তেরো বছর পরে অবশেষে মহার্ঘ ভাতা (ডিএ বা ডিয়ারনেস অ্যালোওয়েন্স) পেতে চলেছেন বড়বাজারের একটি স্কুলের শিক্ষিকা। কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে যে আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে তাঁর বকেয়া মহার্ঘ ভাতা মিটিয়ে দিতে হবে। সেইসঙ্গে হাইকোর্টের ভর্ৎসনার মুখে পড়েছেন কলকাতার জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)। বিচারপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়ের পর্যবেক্ষণ, নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন কলকাতার জেলা স্কুল পরিদর্শক (ডিআই)।
আরও পড়ুন: শিক্ষকদের বেতন মিলছে না! স্কুল চালাতে না পারলে আদানিকে বেচে দিন, বিস্ফোরক বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায়
রেখা আগরওয়াল নামে যে শিক্ষিকা ডিএ মামলায় জয় পেয়েছেন, তিনি ২০১০ সালে বড়বাজারের একটি স্কুলে যোগ দিয়েছিলেন। সেই স্কুলে কর্মরত শিক্ষক-শিক্ষিকারা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের থেকে ডিএ পান। নিয়ম অনুযায়ী, চাকরিতে যোগদানের পরে মহার্ঘ ভাতা প্রদানের আর্জি জানানো হয়। সেইমতো রেখাকে যাতে ডিএ দেওয়া হয়, সেই আর্জি জানানো হয়েছিল ২০১৪ সালে। কিন্তু তাঁর মহার্ঘ ভাতা আটকে গিয়েছিল। রাজ্যের শিক্ষা দফতরের যুক্তি ছিল, বয়সসীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর চাকরিতে যোগদান করেছেন রেখা। তাই তাঁকে মহার্ঘ ভাতা প্রদান করা যাবে না।
রাজ্য সরকারের সেই বঞ্চনার বিরুদ্ধে হাইকোর্টে মামলা করেন রেখা। প্রাথমিকভাবে রেখার ডিএয়ের বিষয়টি কলকাতার জেলা স্কুল পরিদর্শককে বিবেচনা করে দেখতে বলেছিল হাইকোর্ট। যদিও রেখার আইনজীবী দাবি করেন, হাইকোর্টের নির্দেশের পরও কলকাতার জেলা স্কুল পরিদর্শক কোনও পদক্ষেপ করেননি। সেই পরিস্থিতিতে ফের হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রেখা। দ্বিতীয়বারও কলকাতার জেলা স্কুল পরিদর্শককে রেখার বিষয়টি বিবেচনা করে দেখার নির্দেশ দিয়েছিল হাইকোর্ট। কলকাতার জেলা স্কুল পরিদর্শক সেই নির্দেশও পালন করেননি বলে দাবি করেন রেখার আইনজীবী।
সেই পরিস্থিতিতে তৃতীয়বার হাইকোর্টের দ্বারস্থ হন রেখা। ২০২১ সালে সেই মামলা দায়ের করেন তিনি। সেই মামলায় বিচারপতি চট্টোপাধ্যায় নির্দেশ দেন যে রেখার বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে। কতদিনের মধ্যে সেই নির্দেশ কার্যকর করতে হবে, তাও নির্ধারণ করে দিয়েছেন বিচারপতি চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানিয়েছেন, চার সপ্তাহের মধ্যে রেখার বকেয়া ডিএ মিটিয়ে দিতে হবে। সেইসঙ্গে কলকাতার জেলা স্কুল পরিদর্শকের ভূমিকায় উষ্মাপ্রকাশ করেন বিচারপতি চট্টোপাধ্যায়।
উল্লেখ্য, আপাতত পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা ষষ্ঠ বেতন কমিশনের আওতায় ছয় শতাংশ ডিএ পান। সেখানে সপ্তম বেতন কমিশনের আওতায় কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের প্রাপ্ত ডিএয়ের হার ৪২ শতাংশ। যা শীঘ্রই বেড়ে ৪৫ শতাংশ হতে পারে বলে একাধিক রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে।