বছর ঘুরলেই পঞ্চায়েত নির্বাচন। একশো দিনের কাজের টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিচ্ছে না বলে বারবার অভিযোগ তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই পরিস্থিতিতে নতুন আশার আলো দেখতে পাচ্ছে রাজ্য সরকার। কারণ ১০০ দিনের কাজ–সহ গ্রামোন্নয়নের একাধিক প্রকল্প খাতে কেন্দ্রীয় বরাদ্দ নিয়ে জট কাটার ইঙ্গিত মিলছে দুই সরকারের তৎপরতায়। কেন্দ্রীয় প্রকল্প রূপায়ণে দুর্নীতিকে যে তারা কোনওভাবেই প্রশ্রয় দিচ্ছে না সেটা প্রমাণে তৎপর রাজ্য। গ্রামোন্নয়নের কাজে যেকোনও অনিয়মের বিরুদ্ধে নেওয়া হচ্ছে কড়া পদক্ষেপ। নবান্ন সূত্রে খবর, রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে একটি ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে। তারপরই জট কাটতে শুরু করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কী কথা হয়েছে রাজ্যের মন্ত্রীর? সম্প্রতি কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী গিরিরাজ সিং এবং রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী প্রদীপ মজুমদারের মধ্যে টেলিফোনে কথা হয়। দু’জনের সাক্ষাৎ হতে পারে আগামী সপ্তাহেই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে গত আড়াই মাস ধরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের চেষ্টা করছিলেন প্রদীপবাবু। কিন্তু সেটা কোনভাবেই হয়ে উঠছিল না। অবশেষে তিনি নিজেই রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রীকে ফোন করে আগামী সপ্তাহে সাক্ষাতের কথা বলেছেন। তবে দিন–সময় তাঁর দফতর থেকে পরে জানিয়ে দেওয়া হবে। ওই বৈঠকে ১০০ দিনের কাজ–সহ গ্রামোন্নয়নে বরাদ্দ নিয়েই আলোচনা হবে বলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জানিয়েছেন প্রদীপবাবুও।
আর কী জানা যাচ্ছে? গত জুলাই–অগস্ট মাসে রাজ্যের ১৫টি জেলায় গ্রামোন্নয়ন প্রকল্পগুলির কাজ পরিদর্শনে এসেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। তখন তাঁরা নানা অনিয়মের কথা উল্লেখ করে রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকে। সেই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই রাজ্যকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলে মন্ত্রক। ১০০ দিনের কাজ নিয়ে অভিযোগ জমা দেয় কেন্দ্রীয় দল। আবাস ও সড়ক যোজনা নিয়েও কিছু অভিযোগ উল্লেখ করা হয় রিপোর্টে। আর ৬ মাস ধরে টাকা বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তারপর ঠিক কী ঘটল? এই ঘটনার পর কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্য জেনে সক্রিয় হয় রাজ্য সরকার। অনিয়ম ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ করা হয়। দুই ২৪ পরগনা, দুই দিনাজপুর, দুই মেদিনীপুর, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, কালিম্পং এবং বীরভূমে গিয়েছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। এই জেলাগুলিতে ১০০ দিনের কাজে অনিয়মের অভিযোগে শোকজ করা হয় ১০৬ জনকে। আবাস যোজনার ক্ষেত্রেও অনেককে শোকজ করা হয় বলে সূত্রের খবর।