্রীয় বাল সুরক্ষা কার্যক্রম’। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই প্রকল্পের নাম রেখেছে ‘শিশুসাথী’। এটা পছন্দ নয় কেন্দ্রের। তাই ৬০ শতাংশ টাকা বন্ধ রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ। সূত্রের খবর, এই নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের আমলারা যখন রাজ্যের অফিসারদের সঙ্গে বৈঠক করেন তখন তাঁরা জানিয়েছেন, সব বুঝতে পেরেও তাঁরা অসহায়। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ পালন করাটাই তাঁদের কাজ। জন্মগত যে সব শিশুরা তাদের বয়স ১–১৮ হলে হার্ট অপারেশন করে ভালভ মেরামত করতে হয়। এই কারণে দেশজুড়ে ২০১৩ সালে কেন্দ্রীয় সরকার চালু করে রাষ্ট্রীয় বাল সুরক্ষা কার্যক্রম। যা এই রাজ্যে শিশুসাথী হিসাবে পরিচিত।
আরও পড়ুন: বকেয়া ঘোষণায় চাপে পড়েছে বঙ্গ–বিজেপি, ধরনায় দেখা নেই অভিষেকের গুঞ্জন শুরু
এছাড়া গোটা বিষয়টি নিয়ে এখন জলঘোলা হতে শুরু করেছে। স্বাস্থ্য ভবনের এক অফিসার এই বিষয়ে বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রকের সঙ্গে আলোচনা করেই ঠিক হয় ৬০ শতাংশ টাকা তাঁরা দেবেন। বাকি ৪০ শতাংশ টাকা রাজ্যগুলি দেবে। কিন্তু সে কথা কেন্দ্রীয় সরকার রাখেনি। ফলে এখন শিশুসাথী প্রকল্পকে জুড়ে দেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে স্বাস্থ্যসাথীর সঙ্গে। সুতরাং শিশুরা বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা পেতে পারবে। গত ১০ বছরে প্রায় ২৮ হাজার শিশুর চিকিৎসা হয়েছে বাংলায়। যা দেশের মধ্যে রেকর্ড। এখন শিশুদের হার্টের চিকিৎসার দায়িত্বও রাজ্য সরকার নেবে।